শারমিন সুলতানা, চট্টগ্রাম অফিস
আধুনিক টেলিভিশন কিংবা আন্তর্জাতিক মানুষ টেলিভিশন সম্প্রচার নিয়ে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন শহরে মাঝেমধ্যেই সেমিনার- সিম্পোজিয়াম হয়। তাত্ত্বিক বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা হয়। তবে দেশের সরকারি কিংবা বেসরকারি সম্প্রচার মাধ্যমগুলোকে বাস্তবিক অর্থে আধুনিক এবং আন্তর্জাতিক মানের করাটা খুব সহজ কাজ নয়।
দক্ষ জনবল, সময়োপযোগী ট্রান্সমিশন ইকুইপমেন্ট, মানসম্মত কনটেন্ট তৈরি, আর্থিক সীমাবদ্ধতা , পেশাদারিত্বের অভাব ; বিভিন্ন কারণে সেমিনারের চমৎকার কথার মধ্যেই আটকে থাকে দেশীয় সম্প্রচার মাধ্যমের মান। তবে এর বাইরেও একটি বিষয় জরুরি- তা হলো, ব্যবস্থাপনা।
বলে রাখা ভালো, একটি টেলিভিশন সম্প্রচার নির্ভর করে টোটাল টিম ওয়ার্ক এর উপর। দক্ষতার সঙ্গে সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা টিম ওয়ার্কে গতি আনতে পারে। সেক্ষেত্রে সীমাবদ্ধতার মধ্যেও মানসম্মত সম্প্রচার সম্ভব।
এত কথা বলার পেছনে একটি গল্প রয়েছে। সরকারি অর্থায়নে পরিচালিত বাংলাদেশ টেলিভিশন চট্টগ্রাম কেন্দ্রটি দীর্ঘদিন দর্শকদের চোখের আড়ালেই ছিল। রিমোট সুইচ ওভার করতে করতে কখনো সামনে আসলে দর্শক সঙ্গে সঙ্গে আবার সুইচ ওভার করে অন্য চ্যানেলে চলে যেতেন।
অবশ্য গত দুই – তিন মাসে বাংলাদেশ টেলিভিশন চট্টগ্রাম কেন্দ্রের স্ক্রিনে পরিবর্তন লক্ষ্য করা যায়। অনুষ্ঠান এবং সংবাদ উভয় ক্ষেত্রেই প্রথাগত ধারণা এবং উপস্থাপনা থেকে অনেকটাই বের হয়ে এসেছে সরকারি অর্থায়নে পরিচালিত এ সম্প্রচার মাধ্যম।
রুচিশীল অনুষ্ঠান, বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ পরিবেশনসহ ঈদে ঢাকার বাইরে একমাত্র রাষ্ট্রীয় চ্যানেল হিসেবে দর্শকদের কাছে প্রশংসিত হয়েছে বিটিভি চট্টগ্রাম।
চ্যানেলটির স্ক্রিন, ব্যাকগ্রাউন্ড, কনটেন্ট, পরিবেশনা সবকিছুর সম্প্রতি এমন পরিবর্তন হয়েছে যে আগের সাথে কোনোভাবেই মেলানো যায় না।
বিটিভি চট্টগ্রাম কেন্দ্রে এখন আর আগের মতো শুধু নির্দিষ্ট শিল্পীদের দিয়ে অনুষ্ঠান তৈরি করা হয় না। সুযোগ দেয়া হচ্ছে নতুন নতুন প্রতিভাবান শিল্পীদেরও। ফলে চট্টগ্রামের প্রতিভা বিকাশের ক্ষেত্রে একটি সহায়ক প্ল্যাটফর্মে পরিণত হয়েছে কেন্দ্রটি। তাই প্রতিভাবানরা নিজেদের সৃষ্টিশীলতা ও সাংস্কৃতিক প্রতিভা প্রকাশের সুযোগ পাচ্ছেন হাতের কাছেই।
প্রতিদিনের বাংলা সংবাদে যুক্ত হয়েছে বাণিজ্য সংবাদ প্রচার। আর সংবাদ বিরতিতে প্রচার করা হচ্ছে বিজ্ঞাপন। দর্শকদের কথা মাথায় রেখে সংবাদ ও প্রতিবেদনের সংখ্যাও বাড়ানো হয়েছে।
সীমিত বাজেটের মধ্যেও গত ঈদ-উল-ফিতরে ৬৬৭ এবং ঈদ-উল-আযহায় ৬৫১ জন শিল্পীর অংশগ্রহণে নির্মিত অনুষ্ঠান প্রচার করা হয়েছে। নিয়মিত এবং বিশেষ অনুষ্ঠানেও একদিকে যেমন সবার অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা হচ্ছে তেমনি গুণগত মানও নজর কেড়েছে সবার। দেশের সুপরিচিত ও গুণী শিল্পীদের অংশগ্রহণে আগের চেয়ে অনেক বেশি দর্শকপ্রিয়তা পেয়েছে বিটিভি চট্টগ্রাম ।
নিয়মিত ভিন্ন আঙ্গিকে নান্দনিক অনুষ্ঠান নির্মাণ করছে প্রতিষ্ঠানটি। অনুষ্ঠান নির্মাণ করা হচ্ছে আধুনিক সেট, লাইট ও ব্যাকগ্রাউন্ডের মাধ্যমে। সেই সাথে আধুনিক স্টুডিও স্থাপনের জন্য দশতলা ভবনের নির্মাণ কাজও দ্রুতগতিতে এগিয়ে নিচ্ছে বলে জানান সংশ্লিষ্টরা।
বিটিভি চট্টগ্রামের জেনারেল ম্যানেজার(জিএম) নূর আনোয়ার রনজু’ বলেন, আগে কেন্দ্রটি থেকে অনুষ্ঠান প্রচারের পর সংরক্ষণের ব্যবস্থা ছিল না। ফলে অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণকারী ও দর্শকরা পরবর্তীতে পছন্দের অনুষ্ঠানগুলো দেখতে ব্যর্থ হতেন।
ইতোমধ্যে অনুষ্ঠান সংরক্ষণের জন্য সার্ভার স্থাপন করা হয়েছে। এর পাশাপাশি ফেসবুক, ইউটিউব সহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে নিয়মিত আপলোড করা হচ্ছে অনুষ্ঠানগুলো।
নূর আনোয়ার রনজু’ বলেন, বলেন, বিটিভি চট্টগ্রাম কেন্দ্রের কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য নিয়মিত প্রশিক্ষণের আয়োজন করা হচ্ছে যাতে করে কেন্দ্রের অনুষ্ঠান ও সংবাদের মান আরো উন্নত করা যায় এবং বৃদ্ধি করা যায় কেন্দ্রে আগত শিল্পী, কলাকুশলী ও অতিথিদের সেবার মান।
ঢেলে সাজানো হয়েছে শিল্পী ও কলাকুশলীদের সম্মানী প্রদান প্রক্রিয়া। সময়মতো শিল্পী সম্মানী প্রদান না করা হলে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা-কর্মচারীকে কঠোরভাবে দায়বদ্ধতার মধ্যে নিয়ে আসা হয়েছে। অন্যদিকে সম্মানী প্রাপ্তি স্বচ্ছ, সহজ ও সুবিধাজনক করার জন্য ইলেক্ট্রনিক ফান্ডস ট্রান্সফার নেটওয়ার্ক (ইএফটিএন)-এর মাধ্যমে প্রদানের ব্যবস্থা করা হচ্ছে।