The news is by your side.

গণতান্ত্রিক উত্তরণ ও বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা

0 91

মো: জাকির হোসেন মন্ডল

১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট নর-ঘাতকরা ইতিহাসের নৃশংসতম হত্যাকাণ্ডের মাধ্যমে সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যা করে। এ সময় বিদেশে থাকায় আল্লাহ’র অশেষ রহমতে বেঁচে যান বঙ্গবন্ধুর দুই কন্যা শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা।

বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের পর স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশে মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে ভূলুণ্ঠিত করে বাঙালি জাতির অস্তিত্বকে বিপন্ন করতে নানামুখী ষড়যন্ত্র শুরু করে ঘাতকগোষ্ঠী। বাঙালি জাতির জীবনে জগদ্দল পাথরের মতো চেপে বসে ঘোর অমানিশার অন্ধকার। ঠিক এমনি ক্রান্তিলগ্নে ১৯৮১ সালের ১৪, ১৫, ও ১৬ ফেব্রুয়ারিতে অনুষ্ঠিত বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের জাতীয় কাউন্সিলে বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার অনুপস্থিতিতে তাকে সংগঠনের সভাপতি নির্বাচিত করা হয়।

দেশমাতৃকার মুক্তির সংগ্রামে নেতৃত্ব দেয়ার পবিত্র দায়িত্ব অর্পণ করা হয় জাতির জনকের সুযোগ্য কন্যার হাতে। বঙ্গবন্ধুকন্যার নেতৃত্বকে ভয় পায় ঘাতকগোষ্ঠী। খুনি সামরিক জান্তা জিয়াউর রহমান বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনাকে স্বদেশে প্রত্যাবর্তন করতে না দেয়ার জন্য সব ধরনের প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে। সামরিক শাসকের রক্তচক্ষু ও নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে ১৯৮১ সালের ১৭ মে প্রিয় স্বদেশভূমিতে প্রত্যাবর্তন করেন জননেত্রী শেখ হাসিনা। দীর্ঘ ৬ বছর নির্বাসন শেষে বঙ্গবন্ধুর বাংলাদেশে ফিরে আসেন শেখ হাসিনা।

দেশে ফিরে বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ও স্বপ্ন বাস্তবায়নের দৃঢ় অঙ্গীকার, বঙ্গবন্ধুহত্যা ও জাতীয় চার নেতা হত্যার বিচার, স্বৈরতন্ত্রের চির অবসান ঘটিয়ে জনগণের হারানো গণতান্ত্রিক অধিকার পুনঃপ্রতিষ্ঠা, সার্বভৌম সংসদীয় পদ্ধতির শাসন ও সরকার প্রতিষ্ঠার শপথ নিয়ে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভাপতি হিসেবে দায়িত্বভার গ্রহণ করেন বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা।

১৯৮১ সালের ১৭ মে ঝড়-বাদল আর জনতার আনন্দাশ্রুতে অবগাহন করে শেরে বাংলা নগরে লাখ লাখ জনতার সংবর্ধনার জবাবে বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা বলেছিলেন, ‘সব হারিয়ে আমি আপনাদের মাঝে এসেছি, বঙ্গবন্ধুর নির্দেশিত পথে তার আদর্শ বাস্তবায়নের মধ্য দিয়ে জাতির জনকের হত্যার প্রতিশোধ গ্রহণে আমি জীবন উৎসর্গ করতে চাই। আমার আর হারাবার কিছুই নেই। পিতা-মাতা, ভাই রাসেল সকলকে হারিয়ে আমি আপনাদের কাছে এসেছি, আমি আপনাদের মাঝেই তাদেরকে ফিরে পেতে চাই। আপনাদের নিয়েই আমি বঙ্গবন্ধুর নির্দেশিত পথে তা বাস্তবায়ন করে বাংলার দুঃখী মানুষের মুখে হাসি ফোটাতে চাই, বাঙালি জাতির আর্থ-সামাজিক তথা সার্বিক মুক্তি ছিনিয়ে আনতে চাই। তিনি আরও বলেছিলেন, জীবনে ঝুঁকি নিতেই হয়, মৃত্যুকে ভয় করলে জীবন মহত্ব থেকে বঞ্চিত হয়।

ঐতিহাসিক স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের মধ্য দিয়ে শেখ হাসিনার নিরবচ্ছিন্ন দীর্ঘ সংগ্রাম শুরু হয়। দীর্ঘ ১৬ বছর ধরে সামরিক জান্তা ও স্বৈরশাসনের বিরুদ্ধে চলে তার একটানা অকুতোভয় সংগ্রাম এর মাধ্যমে গণতান্ত্রিক উত্তরণ হয়।

স্মার্ট বাংলাদেশ

স্মার্ট বাংলাদেশ, বলতে স্মার্ট নাগরিক সমাজ, অর্থনীতি ও স্মার্ট সরকার গড়ে তোলা হবে। শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কৃষি ও আর্থিক খাতের কার্যক্রম স্মার্ট পদ্ধতিতে রূপান্তর হবে। এ জন্য সরকারি ব্যবস্থাপনার আধুনিকায়ন এবং এর উন্নয়নে একটি দক্ষ ও স্বচ্ছ ব্যবস্থাপনা কাঠামো গড়ে তোলার লক্ষ্যে সমন্বিত কার্যক্রম গ্রহণ করা হবে। এ ছাড়া বিভিন্ন কার্যক্রম ডিজিটাইজেশন করা হবে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আমাদের প্রত্যেকটা সিটিজেন, তারা প্রযুক্তি ব্যবহারে দক্ষ হবে, স্মার্ট সিটিজেন উইথ স্মার্ট ইকোনমি অর্থাৎ ইকোনমির সমস্ত কার্যক্রম আমরা এই প্রযুক্তি ব্যবহার করে করব। স্মার্ট গভর্নমেন্ট ইতোমধ্যে আমরা অনেকটা করে ফেলেছি। বাকিটাও করে ফেলব। আর আমাদের সমস্ত সমাজটাই হবে স্মার্ট সোসাইটি।

২০০৮ সালের ১২ ডিসেম্বর ‘ভিশন-২০২১’-এর মূলভিত্তি হিসেবে ডিজিটাল বাংলাদেশের ঘোষণা দেওয়া হয়। ব্যাপক ও বহুমুখী উন্নয়নে একের পর এক পরিকল্পনা প্রণয়ন এবং তা বাস্তবায়ন শুরু করা হয় একই সঙ্গে একাধিক মেগা প্রকল্প গ্রহণের মাধ্যমে। নির্বাচনী অঙ্গীকার অনুযায়ী সরকার ইতোমধ্যে সারাদেশে ব্রডব্যান্ড কানেক্টিভিটি দিয়েছে এবং স্যাটেলাইট বঙ্গবন্ধু-১ উৎক্ষেপণ করেছে মহাকাশে। বর্তমানে ১৬ কোটি মানুষের হাতে ১৮ কোটি মোবাইল সিম ব্যবহৃত হচ্ছে। কল সেন্টারভিত্তিক সেবাপ্রাপ্তিতে ৯৯৯, যে কোনো তথ্য জানার জন্য ৩৩৩, কৃষক বন্ধু সেবা প্রাপ্তিতে ৩৩৩১সহ টেলিমিডিসিন সেবা এবং ব্লেন্ডেড লার্নিং জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে এর মধ্যে।

বাংলাদেশের এই রূপান্তরের নেপথ্য কারিগর মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনা ও তাঁর পুত্র তথ্য ও যোগাযোগ উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়। ডিজিটাল বাংলাদেশের ১৪ বছর পূর্তি উপলক্ষে সরকার ২০৪১ সালের মধ্যে দেশকে ডিজিটাল থেকে ‘স্মার্ট বাংলাদেশে’ রূপান্তরের ঘোষণা দিয়েছে- যা বাস্তবায়িত হবে এই সময়ের মধ্যে। ২১ থেকে ৪১-এর মধ্যে কিভাবে বাংলাদেশের উন্নয়ন-অগ্রগতি হবে এর একটি অবকাঠামো, তদনুযায়ী পরিকল্পনা প্রণয়ন করা হয়েছে সর্বস্তরের জনসাধারণের জন্য্ যেন তারা নিজেদের অনুরূপভাবে গড়ে তুলতে পারে।

২০৪১ সাল নাগাদ একটি ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ গড়ে তোলার সরকারের নতুন রূপকল্প দ্রুত বাস্তবায়নে সারা বছর ধরে বিভিন্ন সরকারি সেবা সহজিকরণ করতে এটুআই বেশকিছু ডিজিটাল প্রোগ্রাম উদ্ভাবন ও বাস্তবায়ন করেছে। বাংলাদেশকে একটি উন্নত রাষ্ট্রে উন্নীত করার লক্ষ্যে ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ এর সফল বাস্তবায়ন সরকারকে ‘ভিশন-২০৪১’ এর সাথে সঙ্গতি রেখে একটি উদ্ভাবন ও জ্ঞান-ভিত্তিক ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ গড়ার নতুন লক্ষ্য গ্রহণ করতে উৎসাহ যুগিয়েছে।

সরকার স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে তোলার জন্য ৪টি ভিত্তি সফলভাবে বাস্তবায়নে কাজ করে যাচ্ছে। এগুলো হলো- স্মার্ট সিটিজেন, স্মার্ট ইকোনমি, স্মার্ট গভর্নমেন্ট ও স্মার্ট সোসাইটি। এর পাশাপাশি হাতে নেওয়া হয়েছে ২১০০ ব-দ্বীপ কেমন হবে- সেই পরিকল্পনা। স্মার্ট বাংলাদেশে সব কাজ, সম্পাদন করা হবে প্রযুক্তির মাধ্যমে। যেখানে প্রত্যেক নাগরিক প্রযুক্তি ব্যবহারে হবে দক্ষ।

এর মাধ্যমে পরিচালিত হবে সার্বিক অর্থনৈতিক কার্যক্রম- যার চূড়ান্ত লক্ষ্য ক্যাশলেস সোসাইটি। সরকার ইতোমধ্যে দেশে দক্ষ মানবসম্পদ উন্নয়ন, আইসিটি অবকাঠামো ও কানেক্টিভিটি, ই-গভর্নমেন্ট এবং ইন্ডাস্ট্রি প্রমোশনের ক্ষেত্রে নানা উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। স্যাটেলাইট বঙ্গবন্ধু-২ উৎক্ষেপণের প্রস্তুতি নিয়েছে। ২০১৯ সালে সরকার ই-গভর্নমেন্ট মাস্টার প্ল্যান প্রণয়ন এবং ২০২৫ সালের মধ্যে শতভাগ সরকারি সেবা অনলাইনে প্রদানের লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছে। দেশে স্টার্টআপ ইকোসিস্টেম গড়ে তোলা হয়েছে। এর জন্য জাতীয় বাজেটে বরাদ্দ করা হয়েছে আলাদা তহবিল।

এর পাশাপাশি আইডিয়া প্রকল্প, বঙ্গবন্ধু ইনোভেশন গ্রান্ট (বিগ), শতবর্ষের শতআশা এবং স্টার্টআপ সার্কেল সৃষ্টি করে অনুদান দেওয়া হচ্ছে। বিনিয়োগের জন্য স্টার্টআপ বাংলাদেশ লিমিটেড নামে সরকার ভেঞ্চার ক্যাপিটাল কোম্পানি পরিচালনার নীতিমালা প্রণয়ন করেছে। সাইবার নিরাপত্তা সূচকে বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়া ও সার্ক দেশগুলোর মধ্যে প্রথম অবস্থানে রয়েছে।

সরকার ইতোমধ্যে দেশের গ্রামগুলোকে আধুনিক সুযোগ-সুবিধা সংবলিত শহর হিসেবে গড়ে তোলার নীতি নিয়ে অগ্রসর হচ্ছে। যেখানে গ্রামের প্রকৃতি ও পরিবেশ সর্বোপরি চাষাবাদ,ফলমূল,সবজির বাগান,খামারের পাশাপাশি পাওয়া যাবে গ্যাস,বিদ্যুৎ,পানিসহ তথ্যপ্রযুক্তিভিত্তিক যাবতীয় সুযোগ-সুবিধা। তবে স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে তোলা এবং বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে প্রত্যেক নাগরিকেরও সবিশেষ দায়িত্ব ও করণীয় রয়েছে।

চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের বিভিন্ন প্রযুক্তি নিয়ে গবেষণা করার জন্য বুয়েট-এ এরই মধ্যে রিসার্চ অ্যান্ড ইনোভেশন সেন্টার ফর সাইন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং স্থাপন করা হয়েছে। দেশের প্রত্যন্ত গ্রামের উন্নয়নের জন্য এগ্রিকালচার, পাওয়ার এবং অন্যান্য সেক্টরের উপযোগী প্রযুক্তি উদ্ভাবনে কাজ করা হচ্ছে। দেশের প্রেক্ষাপটে স্মার্ট এগ্রিকালচার তৈরিতে বুয়েট এবং বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় একসাথে কাজ করছে। স্মার্ট ভিলেজের অন্যতম উপাদান স্মার্ট এগ্রিকালচার। স্মার্ট এগ্রিকালচারের জন্য আইওটি ডিভাইস ব্যবহারের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

২০৪১ সালের স্মার্ট বাংলাদেশ হবে সাশ্রয়ী, টেকসই, বুদ্ধিভিত্তিক, জ্ঞানভিত্তিক এবং উদ্ভাবনী বাংলাদেশ। স্মার্ট সিটি ও স্মার্ট ভিলেজ বাস্তবায়নের জন্য স্মার্ট স্বাস্থ্যসেবা, স্মার্ট ট্রান্সপোর্টেশন, স্মার্ট ইউটিলিটিজ, নগর প্রশাসন, জননিরাপত্তা, কৃষি, ইন্টারনেট কানেক্টিভিটি ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করা হবে।

পরিশেষে বলছি, বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিতে বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিতে যে অগ্রগতি হয়েছে সেটা বাস্তব প্রয়োগে ডিজিটাল বাংলাদেশ হয়েছে, এখন স্মার্ট বাংলাদেশ গড়তে দেশরত্ন শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ এগিয়ে চলছে।

প্রধানমন্ত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ আজ উন্নয়নের মহাসড়কে অপ্রতিরোধ্য অগ্রযাত্রায় এগিয়ে যাচ্ছে। বাংলাদেশ শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কৃষি, তথ্যপ্রযুক্তি, নারীর ক্ষমতায়নসহ বিভিন্ন খাতে বিশ্বব্যাপী উন্নয়নের ‘রোল মডেল’ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।

লেখক: মো: জাকির হোসেন মন্ডল

সাধারণ সম্পাদক, জয়পুরহাট জেলা আওয়ামী লীগ

Leave A Reply

Your email address will not be published.