মুখ্য নির্বাহী থাকতে পারবেন না ইউএনওরা ,পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ
উপজেলার সর্বময় ক্ষমতা থাকবে নির্বাচিত চেয়ারম্যানদের নেতৃত্বাধীন পরিষদের হাতে
উপজেলা পরিষদে মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা থাকতে পারবেন না উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তারা (ইউএনও)। তাঁদের উপজেলা পরিষদের সাচিবিক দায়িত্ব পালন করতে হবে। উপজেলার সর্বময় ক্ষমতা থাকবে নির্বাচিত চেয়ারম্যানদের নেতৃত্বাধীন পরিষদের হাতে।
বৃহস্পতিবার উচ্চ আদালতের উপজেলা-সংক্রান্ত মামলার পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ হয়েছে। ২৪ পৃষ্ঠার রায়ে ইউএনওদের মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তার পদ-সংক্রান্ত উপজেলা পরিষদ আইনের ৩৩ ধারাকে সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক আখ্যা দিয়ে বাতিলসহ চার দফা পর্যবেক্ষণ দিয়েছেন হাইকোর্ট। তবে আপিল বিভাগের চেম্বার জজ গত ৫ এপ্রিল হাইকোর্টের রায় দুই মাসের জন্য স্থগিত করেছেন। তাই পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশিত হলেও এখনই তা কার্যকর হচ্ছে না, ইউএনওরা আপাতত মুখ্য নির্বাহীর ক্ষমতা হারাচ্ছেন না।
উপজেলা পরিষদ আইনের ৩৩ (১) ধারায় বলা হয়েছে, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা পরিষদের মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা হবেন এবং তিনি পরিষদকে সাচিবিক সহায়তা দেবেন। (২) পরিষদের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন, আর্থিক শৃঙ্খলা প্রতিপালন এবং বিধিতে নির্ধারিত অন্যান্য কার্যাবলি পরিষদের মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা সম্পাদন করবেন।
২০২০ সালে ৭ ডিসেম্বর উপজেলা পরিষদ আইনের একাধিক ধারা বাতিল চেয়ে হাইকোর্টে রিট করেন উপজেলা চেয়ারম্যানরা। পরের বছরের ১৫ জুন উপজেলা চেয়ারম্যানদের ক্ষমতা খর্ব করে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের ক্ষমতা দেওয়ার বৈধতা নিয়ে হাইকোর্টে আরেকটি রিট করা হয়। গত ২৯ মার্চ এ মামলায় ৩৩ (১) ধারা বাতিল করেন হাইকোর্ট। তবে রাষ্ট্রপক্ষের আবেদনে গত ৫ এপ্রিল আপিল বিভাগের চেম্বার আদালত রায়টি ৫ জুন পর্যন্ত স্থগিত করেন। পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশিত হওয়ায় রাষ্ট্রপক্ষ নিয়মিত লিভ টু আপিল করার কথা জানিয়েছে।
হাইকোর্টের পূর্ণাঙ্গ রায়ের বাস্তবায়ন চান উপজেলা চেয়ারম্যানরা। অন্যদিকে, চেম্বার আদালতের স্থগিতাদেশ থাকলেও হাইকোর্টের পূর্ণাঙ্গ রায়ের সরকারের উচ্চ পর্যায় থেকে এ-সংক্রান্ত নির্দেশনার অপেক্ষায় রয়েছেন ইউএনওরা।
পূর্ণাঙ্গ রায়ের পর ইউএনওরা উপজেলার মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব পালন বন্ধ রাখবেন নাকি আপিল নিষ্পত্তি পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করে যাবেন, তা নিয়ে ধোঁয়াশায় রয়েছেন। ঢাকা, খুলনা ও রাজশাহীর অন্তত চারজন ইউএনও জানিয়েছেন, করণীয় সম্পর্কে সরকারের নির্দেশনার অপেক্ষায় রয়েছেন তাঁরা।
বাংলাদেশ উপজেলা পরিষদ অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ও পটুয়াখালীর দুমকী উপজেলার চেয়ারম্যান ড. হারুন-আর-রশিদ হাওলাদার রিটের বাদী ছিলেন। তিনি বলেন, সংবিধান অনুযায়ী স্থানীয় সরকার কেন্দ্রীয় প্রশাসনের একাংশ। রাষ্ট্রের কর্মচারীরা কাজ করবেন নির্বাচিত প্রতিষ্ঠানের অধীন, কোনো এক ব্যক্তি সরকারকে প্রতিনিধিত্ব করতে পারে না তার সাংবিধানিক প্রতিফলন এই রায়।
ড. হারুন আরও বলেন, এই রায়ে কারও জয়-পরাজয় নেই। প্রশাসন চালাতে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি এবং মেধাবী কর্মকর্তা-কর্মচারী সবাইকেই দায়িত্ব পালন করতে হবে। উচ্চ আদালতের রায়, দ্রুত বাস্তবায়ন চাই।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ইউএনও জানিয়েছেন, গত মার্চে এ-সংক্রান্ত সংক্ষিপ্ত রায় প্রকাশের পরপরই বাংলাদেশ অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন থেকে মাঠ প্রশাসনের কর্মকর্তাদের পরবর্তী নির্দেশনার জন্য অপেক্ষা করতে বলা হয়। উচ্চ আদালতের রায়ের বিষয়ে কোনো পর্যায়ের কর্মকর্তা যেন মন্তব্য না করেন, সে বিষয়েও সংগঠনের পক্ষ থেকে সতর্ক করা হয়েছে। বাংলাদেশ অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের মহাসচিব ও শিল্প মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব এস এম আলম বলেন, পূর্ণাঙ্গ রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করবে সরকার।
সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার বলেন, উপজেলা নিয়ে যুগান্তকারী রায় হয়েছে, সরকারের উচিত গুরুত্ব দিয়ে রায়টি বাস্তবায়ন করা। শীর্ষ রাজনীতিকরা শুধু মন্ত্রণালয়ে এই ক্ষমতা দেখতে চান, স্থানীয় শাসনে দেখতে চান না। এ কারণেই এই অধিকার পেতে উপজেলা চেয়ারম্যানদের আদালত পর্যন্ত যেতে হয়েছে। এটা এমনিতেই বাস্তবায়ন হওয়ার কথা।