সৌদি রাজপুত্র মোহাম্মদ বিন সালমান মেয়েদের ড্রাইভিং, মেয়েদের মানবাধিকার, চাকরিতে পুরুষের সমান বেতন পাওয়া, আবায়া বা বোরখা না পরার স্বাধীনতা পাওয়া, পরপুরুষের পাশে বসে কন্সার্ট দেখা আর স্টেডিয়ামে বসে খেলা দেখার অধিকার পাওয়া — এসব নানা কিছুকে সবুজ সংকেত দেখিয়েছেন। এমনকী পুরুষ- অভিভাবকের অনুমতি ছাড়া দেশের বাইরে সৌদি মেয়েদের পা না বাড়ানোর ভয়াবহ আইনটিকে বাতিল করতে যাচ্ছেন তিনি।
সৌদি আরবে, যেখানে আবায়া ছাড়া ঘরবার হলে মেয়েদের সর্বনাশ হতো, পরপুরুষের সঙ্গে মেলামেশা করলে জেলে যেতে হতো, মেয়েদের জন্য কন্সার্ট, খেলা দেখা সবই ছিল নিষিদ্ধ, সেখানে মেয়েদের মানুষের সম্মান দিতে চাইছেন এই লোকটিই। একটু একটু করে পর্দা তুলে দিচ্ছেন, অন্তঃপুরবাসিনীকে আলোয় নিয়ে আসতে চাইছেন, তাঁকে তো সাধুবাদ দেবই। যে জরুরি কাজটি রাজপ্রাসাদের আর কোনও রাজা বা রানী বা রাজপুত্র বা রাজকন্যা দ্বারা সম্ভব হয়নি, সেটি মোহাম্মদ বিন সালমান দ্বারা হয়েছে।
মোহাম্মদ বিন সালমান সম্ভবত জাতীয় পতাকার বদলও চাইছেন। জাতীয় পতাকায় আছে একটি তরবারি আর একজন ছাড়া দ্বিতীয় কোনও ঈশ্বরের সামনে মাথা না নোয়ানোর আদেশ সম্বলিত বাণী । ভায়োলেন্স আর অন্ধ বিশ্বাসের প্রতীককে বাদ দিয়ে যদি মানবাধিকারের কোনও প্রতীককে নতুন পতাকায় স্বাগত জানানো হয়, এর চেয়ে ভালো সংবাদ আর কী হতে পারে! মোহাম্মদ বিন সালমানকে সাধুবাদ জানাই।
আবার এও ঠিক, মোহাম্মদ বিন সালমানের আদেশেই তুরস্কের দূতাবাসে জামাল খাসোগি নামে রাজপুত্রের এক সমালোচক- সাংবাদিককে নিশ্চিহ্ন করে দেওয়া হয়েছিল।
নিজের আত্মীয় স্বজনের মধ্যে যারা তাঁর বাদশাহ হওয়াতে আপত্তি করেছে, রিয়াদের রিৎজ কার্ল্টন হোটেলে সভা করার নামে তাদের ডেকে এনে মোহাম্মদ বিন সালমান হয়তো কাউকে কাউকে গুম করে দিয়েছেন। তাছাড়া, এও সত্য, মেয়েদের ড্রাইভিং করার অধিকার দিলেও ড্রাইভিংএর অধিকারের জন্য আন্দোলন করা মেয়েদের অনেককে তিনি জেলে পুরেছিলেন।
মোহাম্মদ বিন সালমান ভালো, একই সঙ্গে মন্দও। নারীর অধিকারের জন্য যা তিনি করছেন তার জন্য তাঁর প্রশংসা প্রাপ্য। আর, জামাল খাসোগি এবং শত্রু-স্বজনদের নির্যাতন এবং হত্যা করার জন্য তাঁর নিন্দে প্রাপ্য।