চিত্রনায়ক সোহেল চৌধুরী হত্যা মামলায় আলোচিত ব্যবসায়ী আজিজ মোহাম্মদ ভাই ওরফে আব্দুল আজিজসহ তিনজনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত।
দণ্ডিত অন্য দুই আসামি হলেন- ট্রাম্পস ক্লাবের মালিক আফাকুল ইসলাম ওরফে বান্টি ইসলাম ও আদনান সিদ্দিকী। দণ্ডিত প্রত্যেককে দুই লাখ টাকা করে জরিমানা করা হয়েছে। তবে আসামিদের তিনজনই পলাতক।
বৃহস্পতিবার ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-২-এর বিচারক অরুণাভ চক্রবর্তী এ রায় দেন।
মামলার দায় থেকে খালাস দেওয়া হয়েছে- সেলিম খান, শীর্ষ সন্ত্রাসী হিসেবে পরিচিত সানজিদুল ইসলাম ইমন ও আশিষ রায় চৌধুরী ওরফে বোতল চৌধুরী, তারিক সাঈদ মামুন, হারুন অর রশীদ ওরফে লেদার লিটন ওরফে বস লিটন এবং ফারুক আব্বাসীকে।
রাষ্ট্রপক্ষে এ মামলার শুনানি করেন দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের সহকারী পাবলিক প্রসিকিউটর সাদিয়া আফরিন শিল্পী। আসামি আশিষ রায় চৌধুরী ওরফে বোতল চৌধুরীর পক্ষে ছিলেন আইনজীবী শাহ মঞ্জুরুল হক, সানজিদুল ইসলাম ইমনের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী ফারুক আহমেদ ও মো. আব্দুল বাসেত রাখি।
ফারুক আব্বাসীর পক্ষে ছিলেন আইনজীবী সাহাবুদ্দিন। আর যাবজ্জীবনে দণ্ডিতদের পক্ষে ছিলেন রাষ্ট্র নিয়োজিত আইনজীবী।
সহকারী পাবলিক প্রসিকিউটর সাদিয়া আফরিন শিল্পী বলেন, “বহু আগের মামলা। যাদের সাক্ষী করা হয়েছিল তাদের অনেকেই মারা গেছেন। ৩৮ জন সাক্ষীর মধ্যে ১০ জনের সাক্ষ্য নেওয়া গেছে। রাষ্ট্রপক্ষ হিসেবে আমরা চেষ্টা করেছি সব আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণ করতে। আদালত যাদের খালাস দিয়েছেন, লিখিত রায় পেলে পর্যালোচনা করে দেখা হবে খালাসের বিরুদ্ধে আপিল করা হবে কিনা।
রাষ্ট্রপক্ষের এ আইনজীবী জানান, আজিজ মোহাম্মদ ভাই ও বান্টি ইসলাম মামরার শুরু থেকেই পলাতক। আদনান সিদ্দিকী জামিনে বের হওয়ার পর আর আদারতে হাজিরা দেননি। রায় ঘোষণার সময় সানজিদুল ইসলাম ইমনকে কারাগার থেকে আদালতে হাজির করা হয়। জামিনে থাকা আশিষ রায় চৌধুরীও আদালতে উপস্থিত ছিলেন। ফারুক আব্বাসী ও তারিক সাঈদ মামুন জামিনে ছিলেন। এই দুইজনের আইনজীবী তাদের পক্ষে সময় আবেদন করেছিলেন। রায় ঘোষণার সময় পলাতক দেখিয়ে তাদের খালাস দিয়েছেন আদালত। সেলিম খান ও লেদার লিটন ওরফে বস লিটন পলাতক।
বনানীর ১৭ নম্বর রোডের আবেদীন টাওয়ারে ট্রাম্পস ক্লাবের নিচে ১৯৯৮ সালের ১৮ ডিসেম্বর সন্ত্রাসীদের গুলিতে মারা যান নায়ক সোহেল চৌধুরী। ওই ঘটনায় সোহেল চৌধুরীর ভাই তৌহিদুল ইসলাম চৌধুরী রাজধানীর গুলশান থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন। মামলাটির তদন্ত শেষে ১৯৯৯ সালের ৩০ জুলাই গোয়েন্দা পুলিশের সহকারী পুলিশ কমিশনার আবুল কাশেম ব্যাপারী ৯ জনের বিরুদ্ধে চার্জশিট দাখিল করেন।
২০০১ সালের ৩০ অক্টোবর ঢাকার তৃতীয় অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ আদালত আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন। এর দুই বছর পর মামলাটির বিচার দ্রুত নিষ্পত্তির জন্য ঢাকার দুই নম্বর দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে পাঠানো হয়। ওই বছরই এক আসামি মামলা বাতিলে হাইকোর্টে আবেদন করেন। সেই আবেদনে শুনানির হাইকোর্ট মামলার বিচারকাজ স্থগিত করেন।
২০১৫ সালে সেই স্থগিতাদেশ প্রত্যাহার করেন হাইকোর্ট। তারও সাত বছর পর ২০২২ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি মামলার নথি বিচারিক আদালতে ফেরত আসলে সাক্ষ্যগ্রহনের উদ্যোগ নেন বিচারিক আদালত। পরে ২৮ আগস্ট সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হয়। ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-২ এর বিচারক জাকির হোসেনের আদালতে সাক্ষ্য দেন মামলার বাদী সোহেল চৌধুরীর ভাই তৌহিদুল ইসলাম চৌধুরী।
৩৮ জন সাক্ষীর মধ্যে সাক্ষ্য দেন ১০জন সাক্ষী। চলতি বছর ২৮ জানুয়ারি এ মামলার সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ হয়। এরপর শুরু হয় চূড়ান্ত যুক্তিতর্ক। গত ২৯ এপ্রিল রাষ্ট্র ও আসামিপক্ষের চূড়ান্ত যুক্তিতর্ক উপস্থাপনের পর মামলাটি রায় ঘোষণার জন্য রেখেছিলেন আদালত।