The news is by your side.

সময়ের অপেক্ষায় ১৪–দলীয় জোটের শরিকেরা

0 60

 

আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন ১৪-দলীয় জোট আসন ভাগাভাগিতে বঞ্চিত হওয়ায় অপেক্ষাকৃত ছোট শরিকেরা বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি ও জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলকে (জাসদ) দুষছে। মাত্র দুটিতে জয়ী হওয়ায় ওয়ার্কার্স পার্টি ও জাসদ দুষছে আওয়ামী লীগকে।

দোষারোপ করলেও আওয়ামী লীগের সঙ্গে সম্পর্কচ্ছেদ বা জোট ভাঙার কথা ভাবতে পারছে না শরিকেরা। রাজনৈতিক বাস্তবতায় আওয়ামী লীগকে খুব বেশি চটানোরও সুযোগ নেই। ফলে সময়ের অপেক্ষায় থাকার কৌশল নিয়েছে শরিকেরা।

আওয়ামী লীগ বলছে, ২০০৮, ২০১৪ ও ২০১৮ সালের টানা তিনটি নির্বাচনে নিজেদের মাঠের শক্তির চেয়ে ১৪ দলের শরিকেরা বেশি সুবিধা পেয়েছে। এতে দলগুলো আওয়ামী লীগের ওপর অতিমাত্রায় নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে। এই নির্ভরশীলতা কমানো দরকার।

নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক দেখাতে এটা আওয়ামী লীগেরই চাওয়া ছিল। কিন্তু আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে প্রার্থীদের বলা হয়েছে যে নির্বাচনের খরচ দেওয়া হয়েছে। আদতে এমন খরচ তিনি পাননি। ফলে প্রার্থীদের মধ্যে দলের শীর্ষ নেতৃত্বের প্রতি কিছুটা অবিশ্বাস তৈরি হয়েছে।

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ১৪ দলের শরিকদের মধ্যে ওয়ার্কার্স পার্টি দুটি, জাসদ তিনটি এবং জাতীয় পার্টি (জেপি) একটি আসনে ছাড় পেয়েছিল। নৌকা প্রতীকে ভোট করে ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন এবং জাসদের রেজাউল করিম তানসেন জয়ী হয়েছেন।

ছাড় পাওয়া বাকি আসনগুলোতে আওয়ামী লীগের স্বতন্ত্র প্রার্থীদের কাছে শরিক দলের প্রার্থীরা হেরে গেছেন। পরাজিতদের মধ্যে জাসদের সভাপতি হাসানুল হক ইনু, জেপির সভাপতি আনোয়ার হোসেন মঞ্জু, ওয়ার্কার্স পার্টির ফজলে হোসেন বাদশা ও মুস্তফা লুৎফুল্লাহ, জাসদের মোশাররফ হোসেন রয়েছেন।

ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক ফজলে হোসেন বাদশা বলেন, তিনি এবং জাসদের হাসানুল হক ইনুর হারের পর রাশেদ খান মেননের জয়টাও কিছুটা ম্লান হয়ে গেছে। নির্বাচনে কী হয়েছে, তা নিয়ে তাঁর দলে শিগগিরই বৈঠক হবে। এরপর জোটের অন্য শরিকদের সঙ্গেও আলোচনা হতে পারে।

আনোয়ার হোসেন মঞ্জুর হেরে যাওয়া নিয়ে আওয়ামী লীগের প্রতি কিছুটা ক্ষোভ আছে জেপিতে। ভোটের ফলের কারণে সবচেয়ে বেশি ক্ষোভ ওয়ার্কার্স পার্টি ও জাসদের। এমনকি দল দুটির ভেতরে অভ্যন্তরীণ অসন্তোষও আছে। এই অসন্তোষ আরও বাড়তে পারে সংরক্ষিত নারী আসনের নির্বাচনের পর। ওয়ার্কার্স পার্টি ও জাসদ দুই দলই নারী আসনের সংসদ সদস্য পেতে চেষ্টা চালাবে।

প্রতি ছয়জন নির্বাচিত সংসদ সদস্যের বিপরীতে একজন সংরক্ষিত নারী আসন পাওয়ার নিয়ম। দুই দলের মাত্র দুজন সংসদ সদস্য হয়েছেন এবার। ফলে সংরক্ষিত নারী আসন দিতে হলে আওয়ামী লীগ বা স্বতন্ত্র কোটা থেকে তাদের দিতে হবে।

এবার জাসদের সাধারণ সম্পাদক শিরীন আখতারকে সংরক্ষিত নারী আসনের সংসদ সদস্য করার বিষয়ে একধরনের আশ্বাস দিয়েছিল আওয়ামী লীগ। ফলে আফরোজা হক বাদ পড়ে যেতে পারেন। অন্যদিকে রাশেদ খান মেননের একটি আসনের বিপরীতে তাঁর স্ত্রী লুৎফুন নেসাকে সংসদ সদস্য না–ও করা হতে পারে। আর যদি করা হয়, এতে দলটির ভেতর কী প্রতিক্রিয়া হয়, সেটাও একটা প্রশ্ন।

জাসদের সভাপতি হাসানুল হক ইনু বলেন, তাঁরা দলীয়ভাবে নির্বাচন নিয়ে আলোচনা করবেন। এরপর ১৪–দলীয় জোটেও সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করবেন।

১৪ দলের অন্য শরিকদের মধ্যে সাম্যবাদী দল, গণতন্ত্রী পার্টি, তরীকত ফেডারেশন, গণ আজাদি লীগ, বাসদ, ন্যাপ, কমিউনিস্ট কেন্দ্র জোটে সক্রিয়। কিন্তু তরীকত ফেডারেশন ছাড়া কেউ কোনো নির্বাচনে আসন ছাড় পায়নি। সাম্যবাদী দলের সাধারণ সম্পাদক দিলীপ বড়ুয়া ২০০৯ সালে গঠিত সরকারে টেকনোক্র্যাট কোটায় মন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন। এর বাইরে অন্য শরিকেরা আসন ছাড় পায়নি।

তরীকত ফেডারেশনের চেয়ারম্যান নজিবুল বশর মাইজভান্ডারি তাঁর আসনে ছাড় পাননি। টানা তিনবারের সংসদ সদস্য নজিবুল নিজ দলের প্রতীকে ভোটে অংশ নিলেও শেষ দিকে সরে দাঁড়ান। দিলীপ বড়ুয়া জীবনে শেষবারের মতো আসন ছাড়ের আরজি জানিয়েছিলেন। কিন্তু কোনো কাজ হয়নি।

শরিকদের সূত্র জানায়, আওয়ামী লীগের সঙ্গে দর–কষাকষিতে সুবিধাজনক অবস্থায় থাকতে অন্য শরিকেরা ভোটের আগে নিজেদের মধ্যে বৈঠক করার উদ্যোগ নিয়েছিল। কিন্তু শেষ মুহূর্তে তা বাতিল হয়ে যায়। মূলত ওয়ার্কার্স পার্টি ও জাসদ কিছুটা পিছটান দেওয়ার কারণেই বৈঠকটি হয়নি।

সাম্যবাদী দলের সাধারণ সম্পাদক দিলীপ বড়ুয়া বলেন, আওয়ামী লীগ এবার জোটকে ঠিকভাবে মূল্যায়ন করেনি। তবে ১৪–দলীয় জোটের দরকার আছে। আওয়ামী লীগকেও তা অনুধাবন করতে হবে।

 

Leave A Reply

Your email address will not be published.