The news is by your side.

নতুন আয়কর আইন: ইচ্ছাকৃত কর ফাঁকিতে সর্বোচ্চ ৫ বছর দণ্ড

0 100

ইচ্ছাকৃতভাবে আয়কর ফাঁকি দিলে বা এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলে সর্বোচ্চ ৫ বছর করাদণ্ডে দণ্ডিত করার বিধান রাখা হয়েছে নতুন আয়কর আইনের বিলে।

এছাড়া বছরে ৫ লাখ টাকার বেশি আয় থাকলে জীবনযাত্রার ব্যয়বিবরণী রিটার্নে জমা দেওয়া বাধ্যতামূলক হচ্ছে। পাশাপাশি বছরে ৪০ লাখ টাকার বেশি আয় থাকলে বা বিদেশ ভ্রমণ করলে (চিকিৎসা, ধর্মীয় উদ্দেশ্য ব্যতীত) জীবনযাত্রার ব্যয়সহ সম্পদবিবরণী জমা দিতে হবে। আর সরকারি কর্মচারীদের আবশ্যিকভাবে সম্পদবিবরণী জমা দেওয়ার বিধান রয়েছে বিলে।

এটি শিগগিরই জাতীয় সংসদে উত্থাপন করা হবে। এর আগে গত জানুয়ারিতে বিলটি মন্ত্রিসভার বৈঠকে অনুমোদন দেওয়া হয়। খবর সংশ্লিষ্ট সূত্রের।

এছাড়া নতুন আইনের বিল অনুযায়ী দেরিতে রিটার্ন দেওয়ার জরিমানা বাড়ানো হচ্ছে। মিউচুয়াল ফান্ডের আয় কর আওতামুক্ত রাখা হচ্ছে। কর রেয়াতের হিসারে কিঞ্চিৎ পরিবর্তন আনা হচ্ছে, কমানো হচ্ছে রেয়াতের ঊর্ধ্বসীমা। চিকিৎসা বাবদ প্রাপ্ত অর্থ, যাতায়াত ভাতা, ভ্রমণ ভাতা এবং দৈনিক ভাতা করের আওতামুক্ত থাকবে। তবে বাড়ি ভাড়া, ছুটি ভাতা, ছুটি নগদায়ন, ফি, কমিশন, ওভারটাইম করের আওতায় পড়বে। নতুন আইনের প্রস্তাবে বলা হয়েছে, কোনো ব্যক্তি ইচ্ছাকৃতভাবে কর পরিহারের চেষ্টা করলে সর্বনিম্ন ৬ মাস থেকে সর্বোচ্চ ৫ বছর দণ্ড বা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত করা যাবে। কেউ আয়ের বিবরণ গোপন করলে, কর কমাতে ইচ্ছাকৃতভাবে সম্পত্তি, দায় ও ব্যয় সম্পর্কে অসত্য তথ্য দিলে, হিসাব বা অন্য বিবরণীতে মিথ্যা তথ্য দিলে বা দিতে বাধ্য করলে, ইচ্ছাকৃতভাবে কর ফাইলের তথ্য বা বিবৃতি বিলুপ্ত করেন বা করান এবং আয়কর পরিশোধ না করতে অন্য কোনো উদ্যোগ গ্রহণ করলে শাস্তির আওতায় পড়বেন।

নতুন আইনে একজন ব্যক্তি বছরে ৪০ লাখ টাকার বেশি আয় থাকলে বা ব্যক্তিগত গাড়ি থাকলে বা সিটি করপোরেশন এলাকায় গৃহ সম্পত্তি বা অ্যাপার্টমেন্টে বিনিয়োগ করলে বা বিদেশে সম্পদ কিনলে বা বিদেশ ভ্রমণ (চিকিৎসা, ধর্মীয় উদ্দেশ্য ব্যতীত) করলে বা কোম্পানির শেয়ারহোল্ডার পরিচালক হলে পরিসম্পদ বা দায়-এর বিবরণী দাখিল করতে হবে। সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের আবশ্যিকভাবে সম্পদবিবরণী জমা দিতে হবে। অন্যদিকে জীবনযাত্রার ব্যয়বিবরণী দিতে হবে তাদের, যাদের বছরে আয় ৫ লাখ টাকার বেশি বা ব্যক্তিগত গাড়ি আছে বা ব্যবসা থেকে আয় করলে বা সিটি করপোরেশন এলাকায় গৃহ সম্পত্তি বা অ্যাপার্টমেন্টে বিনিয়োগ করলে বা কোম্পানির শেয়ারহোল্ডার পরিচালক হলে জীবনযাত্রার ব্যয়ের বিবরণী দাখিল করতে হবে।

দেরিতে রিটার্ন জমা দিলে প্রদেয় করের ৪ শতাংশ জরিমানা দিতে হবে, আগে ২ শতাংশ ছিল। এছাড়া রিটার্ন দাখিলে ব্যর্থতার জন্য সর্বশেষ প্রদেয় করের ১০ শতাংশ বা ন্যূনতম এক হাজার টাকা জরিমানা করা হবে। ব্যর্থতা অব্যাহত থাকলে প্রতিদিনের জন্য ৫০ টাকা অতিরিক্ত জরিমানা আরোপ করতে পারবেন উপ-কর কমিশনার। নতুন করদাতাদের ক্ষেত্রে জরিমানা ৫ হাজার টাকার বেশি হবে না।

যেসব বাংলাদেশি বিদেশে অবৈধভাবে ধনসম্পদ করেছেন, তাদের জন্যও ‘দুঃসংবাদ’ নিয়ে আসছে নতুন আয়কর আইনে (প্রস্তাবিত)। কোনো ব্যক্তির রিটার্নে অপ্রদর্শিত বিদেশে রক্ষিত সম্পত্তির খোঁজ পাওয়া গেলে মোটা অঙ্কের জরিমানা গুনতে হবে। এক্ষেত্রে বিদেশে সম্পত্তির ন্যায্য বাজারমূল্যের সমপরিমাণ অর্থ জরিমানা করার বিধান থাকছে।

কর রেয়াতের ঊর্ধ্বসীমা কমছে: কর রেয়াতের ঊর্ধ্বসীমা কমানো হয়েছে নতুন আইনে। রেয়াতের হিসাব পদ্ধতিতেও পরিবর্তন আনা হয়েছে। একজন করদাতা আগামী দিনে মোট আয়ের ৩ শতাংশ কর রেয়াতপ্রাপ্ত হবেন অথবা বিনিয়োগের ১৫ শতাংশ অথবা ১০ লাখ টাকারর (বর্তমানে ১৫ লাখ) মধ্যে যেটি কম, সেই অঙ্ক রেয়াতযোগ্য হিসাবে বিবেচিত হবে।

কোনো ব্যক্তি মারা গেলে তার আইনগত প্রতিনিধিকে (ছেলে-মেয়ে) আয়কর দিতে হবে। পাওনা আদায়ে মৃত ব্যক্তি জীবিত থাকার সময়ে যে ধরনের বিধিবিধান প্রয়োগ করা হতো, সেসব বিধিবিধান উত্তরাধিকারের ওপর প্রয়োগ করা হবে।

নতুন আইনে বলা হয়েছে, কর কর্মকর্তারা যে কোনো ভবন, স্থান, জাহাজ, যানবাহন, বিমানে প্রবেশ করে আয় সম্পর্কিত রেকর্ড, অর্থ, মূল্যবান ধাতু, গহনা বা অন্য মূল্যবান সামগ্রী বা বস্তু তল্লাশি করতে পারবেন। দরজা, বাক্স, লকার, সেফ, আলমারি বা অন্য কোনো আধার তালাবদ্ধ থাকলে ভাঙতে পারবেন।

টিআইএন বাতিল করা যাবে : করদাতা চাইলে টিআইএন বাতিল করতে পারবেন। এক্ষেত্রে যদি তার রিটার্ন দাখিলের বাধ্যবাধকতা না থাকে বা পরপর ৩ বছর করযোগ্য আয় না থাকে বা শারীরিক অক্ষমতার কারণে ভবিষ্যতে করযোগ্য আয় শূন্য থাকলে তিনি টিআইএন বাতিলের আবেদন করতে পারবেন। এছাড়া মারা গেলে, স্থায়ীভাবে বাংলাদেশ ত্যাগ করলে, একাধিক নিবন্ধন (টিআইএন) বা ভুলবশত নিবন্ধন পেয়ে থাকলে, আইনি মর্যাদা পরিবর্তন করলে, অন্য কোনো আইনানুগ থাকলে নিবন্ধন বাতিল করা যাবে।

কালোটাকা সাদা করার বিধান থাকছে : নতুন আইনে কালোটাকা দিয়ে জমি, প্লট, ফ্ল্যাট কেনার বিধান বহাল রাখা হয়েছে। এজন্য আগের নিয়মেই কর দিয়ে সব বৈধ করা যাবে। তবে একাধিক জমি-ফ্ল্যাটের জন্য ২০ শতাংশ বাড়তি হারে কর দিতে হবে। অর্থনৈতিক অঞ্চল বা হাইটেকে ১০ শতাংশ কর দিয়ে কালোটাকা বিনিয়োগের মাধ্যমে শিল্প স্থাপনের সুযোগ থাকছে। এছাড়াও নির্ধারিত করের অতিরিক্ত ১০ শতাংশ কর দিয়ে কালোটাকা সাদা করা যাবে। এ আয় শিল্পোদ্যোগ ও তা সম্প্রসারণ, শিল্প-কারখানা আধুনিকায়ন, সংস্কার ও সম্প্রসারণ, ইমারত বা অ্যাপার্টমেন্ট বা ভূমি, শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানির শেয়ার, পণ্য ও সেবা উৎপাদনকারী হিসাবে ব্যবহার করা যাবে।

 

 

 

 

 

Leave A Reply

Your email address will not be published.