নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলার ফতুল্লা থানার ধর্মগঞ্জে আব্দুল হালিম নামের এক বীর মুক্তিযোদ্ধাকে শ্বাসরোধে হত্যার পর তার ঘর থেকে দুর্বৃত্তরা ২০ লাখ টাকা ও স্বর্ণালংকার নিয়ে গেছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ সময় তার ছেলে মো. মাসুদকে হাত-পা ও চোখ বেঁধে মারধর করে ফেলে রাখে।
মঙ্গলবার রাত ১১টা থেকে ২টার মধ্যে সদর উপজেলার এনায়েতনগর ইউনিয়নের মাওলা বাজার এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। নিহত মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল হালিম (৭২) মাওলাবাজার এলাকার মৃত মহব্বত আলীর ছেলে।
বুধবার সকাল সাড়ে ৭টায় পুলিশ লাশ উদ্ধার করে ময়না তদন্তের জন্য নারায়ণগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালের (ভিক্টোরিয়া) মর্গে পাঠিয়েছে।
নিহতের ছেলে হাফেজ মো. মাসুদ জানান, পরিবারের লোকজন মঙ্গলবার আত্মীয়র বাড়িতে বেড়াতে যায়। রাতে তার বাবা নিজ রুমে ও সে তার রুমে ঘুমিয়ে ছিলেন। রাত প্রায় ১১টায় ঘুমন্ত অবস্থায় তিনজন লোক তার হাত-পা ও চোখ বেঁধে মারধর করেন। তার বাবার রুমে কয়জন ছিল তা তার জানা নেই। দুর্বৃত্তরা রাত দুইটায় জমি বিক্রির ২০ লাখের বেশি টাকা ও স্বর্ণালংকার নিয়ে চলে যায়। দুর্বৃত্তরা কীভাবে বাসায় ঢুকেছে তা বলতে পারেন না মাসুদ।
ঘটনাস্থলে যাওয়া ফতুল্লা মডেল থানার এসআই হুমায়ুন কবির জানান, ময়না তদন্ত প্রতিবেদনে জানা যাবে মৃত্যুর কারণ। তবে যে ঘরে ঘটনা ঘটেছে সেই ঘরে বাইরে থেকে ভিতরে প্রবেশ করার কোনো আলামত পাওয়া যায়নি। ঘরটিতে চারটি সিসিটিভি ক্যামেরা রয়েছে। ক্যামেরার মেমোরি কার্ড খুলে নিয়ে গেছে দুর্বৃত্তরা।
নিহতের ছোট মেয়ে নুরুননেছা জানান, রাত আড়াইটার দিকে তাদের ভাড়াটিয়ার মেয়ে তাকে ফোন করে জানায় যে, তাদের বাসায় ডাকাতি হয়েছে। তার ভাইকে হাত-পা বেঁধে মারধর করে টাকা ও স্বর্ণালংকার নিয়ে গেছে। তার বাবা কোনো কথা বলছেন না। সংবাদ পাওয়ার পরপর তিনি বাসায় ছুটে আসেন। তিনি আরও জানান, বাসায় ৩০ হাজার টাকা ছিল। সেই টাকা নিয়ে গেছে।
পাশের ফ্ল্যাটের ভাড়াটিয়া মাহিনুর বেগম জানান, তার স্বামী কাঁচামাল ব্যবসায়ী। প্রতিরাতে দুইটার দিকে কাঁচামাল সংগ্রহের জন্য বাসা থেকে বের হন। রাত দুইটার দিকে তার ঘুম ভাঙলে বাড়িওয়ালার ঘরের দরজায় ঠাস্ ঠাস্ শব্দ শুনতে পান এবং গোঙানির আওয়াজ পান। দরজা খুলে দেখতে পান বাড়িওয়ালার ফ্ল্যাটের প্রধান দরজা খোলা। তিনি ভিতরে প্রবেশ করে দেখেন রুমের ভিতর প্রবেশ করার দুটি দরজা বাইরে থেকে আটকানো।
তখন তিনি বাইরের সিটকিনি খুলে দেখেন গামছা দিয়ে বাড়িওয়ালার ছেলে হাফেজ মাসুদের হাত-পা বাঁধা। একটি কাপড় দিয়ে মুখ বাঁধা অবস্থায় তিনি ফ্লোরে পড়ে রয়েছেন। তখন তিনি মাসুদের হাত-পা ও মুখের বাঁধন খুলে দেন। পাশের রুমে গিয়ে দেখেন বিছানার ওপর বাড়িওয়ালার মৃতদেহ পড়ে আছে।
ফতুল্লা মডেল থানার ওসি মোহাম্মদ রিজাউল হক বলেন, নিহতের এক ছেলে ও দুই মেয়ে। মেয়েরা স্বামীর বাড়ি থাকেন। ছেলের পরিবারের সঙ্গে মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল হালিম নিজ বাড়িতে থাকেন। ঘটনার সময় ছেলে ও আব্দুল হালিম ছাড়া কেউ বাড়িতে ছিলেন না। ঘটনাটি গুরুত্ব সহকারে তদন্ত চলছে।