The news is by your side.

চলমান লোডশেডিং পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ রূপ নেবে

0 97

বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে ডলার সংকট প্রকট হচ্ছে। জ্বালানি পণ্য সরবরাহকারী বিদেশি কোম্পানির কাছে বাংলাদেশি প্রতিষ্ঠানের বকেয়া দিন দিন বাড়ছে। বকেয়া বিল পরিশোধে এ মুহূর্তে অন্তত ১০০ কোটি ডলার দরকার। হাতে টাকা থাকলেও চাহিদা অনুযায়ী ডলার নেই। ফলে বকেয়া পরিশোধ করা যাচ্ছে না।

যথাসময়ে অর্থ পরিশোধ করতে না পারায় কয়েক কোটি টাকা জরিমানা গুনছে পেট্রোবাংলা। ডলার সংকট দীর্ঘায়িত হলে ব্যাহত হতে পারে এলএনজি আমদানি। ডলারের অভাবে কয়লা আমদানিও বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। পায়রা, রামপালসহ একাধিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের উৎপাদন সংকটে পড়েছে।

চলমান লোডশেডিং পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ রূপ নেবে। তেল আমদানির বিল পরিশোধ করতে হিমশিম খাচ্ছে বিপিসি। বকেয়া পরিশোধ না করলে তেল সরবরাহ বন্ধের হুমকি দিয়েছে সরবরাহকারী কোম্পানিগুলো। ডলার চেয়ে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি বিভাগ থেকে অর্থ বিভাগ ও বাংলাদেশ ব্যাংককে বারবার চিঠি দেওয়া হচ্ছে। সরকারের ঊর্ধ্বতন পর্যায়ে যোগাযোগ করেও সুফল মিলছে না।

জানতে চাইলে বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ সমকালকে বলেন, ডলারের কারণে সমস্যা হচ্ছে। আমরা সরকারের কাছে সহযোগিতা চেয়েছি। তিনি বলেন, ডলার না পেলে কয়লা, এলএনজি– সবকিছুতেই সমস্যা হবে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা নাম না প্রকাশের শর্তে সমকালকে বলেন, শুধু একদিকে দেখলে তো কেন্দ্রীয় ব্যাংকের চলবে না; বিদ্যুৎ-জ্বালানির পাশাপাশি অতি প্রয়োজনীয় নিত্যপণ্য হিসেবে বিবেচিত সার, খাদ্যসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে ডলার সহায়তা দিতে হচ্ছে। আবার দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ধারাবাহিকভাবে কমে ৩০ বিলিয়নের নিচে নেমেছে। ফলে ধীরে ধীরে ডলার বিক্রি না কমিয়ে উপায় নেই।

সংশ্লিষ্টরা জানান, ডলার সংকট কাটাতে বিভিন্ন উপায়ে আমদানি নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে। তুলনামূলক কম প্রয়োজনীয় বা বিলাসবহুল পণ্যের এলসিতে শতভাগ পর্যন্ত মার্জিন নির্ধারণ এবং শুল্কহার অনেক বাড়ানো হয়েছে। আবার কেউ ওভার ইনভয়েসিং বা আন্ডার ইনভয়েসিং করছে কিনা, তা যাচাই করছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এসব উদ্যোগের ফলে চলতি অর্থবছরের মার্চ পর্যন্ত আমদানি ১২ দশমিক ৩৩ শতাংশ কমেছে। একই সময়ে রপ্তানি ৭ দশমিক ৭৬ শতাংশ বেড়েছে। প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স বেড়েছে ৪ দশমিক ৭৮ শতাংশ। এতে ডলার সংকট কমার কথা। এর পরও দিন দিন সংকট প্রকট হওয়ার মূল কারণ বিদেশি ঋণ ব্যাপকভাবে কমেছে। সুদসহ যে পরিমাণ আগের দেনা পরিশোধ হচ্ছে, নতুন ঋণ আসছে সে তুলনায় কম। এসব কারণে গত মার্চ পর্যন্ত আর্থিক হিসাবে ২২২ কোটি ডলারের ঘাটতি তৈরি হয়েছে; আগের অর্থবছরের একই সময়ে যেখানে উদ্বৃত্ত ছিল ১ হাজার ১৯২ কোটি ডলার। শুধু এ কারণে আমদানি কমা এবং রপ্তানি ও রেমিট্যান্স বৃদ্ধির পরও বৈদেশিক মুদ্রার সামগ্রিক লেনদেন ভারসাম্যে ঘাটতি আগের অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় বেড়ে ৮১৭ কোটি ডলারে ঠেকেছে, যা গত অর্থবছরে ছিল মাত্র ৩১০ কোটি ডলার।

পরিস্থিতির উন্নয়নে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ থেকে ধারাবাহিকভাবে ডলার বিক্রি করছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। চলতি অর্থবছরের শুরু থেকে এ পর্যন্ত বিভিন্ন ব্যাংকের কাছে রেকর্ড প্রায় ১৩ বিলিয়ন ডলার বিক্রি করা হয়েছে। গত অর্থবছর বিক্রি করা হয় ৭ দশমিক ৬২ বিলিয়ন ডলার।

বৈদেশিক মুদ্রার সংকট কাটাতে আইএমএফ থেকে ৪৭০ কোটি ডলার ঋণের প্রথম কিস্তি এরই মধ্যে ছাড় হয়েছে। দ্বিতীয় কিস্তি ছাড় হতে পারে নভেম্বরে। এর আগে যেসব শর্ত মানতে হবে তার অন্যতম হলো– বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের হিসাব করতে হবে আইএমএফের বিপিএম৬ ম্যানুয়াল অনুযায়ী। এ ক্ষেত্রে বিভিন্ন তহবিলে জোগান দেওয়া অর্থ রিজার্ভে দেখানো যাবে না।

বন্ধ কয়লা আমদানি

বিল বকেয়া থাকায় পায়রা বিদ্যুৎকেন্দ্রের কয়লা সরবরাহ বন্ধ করে দিয়েছে চীনা কোম্পানি সিএমসি। গত ২৫ মে থেকে একটি ইউনিটের উৎপাদন বন্ধ। মজুত কয়লা দিয়ে দ্বিতীয় ইউনিটটি ২/৩ জুন পর্যন্ত চলবে। কয়লা আমদানি বাবদ বর্তমানে পায়রার ২৯ কোটি ৮০ লাখ মার্কিন ডলার বকেয়া আছে। গত ১৩ এপ্রিল চিঠি দিয়ে সিএমসি জানায়, এপ্রিলে ৫ কোটি ডলার (৫ হাজার ৩২৫ কোটি টাকা) পরিশোধ করা হলে মে মাসের জন্য এলসি (লেটার অব ক্রেডিট) খোলা যাবে। মে মাসে ৭ কোটি ডলার (৭ হাজার ৪৫৫ কোটি টাকা) এবং পরবর্তী প্রতি মাসে ৫০ মিলিয়ন ডলার পরিশোধ করলে প্রয়োজনীয় কয়লা সরবরাহ অব্যাহত রাখতে ঋণপত্র খোলায় বাধা থাকবে না। সর্বশেষ তিন কোটি ডলার বরাদ্দ পেয়েছে পায়রা বিদ্যুৎকেন্দ্র কর্তৃপক্ষ। এই অর্থ দিয়ে এলসি খুলে কয়লা আনতে সময় লাগবে ২০-২৫ দিন। ফলে প্রায় তিন সপ্তাহ দেশের সবচেয়ে বড় বিদ্যুৎকেন্দ্রটি পুরো বসে থাকবে।

ডলার সংকটে কয়লা আমদানি করতে না পারায় গত ২৩ এপ্রিল থেকে প্রায় ২২ দিন বন্ধ ছিল রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র। কেন্দ্রটি থেকে ৫০০-৬০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ পাওয়া গেলেও এখন অর্ধেক বিদ্যুৎ পাওয়া যাচ্ছে। ডলার সংকটে কয়লা আমদানি না হওয়ায় দুই মাস ধরে উৎপাদন বন্ধ ছিল বরিশাল ৩০৭ মেগাওয়াট কেন্দ্রটির।

বেসরকারি বিদ্যুৎ কোম্পানি তেল আনতে পারছে না

পিডিবির কাছে বেসরকারি বিদ্যুৎ উৎপাদনকারী কোম্পানিগুলোর পাওনা অন্তত ১৫০ কোটি ডলার। পিডিবি বিল পরিশোধ করতে পারছে না। ফলে জ্বালানি আমদানি করে চাহিদা অনুযায়ী বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে পারছে না কোম্পানিগুলো। বড় প্রতিষ্ঠানগুলো কোনোমতে সামাল দিতে পারলেও ছোট প্রতিষ্ঠানগুলো বড় ধরনের চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে। কয়েক মাস ধরে বিল বকেয়া থাকার কারণে তাদের ঋণের সুদ বাবদ খরচ আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে।

 

 

 

 

Leave A Reply

Your email address will not be published.