The news is by your side.

নির্বাচনের তপশিল ঘোষণার আগেই রাজনৈতিক সংকটের নিষ্পত্তি চাইছে প্রধান দুই দল

0 178

অক্টোবরেই ভোট রাজনীতির হিসাব এসপার-ওসপার করতে মরিয়া আওয়ামী লীগ ও বিএনপি। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তপশিল ঘোষণার আগেই যে কোনো মূল্যে রাজনৈতিক সংকটের নিষ্পত্তি চাইছে প্রধান দুই রাজনৈতিক দল। সবকিছু ঠিক থাকলে নভেম্বরেই জাতীয় নির্বাচনের তপশিল আসতে পারে।

যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নীতি নিয়েও আওয়ামী লীগ-বিএনপিতে বরাবরের মতো বিপরীতমুখী অবস্থান। এ নিয়ে আওয়ামী লীগে নেতিবাচক মনোভাব সৃষ্টি হলেও বিএনপি বেশ উল্লসিত। এ পরিস্থিতিতে আগামী দিনের নির্বাচনকেন্দ্রিক রাজনীতিতে বাংলাদেশকে নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র ও ভারতের মনোভাবের দিকে তাকিয়ে রয়েছে দুই দল।

বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠানোর প্রসঙ্গ নিয়ে দুই দলের দূরত্ব বেড়েছে আরও। খালেদা জিয়াকে বিদেশ পাঠানোর বিষয়ে সরকারের বক্তব্যের সঙ্গে একমত হতে পারছে না বিএনপি। আবার তাঁকে বিদেশ পাঠাতে ২৪ ঘণ্টার আলটিমেটামের সময় পেরিয়ে যাওয়ার পরও নেতাকর্মীর নীরবতাকে বিএনপির দুর্বলতা হিসেবে দেখছে আওয়ামী লীগ।

নির্বাচন সামনে রেখে দুই দলের এমন দূরত্ব বড় ধরনের অস্থিরতা তৈরি করছে বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। তারা বলছেন, তপশিল ঘোষণার আগেই বিরাজমান সমস্যার সমাধান করতে হবে। তবে এখনও সংকট সমাধানের কোনো আলামত নেই। আওয়ামী লীগ ও বিএনপি নিজেদের অবস্থানে অটল।

আওয়ামী লীগ সংবিধান অনুযায়ী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে নির্বাচন আয়োজনে বদ্ধপরিকর। বিএনপির অবস্থান পুরোটাই উল্টো। তারা কিছুতেই প্রধানমন্ত্রীর অধীনে নির্বাচনে যাবে না। আগামী দিনে এ সংকটের বরফ গলবে কিনা, তা নিয়েই চলছে জল্পনা-কল্পনা। তবে সংলাপের মাধ্যমে এর সমাধান সম্ভব বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন উপাচার্য অধ্যাপক ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক বলেন, আস্থার পরিবেশ না থাকলেও রাজনীতিতে সংলাপের গুরুত্ব রয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আগের নির্বাচনে সংলাপের উদ্যোগ নিলেও সমাধান আসেনি।

তবু সংলাপের বিকল্প নেই। এবারও সরকারি দলের তরফ থেকে সংলাপের মাধ্যমে পরিবেশ আরও সুন্দর করার উদ্যোগ নেওয়া হতে পারে। এতে বিরোধী দলের আস্থা ফিরে আসবে। সংকটও দ্রুত কেটে যাবে। তিনি আরও বলেন, বিদেশিরা প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক নির্বাচনের কথা বলছে। আর প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক নির্বাচনের জন্য সরকারকে উদ্যোগী হতে হবে।

সুশাসনের জন্য নাগরিক সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার বলেন, একমাত্র সংলাপই রাজনৈতিক সংকটের সমাধান দিতে পারে। সংকট নিরসনে সংলাপের কোনো বিকল্প নেই। মানুষও সংলাপ চায়। তবে সংলাপ হতে হবে শর্তহীন।

সমস্যার সমাধান না হলে একতরফা নির্বাচন হবে, যা সংঘাতময় পরিস্থিতি তৈরি করবে। এটি কারও জন্য কোনোভাবেই কাম্য নয়। তিনি আরও বলেন, ভোটাধিকার ও মানবাধিকার নিয়ে বিদেশিরা কথা বলতেই পারেন। তবে আমাদের সমস্যার সমাধান আমাদেরই করতে হবে; বাইরে থেকে নয়।

কিন্তু সংলাপ নিয়েও আছে বিপত্তি। সংলাপে বসার আগেই আওয়ামী লীগ ও বিএনপি শর্তজুড়ে দিয়েছে। বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, সরকারের পদত্যাগের পাশাপাশি নির্দলীয় সরকারের দাবি মেনে নেওয়ার পর সংলাপ হতে পারে। এটি মানতে নারাজ আওয়ামী লীগ। দলের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক বলেন, সরকারের পদত্যাগ এবং নির্দলীয় সরকারের দাবি থেকে বিএনপি সরে এলে সংলাপ হতে পারে।

অর্থাৎ আওয়ামী লীগ ও বিএনপি শর্তহীন সংলাপে আগ্রহী নয়। ফলে ভোট রাজনীতি ধীরে ধীরে আরও জটিল হয়ে উঠছে। দু’ দলের নেতারা আক্রমণাত্মক শব্দযুদ্ধে জড়াচ্ছেন। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, আওয়ামী লীগ যে পথে চলছে, তাতে তারা ধ্বংস হয়ে যাবে। অক্টোবরেই আওয়ামী লীগের পতন হবে। এর জবাবে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য অ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর কবির নানক বলেন, সরকারের উন্নয়নের চমকে বিএনপির রাজনীতির কবর হবে অক্টোবরে।

এ ক্ষেত্রে কিছুটা আশার কথা শুনিয়েছেন স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায়মন্ত্রী তাজুল ইসলাম। তিনি গতকাল শনিবার জাতীয় স্থানীয় সরকার দিবসের অনুষ্ঠানে বলেন, রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে আলোচনা হলে নির্বাচন নিয়ে সৃষ্ট বিতর্ক থাকবে না। নির্বাচন নিয়ে ঐকমত্য তৈরির ক্ষেত্রে সংলাপের বিষয়ে দ্বিমত নেই। তবে সেই সংলাপ এজেন্ডাভিত্তিক হওয়া উচিত। তিনি বিতর্কের মাধ্যমে রাজনৈতিক বিরোধ নিষ্পত্তির উপায় খুঁজে পাওয়ার ওপর গুরুত্ব আরোপ করেছেন।

অক্টোবর ঘিরে রাজপথ দখলের প্রস্তুতি শুরু করেছে দু’ দলই। আওয়ামী লীগ ও বিএনপি একের পর এক কর্মসূচি দিচ্ছে। তপশিল ঘোষণার আগেই সরকার পতনের এক দফার চূড়ান্ত আন্দোলনে যেতে চাইছে বিএনপি। এর আগে তারা রোডমার্চ ও সমাবেশের মতো শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি দিয়ে জনসম্পৃক্ততা বাড়ানোর কৌশল নেবে। দুর্গাপূজার আগে এমন ধারাবাহিক কর্মসূচিতে নেতাকর্মীর মনোবল চাঙ্গা রাখার পাশাপাশি মাঠ দখলে রাখতে চাইছে দলের হাইকমান্ড।

আন্দোলনের পরবর্তী ধাপে সরকারের পদত্যাগ ও নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবি আদায়ে কঠোর কর্মসূচির বিষয়ে নীতিগত সিদ্ধান্ত রয়েছে দলটির। সে ক্ষেত্রে সচিবালয়, নির্বাচন কমিশন, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় ঘেরাওয়ের পাশাপাশি অবস্থান এবং হরতালের মতো কর্মসূচিও দেওয়া হতে পারে। তবে সবকিছু নির্ভর করছে প্রধানমন্ত্রীর প্রতিক্রিয়ার ওপর। এ ক্ষেত্রে বিরোধী দলের আন্দোলনকে দমনপীড়নের মাধ্যমে বন্ধ করার চেষ্টা করা হলে তাৎক্ষণিক সিদ্ধান্তে কঠোর আন্দোলন শুরুর পরিকল্পনা রয়েছে বিএনপি ও সমমনা রাজনৈতিক দলগুলোর।

সরকার পতনের এক দফা আন্দোলনের কর্মসূচি হিসেবে গত ১৮ সেপ্টেম্বর ছয়টি রোডমার্চসহ টানা ১৭ দিনের কর্মসূচি পালন করছে বিএনপি। এর মধ্যে চারটি রোডমার্চ, ঢাকা মহানগরে বিভিন্ন স্থানে সমাবেশ, মহিলা সমাবেশ, শ্রমিক-কর্মচারী কনভেনশন আয়োজন করা হয়েছে। আজ রোববার ময়মনসিংহ থেকে কিশোরগঞ্জ পর্যন্ত রোডমার্চ, কাল সোমবার রাজধানীতে কৃষক সমাবেশ, মঙ্গলবার ফরিদপুরে বিভাগীয় রোডমার্চ, বুধবার ঢাকায় পেশাজীবী কনভেনশন এবং বৃহস্পতিবার চট্টগ্রামে বিভাগীয় রোডমার্চের মধ্য দিয়ে প্রথম দফার কর্মসূচি শেষ হবে।

 

 

Leave A Reply

Your email address will not be published.