মালদ্বীপের পার্লামেন্ট নির্বাচনে ভূমিধস জয় পেয়েছে দেশটির প্রেসিডেন্ট ‘চীনপন্থী’ হিসেবে পরিচিত মোহাম্মদ মুইজ্জুর দল পিপলস ন্যাশনাল কংগ্রেস (পিএনসি)।
গণমাধ্যমের প্রতিবেদেন থেকে জানা গেছে, রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত প্রাপ্ত ফলাফল অনুযায়ী, মুইজ্জুর পিএনসি পার্লামেন্টে দুই-তৃতীয়াংশ আসন পাচ্ছে।
স্থানীয় গণমাধ্যমের খবর অনুযায়ী, মুইজ্জুর পিএনসি ৯৩ সদস্যবিশিষ্ট পার্লামেন্টে অন্তত ৬৯টির মতো আসন পেতে যাচ্ছে। আর প্রধান বিরোধী দল মালদ্বীপস ডেমোক্র্যাটিক পার্টি পাচ্ছে ১১টি আসন। বাকি আসনগুলো পাওয়ার সম্ভবনা শরিক দলগুলোর।
ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ানের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত ৯৩ আসনের মধ্যে ৮৬ আসনের ফলাফল ঘোষণা করা হয়েছে। এর মধ্যে মুইজ্জুর পিএনসি পেয়েছে ৬৬ আসন।
এই নির্বাচনকে মালদ্বীপে ভারত ও চীনের প্রভাব বিস্তারের লড়াই হিসেবে দেখেছিলেন অনেকে। মালদ্বীপের পার্লামেন্ট নির্বাচনের বিশেষ গুরুত্ব ছিল আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকদের কাছে। ভারতীয় পক্ষ মনে করেছিল, ভারতের সাথে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের অবনতির ফলে নির্বাচনে মুইজ্জুর দল খারাপ করবে। কিন্তু বাস্তবে ভিন্ন চিত্র দেখা গেছে। অনেকেই বলছেন, মুইজ্জুর চীন-প্রীতির দিকেই ঝুঁকে তার দলকে ভোট দিয়েছেন মালদ্বীপের নাগরিকেরা।
বিশ্বের অনেক দেশের নজর ছিল এই নির্বাচনের দিকে। গত সেপ্টেম্বরেই ‘ভারতপন্থী’ হিসেবে বিবেচিত ওই দেশের সাবেক প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম মোহম্মদ সোলিকে হারিয়ে জয়ী হয়েছিলেন মুইজ্জু। কিন্তু পার্লামেন্টে সংখ্যাগরিষ্ঠতা ধরে রাখে সোলির দল এমডিপি। ফলে পার্লামেন্টে বহু সিদ্ধান্তই কার্যকর করতে পারেনি মুইজ্জুর সরকার। তাই এই ভোটে জিতে তারা মালদ্বীপের পার্লামেন্টেও নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা বজায় রাখতে চেয়েছিল।
কূটনৈতিক মহলের একাংশের মতে, এই নির্বাচন মূলত দু’টি কারণে আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠেছিল। মুইজ্জুর ‘ভারতবিরোধী অবস্থান’ এবং ‘চীন ঘেঁষা নীতি’ মালদ্বীপের মানুষের কাছে কতটা গ্রহণযোগ্য তা পরখ করার একটা পরিসর তৈরি করছিল এই নির্বাচন।
মুইজ্জু ক্ষমতায় আসার পর ভারতের সাথে মালদ্বীপের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের অবনতি হয়েছে। ইতোমধ্যে চীনের সাথেও ঘনিষ্ঠতা বাড়িয়েছেন মুইজ্জু। এমনকি, মালদ্বীপ থেকে ভারতীয় সেনাসদস্যদের সরানোর নির্দেশও দেন তিনি। শেষ পর্যন্ত ভারত সরকার মালদ্বীপ থেকে সেনাসদস্যদের সরিয়ে নেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু করে। এই আবহেই এসে পড়ে দেশটির পার্লামেন্ট নির্বাচন। মালদ্বীপের বিরোধী দলগুলো মুইজ্জু সরকারের ভারতবিরোধী অবস্থানকে তুলে ধরে নির্বাচনী প্রচারণায় অস্ত্র হিসেবেও ব্যবহার করে। কিন্তু তাতেও মইজ্জুর দলের পার্লামেন্টে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জনে ঠেকাতে পারেনি তারা।