The news is by your side.

বান্দরবানের পোয়ামুহুরি—মায়ানমার সীমান্ত দিয়ে আসছে থাইল্যান্ডের ব্রাহামা জাতের গরু

দালালদের সহযোগিতায় নদী ও পাহাড়ি পথে এসব গরু নিয়ে আসা হচ্ছে

0 211

কক্সবাজার অফিস

বান্দরবানের আলীকদমের পোয়ামুহুরি—মায়ানমার সীমান্ত দিয়ে আসছে থাইল্যান্ডের গরু। চোরাকারবারীরা মায়ানমার ও বাংলাদেশ সীমান্ত রক্ষীদের চোখ ফাঁকি দিয়ে বাংলাদেশে আনছে  ব্রাহামা জাতের থাইল্যান্ডের উন্নত জাতের গরু।

আলীকদমের দুর্গম পথ অতিক্রম করে প্রচুর বিদেশি গরু আনছে দেশে একটি চক্র। স্থানীয় গরু বাজার ইজারাদারদের রিসিটে এসব গরু বিক্রি দেখানো হয়।

৭ আগষ্ট  একদিনে ৩—৪ ট্রাক ভর্তি করে গরু পাচারের দৃশ্য চোখে পড়ে। বিক্রির রিসিটে গরুগুলো স্থানীয় উল্লেখ করা হলেও বাস্তবে সেগুলো উন্নত ব্রাহামা জাতের। যা বাংলাদেশের খামারি বা কৃষক লালন পালন করেন না।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, শুল্ক ফাঁকি দিয়ে প্রচুর পরিমাণ গরু  আমদানি করছে একটি চক্র। থাইল্যান্ডের ব্রাহামা জাতের এ গরু মায়ানমার হয়ে আসছে বাংলাদেশে। অবৈধ আমদানিকারকরা নিরাপদ রোড় হিসেবে সীমান্তবর্তী আলীকদম—চকরিয়া সড়ককে বেছে নিয়েছে।

আন্তর্জাতিক গরু পাচারকারী এই সিন্ডিকেটে যুক্ত আছে চকরিয়া, টেকনাফ ও কক্সবাজারের একটি চক্র। শুল্ক আদায় কর্তৃপক্ষ ও সীমান্ত রক্ষীদের চাপে পড়ে চোরা সিন্ডিকেটটি এখন পার্বত্য আলীকদম পোয়ামুহুরি সড়ক বেছে নিয়েছে।

প্রতি দিন ট্রাক ভর্তি গরু নিয়ে ওই সড়ক দিয়ে লামা—আলীকদম সড়ক হয়ে চকরিয়ার ফাঁসিয়াখালী রাস্তা বেয়ে মহাসড়ক হয়ে দেশের বিভিন্ন শহরে পৌঁছে যায় থাইল্যান্ডের এসব গরু।

এ সব গরু উজ্জ্বল সুন্দর রঙ,  আকৃতিতে অনেক বড়। ব্রাহমা জাতের গরু ১ বছরের কম সময়ে অনেক বড় আকার ধারণ করে।  প্রতিটি গরু বিক্রি হয়, দুই থেকে সাড়ে তিন লাখ টাকায়। ফলে চোরাকারবারিরা মরিয়া হয়ে এই জাতের গরু আমদানি করছে। এতে প্রচুর পরিমান সরকারের শুল্ক ফাঁকিসহ দেশিয় মুদ্রা পাচার হচ্ছে বিদেশে। অপরদিকে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে দেশের খামারিরা।

পশু সম্পদ বিভাগ সূত্রে জানা যায়, ২০১৬ সালে সরকারের কৃত্রিম প্রজনন নীতিমালার অধীনে বেসরকারিভাবে এবং ব্যক্তি উদ্যোগে ব্রাহমা গরু আমদানি নিষিদ্ধ করা হয়েছে।

স্থানীয় সূত্র মতে, মিয়ানমারের সীমান্ত রক্ষী বাহিনীর অসাধু সদস্য, বাংলাদেশ ও মায়ানমার দালালদের সহযোগিতায় নদী ও পাহাড়ি পথে গরুগুলো নিয়ে আসা হচ্ছে।

অনুসন্ধানে জানা যায়  মায়ানমার সীমান্তের দূর্গম পাহাড় আর আলীকদম পোয়ামুহুরি সড়ক এর আশপাশ এলাকাটি গরু পাচারকারী দেশি—বিদেশি চোরাকারবারিদের নিরাপদ অভয়ারণ্য। সেখানকার জনমানবহীন গহীন অরণ্যে দু’দেশের উপজাতিদের ব্যবহার করে এই চক্রটি তাদের নির্ঝঞ্ঝাট কর্মতৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন জানান, প্রতিদিন পোয়ামুহুরি সড়কের ১০ কি: পয়েন্টে রীতিমত বিদেশি গরুর হাট বসে।  এসব গরু বাংলাদেশের আলীকদম—চকরিয়া সড়ক দিয়ে সারাদেশের বাজারে চলে যায়।

এইসব গরু ক্রয় করতে বিগত এক বছরে কয়েক শ’ কোটি টাকা অবৈধভাবে হুন্ডির মাধ্যমে বিদেশে পাচার করেছে একটি চক্র। লামা—আলীকদম ও চকরিয়ার কয়েকজন  খামারি ডেইরি খাতে তাদের বিনিয়োগ ও বাস্তবতা দেখে সংশয় প্রকাশ করেছেন।

তারা জানান, অবৈধ পশু আমদানিকারীদের কারণে ব্যবসায় ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছেন তারা। গরু চোরাকারবারিরা বিদেশী গরু এনে দেশীয় মার্কেট সয়লাব করে দিয়ে খামারীদের স্বপ্ন ভেঙ্গে দেয়। এর ফলে নিরুৎসাহিত হয়ে ক্রমেই দেশের ডেইরি শিল্প ধ্বংস হয়ে পথে বসার অবস্থা এখন খামারিদের।

কি করে এইসব গরু বাংলাদেশে আসছে, তা খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা গ্রহণের অনুরোধ জানান খামারিরা। মায়ানমার সীমান্তের আলীকদম সড়ক হয়ে অবৈধভাবে দেশে আসা গরুর পরিসংখ্যান জানা যায়নি কোনো মহল থেকে। তবে স্থানীয়রা অনুমান ভিত্তিক জানান, ইতিমধ্যে কয়েক হাজার গরু এই পথ দিয়ে এসেছে। স্থানীয় এক নেতা জানান, এলাকার ৪০% মানুষ এখন গরু ব্যবসায় জড়িয়ে গেছে। যারা এর আগে গাছ বাঁশের ব্যবসা করতেন তাদের বেশিরভাগই এখন বিদেশি গরু কিনছেন ও বিক্রি করছেন।

স্থানীয় সচেতন খামারিদের দাবি, কারা এই চোরাকারবারের সাথে জড়িত তাদের শনাক্ত করে দ্রুত আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হোক হোক।

Leave A Reply

Your email address will not be published.