The news is by your side.

ভারতে রামমন্দির উদ্বোধন আজ: একদিকে মহোৎসব, অন্যদিকে শঙ্কা

অযোধ্যার ইতিহাসের পাতায় যুক্ত হচ্ছে নতুন অধ্যায়

0 156

 

অযোধ্যার ইতিহাসের পাতায় যুক্ত হচ্ছে নতুন অধ্যায়। ৩১ বছর আগে গুঁড়িয়ে দেওয়া বাবরি মসজিদের জায়গায় রাষ্ট্রীয় মহাসমারোহে উদ্বোধন হতে যাচ্ছে রামমন্দির। ভোটের কয়েক মাস আগে হিন্দুত্ববাদের হাওয়া তোলার কৌশল হিসেবে আজ সোমবার মন্দিরটি উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। তিনি আশা করছেন, এটি আসন্ন নির্বাচনে তৃতীয়বারের মতো তাঁর বিরল জয়ের সম্ভাবনাকে দৃঢ় করবে।

১৬ শতকের ঐতিহাসিক বাবরি মসজিদ নিয়ে বহুকাল ধরে যে বিতর্ক চলে আসছে, সেখানে মন্দির তৈরির মাধ্যমে মোদির দীর্ঘদিনের প্রতিশ্রুতি এবং হিন্দু জাতীয়তাবাদীদের স্বপ্ন পূরণ হচ্ছে।

১৯৯২ সালে বাবরি মসজিদটি গুঁড়িয়ে দিয়েছিল হিন্দু জনতা। সেই হামলা পুরো ভারতকে বদলে দেয় এবং দেশের হিন্দু জাতীয়তাবাদী আন্দোলনকে চাঙ্গা করে। এ কারণে আজকের অনুষ্ঠানটি অত্যন্ত বিতর্কিত। হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজন যখন এটির উদ্বোধন উদযাপন করবে, তখন দেশটির সংখ্যালঘু মুসলিমরা এক বেদনাদায়ক ইতিহাসের সাক্ষী হবে। এ ছাড়া এটি মোদির ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি) সরকারের অধীনে ধর্মীয় বিভাজনের একটি তিক্ত উদাহরণ।

১ হাজার ৮০০ কোটি রুপিরও বেশি খরচ করে হিন্দু দেবতা রামচন্দ্রের নামে এ মন্দির গড়ে তোলা হয়েছে। কয়েকজন হিন্দুত্ববাদী নেতা এ শহরকে বলছেন ‘হিন্দুদের ভ্যাটিকান’।

মধ্যপ্রদেশের মোরেনা জেলার একটি গ্রাম থেকে পরিবারের আরও ২০ সদস্যের সঙ্গে প্রায় ১৪ ঘণ্টার কষ্টকর বাসযাত্রা করে অযোধ্যায় এসেছেন যোগেন্দ্র গুরু। তিনি বলেন, ‘অবশেষে একটি নতুন মন্দির পেয়ে কী যে আনন্দ হচ্ছে! এবার মনে হচ্ছে হিন্দুরা জেগে উঠেছে, এ যেন এক স্বাধীনতার আনন্দ। আমি বিশ্বাস করি, এতদিন আমাদের অবদমিত করে রাখা হয়েছিল।’

বিলাসবহুল এ মন্দির উদ্বোধন অনুষ্ঠানে যোগ দিতে সাত হাজারেরও বেশি মানুষকে ব্যক্তিগতভাবে অযোধ্যায় আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। এ ছাড়া হাজারো ধর্মপ্রাণ হিন্দু মন্দিরের ভেতরে ফুল ও উপহার রাখার জন্য ছোট শহরটিতে ভিড় করেছে।

ক্রমবর্ধমান ভিড়ের মধ্যে অযোধ্যার মুসলমানদের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে। ১৯৯২ সালের দাঙ্গায় দুই আত্মীয়কে হারানো হাজি মাহবুব বলেন, ‘স্থানীয় মুসলমানরা উদ্বিগ্ন, উদ্বেলিত জনতা তাদের বিরুদ্ধে উস্কানিমূলক স্লোগান দেবে। তারা অযোধ্যা থেকে মুসলমানদের বিতাড়িত করার বা হিন্দুরাষ্ট্র (জাতি) দাবি করার আহ্বান জানাবে। হিন্দুরা আমাদের দেখতে পারে না, আমরা কী করতে পারি?’

মোদি বলছেন, এ মন্দির ‘জাতিকে এক করবে’। তবে সমালোচকরা বলছেন, ভোটের আগে হিন্দুত্ববাদের হাওয়া তুলতেই এমন কৌশল নেওয়া হয়েছে। ভারতের রাজনীতিতে বিজেপি গুরুত্বপূর্ণ স্থানে উঠে এসেছিল এ মন্দিরের দাবি তুলেই।

বাবরি মসজিদ ধ্বংস নিয়ে ‘দ্য ডেমোলিশন অ্যান্ড দ্য ভার্ডিক্ট’ বাইয়ের লেখক নীলাঞ্জন মুখোপাধ্যায় বলেন, সোমবারের অনুষ্ঠানে মোদির সভাপতিত্ব করার সিদ্ধান্ত ভারতে হিন্দু আধিপত্যের লক্ষণ। সেখানে মোদির যোগদান রাষ্ট্র ও ধর্মের মধ্যে রেখা ক্রমে ঝাপসা হয়ে আসার ইঙ্গিত দেয়।

উন্মত্ত হিন্দু জনতা ১৯৯২ সালের ৬ ডিসেম্বর বাবরি মসজিদ ভেঙে দিয়েছিল। এরপর ভারতজুড়ে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গায় মারা যান প্রায় দুই হাজার মানুষ, যাদের বেশির ভাগই মুসলিম। ভারতের সুপ্রিম কোর্ট ২০১৯ সালে দেওয়া এক রায়ে এর মালিকানা হিন্দুদের দিয়ে দেন।

এদিকে রামমন্দির ঘিরে অযোধ্যা শহরের চেহারাও পাল্টে দেওয়া হয়েছে। কয়েক হাজার কোটি রুপির যে প্রকল্প নেওয়া হয়েছে, তার মধ্যে রয়েছে রাস্তাঘাটের সম্প্রসারণ, একটি ঝাঁ চকচকে নতুন বিমানবন্দর, একটি বিশাল রেলস্টেশন এবং একটি বহুতল গাড়ি পার্কিং। এ জন্য তিন হাজারেরও বেশি বাড়ি, দোকান ও ধর্মীয় অবকাঠামো সম্পূর্ণ বা আংশিক ভেঙে ফেলা হয়েছে। এখানে এখন জমির দাম সোনার চেয়েও বেশি।

 

Leave A Reply

Your email address will not be published.