The news is by your side.

বিকিনি পরে সমুদ্র সৈকতে বেড়াতে পারবেন ইরানি নারীরা,নীতিপুলিশ প্রত্যাহার

0 118

ইরানে হিজাব বিরোধী আন্দোলন অবশেষে জয়ের মুখ দেখল। প্রশ্ন উঠছে, ইরানের মহিলারা তাঁদের পুরনো স্বাধীনতা ফিরে পাবেন কি? এই জয় কি ইরানে নারী স্বাধীনতার নতুন যুগের সূচনা করবে ?

ইরানের নীতিপুলিশের চোখ রাঙানিতেই সে দেশের মহিলাদের অবাধ স্বাধীনতার গায়ে চেপেছিল ‘শালীনতা বোধের’ আবরণ। যে খোলা চুল কৃষ্ণ সাগরের সৈকতে নিশ্চিন্তে উড়ত তাতে বসেছিল হিজাবের নিষেধ। ৪ ডিসেম্বর ইরান জানিয়েছে, সেই নীতিপুলিশের আর অস্তিত্ব নেই ইরানে।

ইরানের কেন্দ্রীয় সরকারের অ্যাটর্নি জেনারেল মহম্মদ জাফর মন্তেজারি জানিয়েছেন, ইরান সরকার ওই নীতিপুলিশ বাহিনী ‘গস্ত-এ-এরশাদ’কে সম্পূর্ণ ভাবে প্রত্যাহার করে নিয়েছে।

কেন নীতিপুলিশ প্রত্যাহার করা হয়েছে, তা অবশ্য স্পষ্ট করেননি জাফর। তবে তিনি না বললেও এ একরকম স্পষ্ট যে, ইরানে গত দেড় মাস ধরে চলা হিজাব বিরোধী আন্দোলনের চাপে পড়েই এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। জাফর নিজে যদিও বলেছেন, নীতিপুলিশ কোনওদিনই ইরানের বিচার ব্যবস্থার অঙ্গ ছিল না।

বস্তুত ইরানে নীতিপুলিশিই ছিল না। তার বাহিনী তো দূর অস্ত্‌। তখনও ইরানের মেয়েরা হিজাব পরতেন, তবে স্বেচ্ছায়। বাধ্যবাধকতা ছিল না কোনও।

হিজাব পরার পাশাপাশি জিন্স, মিনি স্কার্ট এবং শর্ট-হাতা টপ পরেও ইরানের রাস্তায় স্বচ্ছন্দে ঘুরে বেড়াতে পারতেন সেই দেশের মহিলারা। সমুদ্রসৈকতে বিকিনি পরেও ঘুরতে দেখা যেত সে দেশের মহিলাদের।

সেই সময়ের তোলা ছবি বলছে ইরানের বিভিন্ন শহরে হিজাব বা বোরখা ছাড়াই পথে নামতেন ইরানি মহিলারা। তাঁদের পরনে থাকতে আধুনিক পোশাক-আশাকও।

শৌখিন ছিলেন ইরানের মহিলারাও। বাহারি জুতো পরতেও দেখা যেত তাঁদের। চোখে থাকত হাল ফ্যাশনের রোদচশমা।

পিকনিক ছিল ইরানি সংস্কৃতির একটি জনপ্রিয়তম অঙ্গ। পরিবার এবং বন্ধুদের নিয়ে প্রতি শুক্রবার একত্রিত হওয়ার প্রবণতা তৈরি হয়েছিল সেই সময়। সবাই মিলে এক হয়ে পিকনিকে যেত ইরানের বহু পরিবার। সেই সব জায়গায় খোলমেলা পোশাকেই দেখা যেত মহিলাদের।

এখন স্যালঁ-পার্লারের চল স্বাভাবিক মনে হতে পারে। কিন্তু তিন দশক আগে ইরানে মহিলাদের স্যালঁ ছিল। চুলের ছাঁটে ফ্যাশন বা স্টাইলিংয়ের ধারাও ছিল। পুরনো ছবি বলছে, সে সময় হিজাব যেমন দেখা যেত, তেমনই রাস্তা ঘাটে দেখা যেত খোলা চুলের বাহারও।

ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতোল্লা রুহুল্লাহ খোমেইনি ক্ষমতায় আসার পরই নির্দেশ দেন, জাতি-ধর্ম নির্বিশেষে দেশের সব মহিলাকে হিজাব পরে থাকতে হবে।

সেটা ১৯৭৯ সাল। ওই ঘোষণার পরই নারী দিবসে এই নির্দেশের প্রতিবাদে পথে নেমেছিলেন ইরানের মহিলারা, পোস্টারে লেখা ছিল, ‘‘আপনারা কি জানেন, ইরানে এখন খোলা চুল হাওয়ায় ওড়ানোও অপরাধ’’।

তবে সেই আন্দোলন শেষ পর্যন্ত কোনও দাগ কাটতে পারেনি। সরকারের মত বদলাতেও পারেনি। উল্টে দেশের সর্বোচ্চ নেতার থেকে আদেশে আসে, ইরানের মহিলারা বাড়ির ভিতরে যা খুশি পরতে পারেন, কিন্তু বাইরে বেরোলে তাঁদের ‘সংযত’ ভাবেই বেরোতে হবে। ফলে মহিলাদের সাঁতার পোশাক পরার উপরে নিষেধাজ্ঞা জারি হয়।

পোশাকবিধি বিরোধী আন্দোলন প্রশাসনের চোখ রাঙানিতে থিতিয়ে যায় এক সময়ে। ২০০৬ সালে মহিলারা পোশাকবিধি পালন করছেন কি না, তা দেখার জন্য তৈরি করা হয়েছিল নীতিপুলিশ বাহিনী গস্ত-এ-এরশাদ।

ইরানের প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আহমাদিনেজাদ প্রতিষ্ঠা করেছিলেন এই নীতিপুলিশ বাহিনী। প্রকাশ্যেই জানানো হয়েছিল, এই বাহিনীর লক্ষ্য হবে ইরানে হিজাব সংস্কৃতি যথাযথ ভাবে মেনে চলার বিষয়টি নিশ্চিত করা। মেয়েদের ‘শালীনতা’র পাঠ দেওয়া।

হিজাব পরার নিয়ম বদলানো যায় কি না, তা ভেবে দেখছে তারা। পর পর এই দু’টি ঘটনাকে ইরানের মহিলাদের আন্দোলনে বড় জয় হিসাবে দেখা হলেও তাঁদের পোশাকে তিন দশক আগের সেই স্বাধীনতা ফিরতে এখনও বিস্তর দেরি বলেই মনে করছেন পর্যবেক্ষকদের একাংশ।

 

Leave A Reply

Your email address will not be published.