গাজীপুর সিটি নির্বাচন
গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি আজমত উল্লা খান। তাঁকে চ্যালেঞ্জ জানাতে ভোটের মাঠে নেমেই পড়েছেন জাহাঙ্গীর আলম। সংগ্রহ করেছেন মনোনয়নপত্র।
আগের দুই নির্বাচনে বিএনপির সঙ্গে হয়েছিল আওয়ামী লীগের ভোটের লড়াই। এবার বিএনপি মাঠে নেই । তবে প্রার্থী হচ্ছেন আগের নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থী হাসান সরকারের ভাতিজা সরকার শাহ্ নুর ইসলাম (রনি সরকার)। গাজীপুরের স্থানীয় রাজনীতিতে এই পরিবারের রয়েছে ভালো পরিচিতি। এ ছাড়া জাতীয় পার্টির প্রার্থী হিসেবে সাবেক স্বাস্থ্য সচিব এমএম নিয়াজ উদ্দিন গতকাল বুধবার মেয়র পদে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন।
স্থানীয় নেতারা বলছেন, জাহাঙ্গীর আলম প্রার্থী হলেও শেষ পর্যন্ত ভোটের মাঠে টিকে থাকতে পারবেন কিনা– সেটাই এখন বড় প্রশ্ন। তাঁকে আওয়ামী লীগ থেকে বহিষ্কারের পর শর্তসাপেক্ষে ক্ষমা করা হয়েছিল। আপাতত মনোনয়নপত্র জমা দিয়ে তিনি দলের সঙ্গে দরকষাকষির জায়গা তৈরি করতে চাইছেন বলেও মন্তব্য করছেন অনেকে।
জাহাঙ্গীর আলম ভোটের মাঠে কোনো ফাঁকফোকর রাখছেন না। সে কারণে একসঙ্গে দুটি মনোনয়নপত্র কিনে সবাইকে ভড়কে দিয়েছেন। একটি নিজের, আরেকটি তাঁর মা জায়েদা খাতুনের নামে। কোনো কারণে নিজের মনোনয়নপত্র না টিকলে নৌকা ডুবাতে মাকে নিয়ে থাকবেন ভোটযুদ্ধে।
বৃহস্পতিবার মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার সব প্রস্তুতির কথা জানিয়ে জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘আমার বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহারের সঙ্গে প্রার্থী হওয়ার সম্পর্ক নেই। কারণ দুটি ভিন্ন ঘটনা। বহিষ্কারের ঘটনা ঘটেছিল অন্য এক প্রেক্ষাপটে।’ প্রার্থী হওয়ায় দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য হচ্ছে কিনা– এমন প্রশ্নের জবাবে জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘এটা দলীয় নেতাদের সঙ্গে আলাপ-আলোচনার পরে বোঝা যাবে। আগে তাঁদের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা হোক, তারপর দেখা যাবে।’
গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আতাউল্লাহ মণ্ডল জানান, জাহাঙ্গীর আলমের মনোনয়নপত্র সংগ্রহের খবর তাঁরাও পেয়েছেন। এখন পর্যন্ত গাজীপুর আওয়ামী লীগের কোনো নেতার সঙ্গে জাহাঙ্গীরের যোগাযোগ হয়েছে বলে তিনি জানেন না। দল থেকে জাহাঙ্গীর আলমের প্রার্থিতা প্রত্যাহারের উদ্যোগ নেওয়া হবে কিনা এটা কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের বিষয়। স্থানীয় আওয়ামী লীগে এমন কোনো উদ্যোগ নেই। তাঁর মতে, নৌকার প্রার্থী নিয়ে তাঁরা মাঠে নেমে পড়েছেন। যেই প্রার্থী হোক নৌকার বিজয় শতভাগ নিশ্চিত।
২১ জানুয়ারি আওয়ামী লীগ থেকে জাহাঙ্গীর আলমের বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহারের চিঠি দেওয়া হয়েছিল। এতে ‘ভবিষ্যতে সংগঠনের স্বার্থ পরিপন্থি ও শৃঙ্খলা ভঙ্গ না করার’ শর্তে ক্ষমা ঘোষণা করা হয়। এর আগে ২০২১ সালের ১৯ নভেম্বর আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী সংসদের বৈঠকে গাজীপুর সিটি করপোরেশনের সে সময়ের মেয়র ও মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলমকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছিল। এর পরপরই স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় মেয়র পদ থেকে তাঁকে সাময়িক বরখাস্ত করে।
স্থানীয় নেতারা মনে করছেন, প্রার্থী হিসেবে জাহাঙ্গীর আলম ভোটের মাঠে টিকতে পারলে কঠিন চ্যালেঞ্জে পড়বেন নৌকার প্রার্থী আজমত উল্লা খান। জাহাঙ্গীর মেয়র থাকাকালে নগরের রাস্তাঘাটের দৃশ্যমান উন্নয়ন হয়েছে। তাঁকে দল থেকে বহিষ্কারের বিষয়ে আজমত উল্লা প্রকাশ্যে তৎপরতা চালিয়েছেন। এসব কারণে দলের ভেতরে ও বাইরে জাহাঙ্গীরের ওপর এক ধরনের সহানুভূতি রয়েছে।
ভোটের মাঠে জাহাঙ্গীর না থাকলে আজমত উল্লার জয় অনেকটাই সহজ হতে পারে বলেও মনে করছেন স্থানীয় বিশ্লেষকরা। কারণ হিসেবে তাঁরা বলছেন, হাসান সরকারের ভাতিজা রনি সরকার প্রার্থী হলেও ভোটারদের মধ্যে তাঁর গ্রহণযোগ্যতা কম। আওয়ামী লীগের সাবেক এমপি আহসান উল্লাহ্ মাস্টার হত্যা মামলায় তাঁর বাবা ও সাবেক বিএনপি নেতা নুরুল ইসলাম সরকার কারাগারে রয়েছেন।
সরকার শাহ্ নুর ইসলাম রনি জানান, পারিবারিকভাবে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে প্রার্থী হওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। তৃণমূলের ভোটারদের কাছ থেকেও তিনি সমর্থন পাচ্ছেন বলে দাবি করেন। রনি বলেন, বিএনপি এই নির্বাচন বর্জন ও নেতাকর্মীর ওপর প্রার্থী হওয়ার বিষয়ে নিষেধাজ্ঞা থাকলেও তাঁর জন্য সেটা প্রযোজ্য হবে না। কারণ, তিনি ব্যক্তিগতভাবে বিএনপির কোনো পদে নেই।
২০১৩ সালে গাজীপুর সিটি করপোরেশনে প্রথমবারের মতো ভোট অনুষ্ঠিত হয়। ওই নির্বাচনে আওয়ামী লীগ প্রার্থী আজমত উল্লা দলীয় মনোনয়ন পেয়েও জিততে পারেননি। বিএনপি প্রার্থী অধ্যাপক আবদুল মান্নান জয়ী হন। জাহাঙ্গীর আলম ওই সময়ে মনোনয়ন না পেয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছিলেন। পরে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের হস্তক্ষেপে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ান। পরে ২০১৮ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ প্রার্থী হিসেবে জয়ী হন জাহাঙ্গীর আলম। এই নির্বাচনে বিএনপি প্রার্থী ছিল সাবেক এমপি হাসান সরকার।