ভাঙ্গন ঝুঁকিতে কুতুবদিয়া বেড়িবাঁধ : আতঙ্কে অর্ধ লক্ষাধিক মানুষ
অভিযোগের তীর পাউবোর ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ঈগল রীচ কনস্ট্রাকশনের দিকে
কক্সবাজার অফিস
কুতুবদিয়া। সমুদ্রবেষ্টিত দেশের অন্যতম নান্দনিক জনপদ। সমুদ্রের করাল গ্রাস থেকে রক্ষার জন্য এ দ্বীপ উপজেলা ঘিরে নির্মিত হয়েছে ৪০ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ। গত কয়েক বছর বর্ষা মৌসুমে বাঁধ ভেঙে প্লাবিত হয় গ্রামের পর গ্রাম। পানি উন্নয়ন বোর্ড বাঁধটি সংস্কারের উদ্যোগ নেয়। ১৩০ কোটি টাকা ব্যয়ে ১৮ কিলোমিটার বাঁধ পূনসংস্কার প্রকল্প বাস্তবায়ন করে পানি উন্নয়ন বোর্ড।
সরেজমিনে দেখা গেছে, উত্তর ধূরুং ইউনিয়নের মিয়ারাকাটা, চর ধূরুং, দক্ষিণ ধূরুং ইউনিয়নের বাতিঘর সংলগ্ন এলাকা, কৈয়ারবিল ইউনিয়নের বিন্দা পাড়া ও আলী আকবর ড়েইল ইউনিয়নের বায়ু বিদ্যুৎ এলাকায় ভাঙ্গন ধরেছে। পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো)’র দেয়া তথ্য মতে কুতুবদিয়ার ৭ টি পয়েন্টে দেড় কিলোমিটার বেড়িবাঁধ সাগরের ঢেউয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
স্বল্প সময়ে বেড়িবাঁধে ভাঙ্গন ধরায় পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো)’র নিয়োগ প্রাপ্ত ঠিকাদারি প্রতিষ্টান ঈগল রীচ কন্সট্রাকসনকে দোষছেন স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা।
তাদের দাবী- শুধুমাত্র পানি উন্নয়ন বোর্ডের নানা অনিয়ম ও অবহেলার কারণে কুতুবদিয়ায় বেড়িবাঁধ বারবার ভেঙ্গে যাচ্ছে। কৌশলে বেড়িবাঁধের বরাদ্দকৃত সিংহভাগ টাকা লুট করার জন্য বর্ষার আগে আগেই নির্মাণ কাজ আরম্ভ করে ঠিকাদারি প্রতিষ্টান ‘ঈগল রীচ’। তাছাড়া বেড়িবাঁধ নির্মাণের জন্য সরকার যে পরিমাণ টাকা বরাদ্দ দেন এর অর্ধেক টাকায় কাজ হলে বেড়িবাঁধ কোন ধরণের ক্ষতিগ্রস্ত হত না।
ঝু্ঁকিপূর্ণ বেড়িবাঁধ জরুরি ভিত্তিতে পুনঃসংস্কার না করলে চলতি বর্ষার বাকি সময় গুলোতে ফসলি জমি ও মানুষের ঘরবাড়ি সাগরে তলিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।তাই দ্রুত সময়ে ঝুঁকিপূর্ণ বেড়িবাঁধ সংস্কারের দাবি করেন তারা।
উত্তর ধূরুং ইউনিয়নের মিয়ারা কাটা এলাকার বাসিন্দা মোঃ নেছার বলেন,স্থায়ী বেড়িবাঁধ না থাকার কারণে প্রতি বছর বর্ষাকালে আতঙ্কে দিন কাটে। গেল ঘুর্ণিঝড় ইয়াসে ক্ষতিগ্রস্ত বেড়িবাঁধ সংস্কার করতে না করতেই আবারো ভেঙ্গে গেল।মানুষের ফসলি জমি ও ঘর— বাড়ির নিরাপত্তার জন্য বাঁধ নির্মাণে দ্রুত পদক্ষেপ নেয়ার দাবি করেন মোঃ নেছার ।
কৈয়ারবিল ইউনিয়নের বিন্দা পাড়া বেড়িবাঁধস্ত এলাকার বেশ কয়েকজন বাসিন্দা বলেন, প্রতি বছর বর্ষা আসলে সাগরের পানির ভয়ে খুব আতঙ্কে থাকি।ঘুর্ণিঝড় ইয়াসের ক্ষয়ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে না উঠতে গেল পূর্ণিমার জোয়ারে আবারো বেড়িবাঁধ ভেঙ্গে গেছে। তাদের দাবী,সারা বছর কাজের তেমন গতি দেখা যায় না বর্ষার আগে আগে কাঁচা মাটি আর বালু দিয়ে বাঁধ নির্মাণ করায় বারবার ভাঙ্গন ধরে। অন্তত জিও ব্যাগ দিয়ে বাঁধ নির্মাণ করলে সাগরের পানি লোকালয়ে প্রবেশ করবে না।
দ্রুত সময়ের মধ্যে বেড়িবাঁধের এসব ঝুঁকিপূর্ণ পয়েন্ট সমূহ পুনঃসংস্কার করা না হলে জোয়ারে সম্পূর্ণ বাঁধ ভেঙ্গে ফসলি জমিসহ কুতুবদিয়ার বেশ কয়েকটি গ্রাম প্লাবিত হওয়ার শঙ্কায় রয়েছেন স্থানীয়রা। তাই চলতি বর্ষা মৌসুমে সাগরের চোখ রাঙ্গানীতে আতঙ্কে বসবাস করছে দ্বীপের ঝুঁকিপূর্ণ বেড়িবাঁধস্ত এলাকার প্রায় অর্ধলক্ষ মানুষ।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ—সহকারি প্রকৌশলী এলটন চাকমা বলেন,নানা জটিলতার কারণে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ঠিকমতো কাজ করতে পারেনি। তবে ক্ষতিগ্রস্ত বেড়িবাঁধের ছবিসহ রিপোর্ট নেয়া হয়েছে এবং দ্রুত সময়ে সংস্কারের জন্য উর্ব্ধতন কতৃপক্ষকে বলা হয়েছে।