ফরিদপুর-৪ আসনের সংসদ সদস্য মুজিবর রহমান চৌধুরী ওরফে নিক্সনের বিরুদ্ধে মামলা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে নির্বাচন কমিশন। ফরিদপুরের চরভদ্রাসন উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান পদে উপনির্বাচন কেন্দ্র করে জেলা প্রশাসককে (ডিসি) হুমকি ও নির্বাচনী দায়িত্ব পালন করা কর্মকর্তাদের গালাগাল করার অভিযোগে তার বিরুদ্ধে আজ বুধবার কিংবা আগামীকাল বৃহস্পতিবারের মধ্যে মামলা করা হবে বলে জানিয়েছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কে এম নূরুল হুদা।
বুধবার দুপুরে নির্বাচন ভবনে এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানিয়েছেন সিইসি।
নূরুল হুদা বলেন, ফরিদপুর নিয়ে আমাদের সিদ্ধান্ত হয়ে গেছে। সংসদ সদস্য নিক্সন সাহেবের বিরুদ্ধে আমরা মামলা করব। হয়তো আজকে বা কালকের মধ্যে থানায় মামলা রজু হয়ে যাবে। আমাদের নির্বাচন বিধিবহির্ভূত আচরণের জন্য আমাদের কাছে আলামত আছে যথেষ্ট, সে জন্য মামলা হবে। থানায় তদন্ত করে যে রকম পাবে, সে রকম আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
তিনি বলেন, ‘আরেকটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। আচরণবিধি ভঙ্গের বাইরেও যদি কোনো অনিয়ম থেকে থাকে, সেগুলো নিয়ে। অতিরিক্তি সচিবের নেতৃত্বে তিন সদস্যবিশিষ্ট কমিটি গঠন করা হয়েছে।’
এর আগে মঙ্গলবার নির্বাচন কমিশন সিদ্ধান্ত নেয় যে, ফরিদপুর-৪ আসনের স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য মজিবুর রহমান চৌধুরীর (নিক্সন) বিরুদ্ধে মামলা করা হবে। নির্বাচন কমিশনের পক্ষে রিটার্নিং কর্মকর্তা এ মামলা করবেন। আজই মামলা নির্দেশনাসংক্রান্ত চিঠি রিটার্নিং কর্মকর্তা ও ফরিদপুরের সিনিয়র জেলা নির্বাচন কর্মকর্তার কাছে পাঠানোর কথা রয়েছে।
মামলার সিদ্ধান্তের বিষয়ে জানতে চাইলে মঙ্গলবার রাতে নির্বাচন কমিশনের সিনিয়র সচিব মো. আলমগীর বলেন, মামলার সিদ্ধান্ত হয়েছে। তবে চিঠি এখনও যায়নি।
ইসি সূত্র জানায়, ১০ অক্টোবর ফরিদপুরের চরভদ্রাসন উপজেলা পরিষদ নির্বাচন হয়। ওই নির্বাচন কেন্দ্র করে জেলা প্রশাসক ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের হুমকি এবং নির্বাচন কর্মকর্তাদের গালাগাল করেন নিক্সন চৌধুরী। এ ঘটনায় মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে অশোভন আচরণের বিষয়ে প্রতিকার চেয়ে নির্বাচন কমিশনেও চিঠি দেয়। সূত্র আরও জানায়, ওই চিঠি পর্যালোচনা করে কমিশন সচিবালয় উপজেলা পরিষদ (নির্বাচন আচরণ) বিধিমালা অনুযায়ী মামলার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। বিধিমালা লঙ্ঘনের দায়ে সর্বোচ্চ ছয় মাস কারাদণ্ড বা ৫০ হাজার টাকা জরিমানা বা উভয় দণ্ডের বিধান রয়েছে।
নিক্সন চৌধুরীর বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রসঙ্গে সিইসি আরও বলেন, আমাদের কাছে অভিযোগ এসেছে। আমরাও সঙ্গে সঙ্গে বিষয়টি জেনেছি। নির্বাচন কমিশনারদের সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে বৈঠক করেছি। তিনি বলেন, নির্বাচন পরিচালনার সময় একজন সংসদ সদস্য যে আচরণ করেছেন তা কাম্য নয়। তিনি আচরণবিধি ভঙ্গ করেছেন এবং আইনে যে বিধিবিধান আছে, তার ব্যাপারে সেই বিধান প্রযোজ্য হবে পরিপূর্ণভাবে। সংসদ সদস্য হিসেবে এ ব্যাপারে আলাদাভাবে কোনো কিছু হবে না। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, নির্বাচন হয়ে যাওয়ায় এখন সামারি ট্রায়ালের সুযোগ নেই। তবে আইনে যেটি আছে তা হবে। যদি মামলা করার প্রয়োজন হয়, মামলাই করব। অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আগে নির্বাচনগুলোতে দু-একটি জায়গায় সংসদ সদস্যরা যাওয়ার চেষ্টা করেছিলেন, আমরা ব্যবস্থা নেয়ায় তারা আর যাননি। কিন্তু ফরিদপুরের চরভদ্রাসন উপজেলা নির্বাচনে তিনি গেছেন। আইনে যা আছে আমরা সেই অনুযায়ী তার ক্ষেত্রে ব্যবস্থা নেব।