জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের হলে এক ব্যক্তিকে আটকে রেখে তার স্ত্রীকে সংঘবদ্ধ ধর্ষণের ঘটনায় ছাত্রলীগ নেতা মোস্তাফিজুর রহমানসহ তিনজনকে আটক করেছে পুলিশ।
আটক অন্যরা হলেন- আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের ৪৫তম ব্যাচের শিক্ষার্থী হাসান, ৪৬তম ব্যাচের শিক্ষার্থী মোস্তফা মনোয়ার সিদ্দিকী সাগর, উদ্ভিদবিদ্যা বিভাগের ৪৭তম ব্যাচের শিক্ষার্থী সাব্বির হোসেন সাগর।
রোববার সকাল ৬টার দিকে সাধারণ শিক্ষার্থীরা এই তিনজনকে আটক করে পুলিশে সোপর্দ করেন। আর সকাল ৮টার দিকে সাভার মডেল থানায় আত্মসমর্পণ করেন মূল অভিযুক্ত ছাত্রলীগ নেতা মোস্তাফিজুর রহমান। তবে তার সহযোগী মামুন (বহিরাগত) এখনো পলাতক রয়েছেন।
শনিবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের মীর মশাররফ হোসেন হলসংলগ্ন জঙ্গলে গণধর্ষণের ঘটনা ঘটে।
সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, শনিবার দিনগত রাত ১২টার দিকে মূল অভিযুক্ত মোস্তাফিজুর রহমান মীর মশাররফ হোসেন হলের রান্নাঘরের তালা ভেঙে পালিয়ে যান। তাকে পালিয়ে যেতে সাহায্য করার অভিযোগে শিক্ষার্থী হাসান, মোস্তফা মনোয়ার সিদ্দিকী সাগর ও সাব্বির হোসেন সাগরকে পুলিশের হাতে তুলে দেওয়া হয়।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর আ.স.ম ফিরোজ-উল-হাসান বলেন, মূল অভিযুক্ত মোস্তাফিজুর রহমান থানায় আত্মসমর্পণ করেছে। বাকি তিনজনকে পুলিশে সোপর্দ করা হয়েছে। বহিরাগত মামুন পলাতক।
অভিযুক্ত মোস্তাফিজুর বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের ৪৫তম ব্যাচের শিক্ষার্থী মোস্তাফিজুর রহমান। তিনি বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক এবং শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি আক্তারুজ্জামান সোহেলের অনুসারী।
ওই দম্পতির বাড়িতে ভাড়া থাকেন অভিযুক্ত মামুন। শনিবার সন্ধ্যায় ভুক্তভোগীর স্বামীকে বিশ্ববিদ্যালয়ে ডেকে নিয়ে আসেন তিনি। পরে বিশ্ববিদ্যালয়ের আসলে তাকে নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের মীর মশাররফ হোসেন হলের ‘এ’ ব্লকের ৩১৭ নম্বর কক্ষে আটকে রাখেন অভিযুক্তরা। এরপর তার স্ত্রীকে দিয়ে নিজের রেখে আসা জিনিসপত্র আনতে বলেন মামুন। তার পরিপ্রেক্ষিতে মামুনের জিনিসপত্র নিয়ে ক্যাম্পাসে আসেন ভুক্তভোগী নারী। পরে জিনিসপত্র নিয়ে মামুন হলের ভেতরের ওই কক্ষে রেখে আসেন। এরপর তার স্বামী অন্যদিক থেকে আসবে বলে ওই নারীকে হল সংলগ্ন জঙ্গলে নিয়ে যান অভিযুক্তরা। পরে সেখানে তাকে ধর্ষণ করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন ওই নারী।
ভুক্তভোগী ওই নারী বলেন, মামুন ভাই আমাদের বাসায় ভাড়া থাকতো। তিনি আমার স্বামীর মাধ্যমে ফোন দিয়ে আমাকে তার রেখে যাওয়া জিনিসপত্র নিয়ে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে যেতে বলেন। আমি তার জিনিসপত্র নিয়ে ক্যাম্পাসে যাই। তখন তিনি আমাদের বাসায় থাকবেন না বলে জানান। এছাড়া তিনি মীর মশাররফ হোসেন হলের মোস্তাফিজ ভাইয়ের কাছে থাকবে বলেও জানান।
ওই নারীর অভিযোগ, এরপর মামুন আমার কাছ থেকে তার জিনিসপত্রগুলো নিয়ে হলে রেখে আসে। পরে আমার স্বামী অন্যদিকে থেকে আসবে বলে আমাকে হলের সামনে থেকে পাশের জঙ্গলের মধ্যে নিয়ে যায়। তার সঙ্গে মোস্তাফিজ ভাইও ছিলো। তখন তারা আমাকে জোরপূর্বক ধর্ষণ করে।
এ ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক হাবিবুর রহমান লিটন বলেন, সে একটি জঘন্যতম কাজ করেছে। এটি কোনোভাবেই কাম্য নয়। আমরা এ ঘটনার তদন্ত সাপেক্ষে সর্বোচ্চ শাস্তি চাই।
শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি আকতারুজ্জামান সোহেল বলেন, মোস্তাফিজের বিরুদ্ধে উত্থাপিত অভিযোগের ভিত্তিতে তাকে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগ থেকে বহিস্কার করা হয়েছে। এছাড়া স্থায়ী বহিষ্কারের জন্য কেন্দ্রে সুপারিশ করা হবে।