The news is by your side.

সুলভ বিদ্যুৎ মিলছে ভারতের এনভিভিএন থেকে

0 84

দেশে বিদ্যুতের সরবরাহ আসছে প্রধানত সার্বক্ষণিক উৎপাদনে (বেইজ লোড) নিয়োজিত বিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে। এ ধরনের বিদ্যুৎ কেন্দ্রের সংখ্যা ৪৮। এসব বিদ্যুৎ কেন্দ্রের মোট সক্ষমতা ১৪ হাজার ৪৯৫ মেগাওয়াট। বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোর মধ্যে ছয়টি আবার ভারতে অবস্থিত। এসব কেন্দ্রে উৎপাদিত বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হচ্ছে আমদানি চুক্তির ভিত্তিতে।

বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (বিপিডিবি) এপ্রিলে সার্বিক বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যয়ের তালিকা অনুযায়ী, সার্বক্ষণিক উৎপাদনে নিয়োজিত কেন্দ্রগুলোর মধ্যে বাংলাদেশের জাতীয় গ্রিডে সবচেয়ে সুলভে বিদ্যুৎ সরবরাহ করছে ভারতীয় প্রতিষ্ঠান এনটিপিসি বিদ্যুৎ ব্যাপার নিগম লিমিটেড (এনভিভিএন)। বাংলাদেশের জাতীয় গ্রিডে এনভিভিএন লিমিটেডের (ফার্স্ট ফেজ) বিদ্যুৎ সরবরাহ হচ্ছে প্রতি ইউনিট (কিলোওয়াট/ঘণ্টা) ২ টাকা ৫৭ পয়সা মূল্যে।

মূলত জ্বালানি ব্যয়কেই বহন করতে হচ্ছে বিপিডিবিকে। সংস্থাটিকে এনভিভিএনের বিদ্যুৎ কেন্দ্রের উৎপাদনসংশ্লিষ্ট ‘পরিবর্তনশীল পরিচালন ব্যয়’ (ভিওএমপি) সংক্রান্ত কোনো খরচ বহন করতে হচ্ছে না। বাংলাদেশ ও ভারত সরকারের মধ্যে স্বাক্ষরিত এক দ্বিপক্ষীয় চুক্তির (জিটুজি) ভিত্তিতে এ বিদ্যুৎ বাংলাদেশে সরবরাহ করা হচ্ছে।

বিদ্যুতের নীতি ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান পাওয়ার সেলের মহাপরিচালক প্রকৌশলী মোহাম্মদ হোসাইন বণিক বার্তাকে বলেন, ‘বিদ্যুৎ খাতে সহযোগিতা ও ভারতের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের নিদর্শনস্বরূপ জিটুজির আওতায় এ ২৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুতের প্রথম ক্রয় চুক্তি হয়েছিল। এটি ভারতের জাতীয় গ্রিড থেকে বাংলাদেশে রফতানি করা হচ্ছে। শুরু থেকেই এ চুক্তির আওতায় আমরা সাশ্রয়ী মূল্যে বিদ্যুৎ পাচ্ছি। ভারত থেকে কম মূল্যে বিদ্যুৎ ক্রয়ের ক্ষেত্রে এ চুক্তি বড় ভূমিকা রাখছে।’

ভারতের ছয় বিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে বর্তমানে দেশে বিদ্যুৎ আমদানি হচ্ছে ১ হাজার ৯১০ মেগাওয়াট। জিটুজির আওতায় দুটি বিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে আনা হচ্ছে ৪১০ মেগাওয়াট। বেসরকারি খাতের চারটি কোম্পানির কাছ থেকে আনা হচ্ছে ১ হাজার ৫০০ মেগাওয়াট।

এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি দামে আমদানি হচ্ছে ঝাড়খণ্ডের গড্ডায় আদানি পাওয়ার (ঝাড়খণ্ড) লিমিটেডের স্থাপিত কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে। এখান থেকে প্রতি ইউনিট বিদ্যুৎ আমদানিতে ব্যয় হচ্ছে ১২ টাকা ৪২ পয়সা। এর মধ্যে প্রতি ইউনিটে ১২ টাকা ৩১ পয়সা পরিশোধ করা হচ্ছে শুধু জ্বালানি ব্যয় হিসেবে। এপ্রিলের পরিচালন ব্যয় হিসেবে দিতে হয়েছে বাকি ১১ পয়সা।

তবে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুতে এর চেয়েও বেশি খরচ পড়ছে দেশে স্থাপিত পটুয়াখালীর পায়রা ও বাগেরহাটের রামপালের ১ হাজার ৩২০ মেগাওয়াট এবং বরিশালের ৩০৭ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ কেন্দ্রে। এর মধ্যে পায়রা বিদ্যুৎ কেন্দ্রের দুই ইউনিটে প্রতি কিলোওয়াট/ঘণ্টা বিদ্যুৎ উৎপাদনে খরচ পড়ছে ১২ টাকা ৮৯ পয়সা। রামপাল থেকে বিদ্যুৎ কিনতে খরচ হচ্ছে ১৩ টাকা ২০ পয়সা। দুটি বিদ্যুৎ কেন্দ্রেই এ মূল্য ধরা হয়েছে শুধু জ্বালানি ব্যয়কে হিসাবে ধরে।

কয়লাভিত্তিক বিদ্যুতে বিপিডিবির বিদ্যুৎ কেনায় সবচেয়ে বেশি খরচ হচ্ছে বেসরকারি মালিকানাধীন বরিশাল ৩০৭ মেগাওয়াট (বিইপিসিএল) বিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে। এতে প্রতি ইউনিটের মূল্য ধরা হয়েছে ১৩ টাকা ৪৮ পয়সা। এর মধ্যে জ্বালানি ব্যয় ১৩ টাকা ২১ পয়সা, এপ্রিলের পরিচালন ব্যয় ধরা হয়েছে ইউনিটপ্রতি ২৭ পয়সা করে।

বেইজ লোড বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোর মধ্যে সবচেয়ে কম দামে বিদ্যুৎ সরবরাহকারী শীর্ষ পাঁচ প্রতিষ্ঠানের মধ্যে চারটিই বাংলাদেশী। এগুলোর সবগুলোই গ্যাসভিত্তিক। এর মধ্যে তিনটি বিপিডিবির মালিকানাধীন। আরেকটি পরিচালিত হচ্ছে বেসরকারি উদ্যোগে (আইপিপি)। এগুলো হলো বিবিয়ানা-৩ ৪০০ মেগাওয়াট, বিবিয়ানা সাউথ ৪০০ মেগাওয়াট, সিলেট ২২৫ মেগাওয়াট ও সিরাজগঞ্জ ৪০০ মেগাওয়াট (ইউনিট-৪) বিদ্যুৎ কেন্দ্র।

বিপিডিবির বিদ্যুৎ উৎপাদন তালিকার ৪২টি বেইজ লোড পাওয়ার প্লান্টের বেশির ভাগই গ্যাসচালিত। এর মধ্যে বিপিডিবির নিজস্ব কেন্দ্র রয়েছে মোট ১৭টি। দেশে গ্যাসভিত্তিক বেইজ লোড বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোর মধ্যে বিবিয়ানা-৩ ৪০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ কেন্দ্রে উৎপাদন খরচ হচ্ছে সবচেয়ে কম। এখানে প্রতি ইউনিট বিদ্যুৎ উৎপাদনে বিপিডিবির ব্যয় হচ্ছে ২ টাকা ৬৮ পয়সা। এছাড়া বিবিয়ানা সাউথ ৪০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ কেন্দ্রে খরচ পড়ছে ২ টাকা ৬৯ পয়সা। ২ টাকা ৮৪ পয়সা খরচ হচ্ছে সিলেট ২২৫ মেগাওয়াট গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রে। বেসরকারি মালিকানাধীন সিরাজগঞ্জ ৪০০ মেগাওয়াট (ইউনিট-৪) গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রে খরচ পড়ছে প্রতি ইউনিটে ২ টাকা ৯৮ পয়সা।

তবে গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি খরচ পড়ছে বিপিডিবির মালিকানাধীন চট্টগ্রাম টিপিপি ইউনিট-২ থেকে। এখানে বিদ্যুৎ উৎপাদনে খরচ ধরা হয়েছে প্রতি ইউনিট ৫ টাকা ৬১ পয়সা। এছাড়া চট্টগ্রাম টিপিপি ইউনিট-১-এ বিদ্যুৎ উৎপাদন করতেও বিপিডিবির একই খরচ বহন করতে হচ্ছে।

বিপিডিবির বিদ্যুৎ উৎপাদন ও বিতরণসংশ্লিষ্ট বিভাগের ঊর্ধ্বতন দুজন কর্মকর্তা নাম অপ্রকাশিত রাখার শর্তে বণিক বার্তাকে বলেছেন, বিদ্যুৎ উৎপাদনের ক্ষেত্রে মূলত সাশ্রয়ী বিদ্যুৎ কেন্দ্রকেই প্রাধান্য দেয়া হয়। গ্যাসে উৎপাদন খরচ কম। এ কারণে গ্যাসচালিত বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোকেই বেশি সচল রাখার চেষ্টা করা হয়। তবে দুই-এক মাসের হিসাব বিবেচনায় নিয়ে খরচের বিষয়টি মূল্যায়ন করা কঠিন। সারা বছরের বিদ্যুৎ উৎপাদনের হিসাব বিশ্লেষণ করলেই বোঝা যাবে, কোন কোন বিদ্যুৎ কেন্দ্রের উৎপাদন সবচেয়ে বেশি সাশ্রয়ী।

বেইজ লোড বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোর মধ্যে জ্বালানি তেলভিত্তিক (ডিজেল) বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোর উৎপাদন ব্যয় সবচেয়ে বেশি। দেশে হাইস্পিড ডিজেলচালিত (এইচএসডি) বেইজ লোড বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোর মোট সক্ষমতা রয়েছে এক হাজার মেগাওয়াটের কিছু বেশি। খরচ বেশি হওয়ায় অতিপ্রয়োজন ছাড়া এসব বিদ্যুৎ কেন্দ্রে উৎপাদন অব্যাহত চালু নিয়ে বিপিডিবির মধ্যে এক ধরনের দ্বিধা রয়েছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। এইচএসডিভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোর ২২৫ মেগাওয়াট সক্ষমতার একটি বিপিডিবির মালিকানাধীন। বাকিগুলো আছে রাষ্ট্রায়ত্ত নর্থ-ওয়েস্ট পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি লিমিটেডের (এনডব্লিউপিজিসিএল) মালিকানায়। এসব বিদ্যুৎ কেন্দ্রের মধ্যে সবচেয়ে কম উৎপাদন খরচ পড়েছে খুলনা ২২৫ মেগাওয়াট সিসিপিপি বিদ্যুৎ কেন্দ্রের। কেন্দ্রটি থেকে বিদ্যুৎ ক্রয়ে প্রতি ইউনিট বিদ্যুতের দাম পড়েছে ২২ টাকা ৩৮ পয়সা। আর সর্বোচ্চ দাম পড়েছে সিরাজগঞ্জ ২২৫ মেগাওয়াট সিসিপিপি বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ইউনিট-২। কেন্দ্রটি থেকে প্রতি ইউনিট বিদ্যুৎ কেনায় খরচ পড়েছে ২৩ টাকা ৬৭ পয়সা।

বেইজ লোডের বাইরেও অতিরিক্ত চাহিদা বা অন্যান্য প্রয়োজনের সময়ে চালু করা হয় আরো কিছু বিদ্যুৎ কেন্দ্র। পিক লোড পাওয়ার প্লান্ট হিসেবে চিহ্নিত এমন বিদ্যুৎ কেন্দ্র আছে ১০৪টি। এগুলোর মোট সক্ষমতা ৯ হাজার ৬৬৯ মেগাওয়াট।

 

 

 

 

 

 

 

Leave A Reply

Your email address will not be published.