The news is by your side.

কিটকট গিলে খাচ্ছে সাগর লতা :  অরক্ষিত হয়ে পড়ছে কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত

0 231

 

 

কক্সবাজার অফিস

সৈকতে আসছে পড়া ঢেউয়ে প্রতিনিয়ত অরক্ষিত হয়ে পড়ছে  বিশ্বের দীর্ঘতম  কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত। তবে সৈকত  সুরক্ষায়  সহায়ক ভূমিকা পালন করছে সাগর লতা। কিন্তু তীর রক্ষার সাগর লতাকে গিলে খাচ্ছে কিটকট। সাগর তীর বিলীন হওয়ায় কিটকটগুলো বসানো হচ্ছে লতার উপরে। এতে সমূলে নির্মূল হচ্ছে সাগর লতাগুলো। গত তিন দিনে বিপুল পরিমাণ সাগর লতা ধ্বংস হয়ে গেছে।

সৈকতে মাটির ক্ষয়রোধ এবং শুকনো উড়ন্ত বালুরাশিকে আটকে বালুর পাহাড় বা বালিয়াড়ি তৈরির প্রধান কারিগর এই সাগর লতা। আর এ বালিয়াড়িই ঝড়—জলোচ্ছ্বাস ও সমুদ্রের উত্তাল তরঙ্গ থেকে পরম মমতায় আগলে রাখে সমুদ্রসৈকত এবং সমুদ্রতীরের জনগোষ্ঠীকে। সাগরলতা সৈকতে বালু স্থিতিশীলতার কাজ করে থাকে। কারণ, এটি বালুর গভীরে তিন ফুট পর্যন্ত শেকড় পাঠাতে পারে। এ লতা এত দ্রুত বর্ধনশীল যে দিনে এক ফুট পর্যন্ত বাড়তে পারে।

সাগরলতা ১০০ ফুটের বেশি লম্বা হতে পারে অনায়াসে। আশপাশের কোনো হস্তক্ষেপ না থাকলে চারদিকে বাড়তে থাকে এবং বালিয়াড়িতে জাল বিস্তার করে মাটিকে শক্ত করে আটকে রাখে। এর ওপর বায়ু প্রবাহের সঙ্গে আসা বালু প্রতিনিয়ত জমা করে মাটির উচ্চতা বৃদ্ধি করে তৈরি করে বালিয়াড়ি।  তবে সাগরলতা কিটকট (চেয়ার) থেকে রক্ষা পেল না। কয়েকদিন আগেও  দীর্ঘ ১২০ কিলোমিটার সমুদ্র সৈকতজুড়ে এক সময় সাগরলতা ফুলের অভয়ারন্য ছিল। কিন্তু অপরিকল্পিত কিটকট (চেয়ার) বসানোর কারনে এই সাগরলতা ফুল হারিয়ে যেতে বসেছে। কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতের সুগন্ধা পয়েন্ট শেষ পান্তে আগে সেখানে সাগরলতার অস্তিত্ব ছিল  সেখানে বর্তমানে অপরিকল্পিতভাবে সাগর লতার ওপর  কিটকট (চেয়ার) বাসানো হয়েছে। যে কারনে সগারলতা হুমকির মুখে।

সরজমিনে দেখা যায়, সুগন্ধা পয়েন্টের শেষ পান্তে সাগরলতার ওপর প্রায় ১০০টি কিটকট (চেয়ার) বসানো হয়েছে। চেয়ারে বাসা পর্যটকরা সাগর লতাগুলো পায়ে পিষে  নষ্ট করে ফেলছে। সাগর লতার ওপর বসানো এই কিটকট (চেয়ার) গুলো রানা,  সেলিম,  লুতফর রহমান, আব্বাসের বলে জানা গেছে।

কিটকট (চেয়ার) গুলো দেখভাল করা  কর্মচারী থেকে জানতে চাইলে তিনি জানান, সমুদ্র ভাঙ্গনের ফলে জায়গা না থাকায় চেয়ার গুলো সেখানে বসানো হয়েছে।

সচেতন মহল বলছেন, যেভাবে  অপরিকল্পিতভাবে এই চেয়ারগুলো বসানো হয়েছে সত্যিই এটা খুবই দুঃখের। একদিকে ভাঙ্গনের ফলে পুরো সৈকত পুকুরে পরিণত হয়েছে অন্য দিকে অপরিকল্পিতভাবে সাগর লতার উপর  কিটকট (চেয়ার) বসানো হয়েছে। শুধু সাগর লতা না আমাদেরও চলাফেরার ও প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হয়েছে।

এই বিষয়ে কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতের কিটকট (চেয়ার) ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি মাহবুব জানান, আমাদের লাবণী পয়েন্ট থেকে কলাতলী পয়েন্ট পর্যন্ত আমাদের ১৩শত কিটকট (চেয়ার) আছে। কয়েকদিন ধরে  সমুদ্র সৈকতের তীব্র ভাঙ্গন এর ফলে  জায়গা সংকট হয়। আমাদের সকল সদস্যদের বলা আছে সাগরলতার ওপর কিটকট না বসাতে। তবে কিছু সদস্য অজান্তে সাগরলতার ওপর কিটকট (চেয়ার) বসানো হয়েছে। বিষয়টি জানার পর কিটকট(চেয়ার) গুলো সরানো হয়েছে।

বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন বাপা কক্সবাজার জেলা শাখার সাংগঠনিক সম্পাদক এইচ এম নজরুল ইসলাম বলেন, একসময় সাগরলতা ছিল সমুদ্র সৈকতে পর্যটকদের জন্য বিশেষ আকর্ষণ। কিন্তু ধীরে ধীরে সমুদ্র সৈকতের বালিয়াড়ির বিভিন্ন ভাবে দখল হয়ে যাওয়া ও মানুষের অবাধ বিচরণের ফলে সাগরলতা এখন আগের মতো দেখা যায়। করোনাকালীন লকডাউনের সময়ে সমুদ্র সৈকতে সাগর লতা তার ঐতিহ্য নিয়ে ফিরে এসেছিল কিন্তু সেটিও পুনরায় দখলবাজদের নিয়ন্ত্রণে চলে গেছে। কেউ একবার বুঝতে চায় না সাগর লতা শুধু সৈকতের সৌন্দর্য্য রক্ষা করেনা, এই লতার কারণে সাগর লতা যেখানে থাকে সেখানে ছোট ছোট টিলাও তৈরি হয়। যার ফলে সাগরের ভাঙন অনেকটা রোধ করা সম্ভব হয়।

কক্সবাজার ট্যুরিস্ট পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রেজাউল করিম ভিশন নিউজ ২৪ কে  বলেন, সাগরলতা সংরক্ষণে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা রয়েছে, এবং বায়োডাইভারসিটি সংরক্ষণে, বালিয়াড়ির পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় এই সাগরলতার ভূমিকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ট্যুরিস্ট পুলিশ বিচের আইনশৃঙ্খলা রক্ষার পাশাপাশি বিচের সার্বিক শৃঙ্খলা রক্ষায় কাজ করছে। আমরা পর্যটকদের এ ব্যাপারে প্রতিনিয়ত সচেতন করে চলেছি।

কিন্তু বিচে প্রয়োজনের চেয়ে অতিরিক্ত কিটকটের অনুমোদন দেয়ায় কিছু অসাধু কিটকট ব্যবসায়ী মাঝেমধ্যে সাগরলতার উপরে তাদের কিটকট বসায়। অতিরিক্ত কিটকটের অনুমোদন বাতিল করা প্রয়োজন।আমরা খুব শীঘ্রই ট্যুরিস্টদের সচেতন করার জন্য সাইনবোর্ড বসাব।  অসচেতন হয়ে যারা সাগরলতা বিনষ্ট করবে তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের অতিরিক্ত ম্যাজিস্ট্রেট আবু সুফিয়ান ভিশন নিউজ ২৪ কে  বলেন, সাগলতার ওপর কিটকট (চেয়ার) বসানোর কোন অনুমতি নেই। কিছু কিটকট ব্যবসায়ী চেয়ার গুলো সেখানে রেখেছিল। বিষয়টি আমাদের নজরে আসলে তাৎক্ষণিক আমাদের বীচ কর্মীরা চেয়ারগুলো অপসারণ করে নেয়। সাগরলতা আলাদাভাবে সংরক্ষণের ব্যবস্থা করা হবে ।

Leave A Reply

Your email address will not be published.