ইতালির নির্বাচনে জয়ী হয়ে প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী হতে চলেছেন জর্জিয়া মেলোনি। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর সবচেয়ে ডানপন্থী (ফার-রাইট) দলের প্রতিনিধি হিসেবে তিনি কনজারভেটিভ জোটকে রোববারের নির্বাচনে সাফল্য এনে দিয়েছেন।
আজ সোমবার বার্তা সংস্থা রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে মতে, নির্বাচনের প্রাথমিক ফল অনুযায়ী, পার্লামেন্টের উভয় কক্ষেই ডানপন্থী ব্লক সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করতে চলেছে।
ফলে দীর্ঘদিনের ভঙ্গুর ও গোলযোগপূর্ণ পরিস্থিতির অবসান হয়ে দেশটিতে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা আসার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে।
নির্বাচনে তিনিই জিতছেন বলে দাবি করে মেলোনি সোমবার সকালে সমর্থকদের ধন্যবাদ জানিয়েছেন। বলেছেন, ‘‘অনেকের জন্য গর্বের রাত এটা। মুক্তির রাত।’’ মেলোনি এ-ও বলেছেন, ‘‘এই জয় সকলকে উৎসর্গ করতে চাই। ইতালির মানুষ আমাদের বেছেছেন। আমরা তাঁদের ঠকাবো না।’’
মেলোনি তার দলের ফ্যাসিবাদি অতীতকে খুব একটা গুরুত্ব দেন না। তিনি দলটিকে যুক্তরাজ্যের কনজারভেটিভ দলের মতো মূল ধারার রাজনৈতিক দল হিসেবে উপস্থাপন করতে চান। তিনি ইউক্রেনে পশ্চিমের অবলম্বন করা নীতিমালাকে সমর্থন করার ও ইতালির ভঙ্গুর অর্থনৈতিক পরিস্থিতিতে ঝুঁকির মুখে না ফেলার অঙ্গীকার জানিয়েছেন।
ইতালির অভ্যন্তরীণ মন্ত্রক সূত্রে জানা গিয়েছে, মেলোনির ‘ব্রাদারস অফ ইতালি’ দলের নেতৃত্বাধীন দক্ষিণপন্থী জোটের সরকার কমপক্ষে ৪৪ শতাংশ ভোট পেয়ে জয়ী হতে পারে। বিভিন্ন বুথ ফেরত সমীক্ষার ফলে জানা গিয়েছে, ২২ থেকে ২৬ শতাংশ ভোটে জিততে পারেন মেলোনি। তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বী বামপন্থী এনরিকো লোট্টা পিছিয়ে রয়েছেন।
‘ঈশ্বর, দেশ ও পরিবার’—এ নীতিবাক্যকে সামনে রেখে ৪৫ বছর বয়সী মেলোনি নির্বাচনী প্রচারণা চালিয়েছেন। ইউরোনিউজকে দেওয়া এক বিবৃতিতে মেলোনি বলেন, ‘অবশ্যই এটি হবে একটি মাইলফলক। শুধু ইতালিতে নয়, পশ্চিমা সমাজে নারীদের সমাজের গুরুত্বপূর্ণ পাবলিক ভূমিকা পালনের সুযোগ থেকে বঞ্চিত করা হয়। এ কারণে আমি এটিকে টিকে ‘গ্লাস সিলিং’ ভাঙা বলতে চাই।আমার দেশে প্রথম এই অঘোষিত নিষেধাজ্ঞা পারাটা আমার জন্য হবে সম্মানের।’
আপাতদৃষ্টিতে মনে হচ্ছে, পার্লামেন্টের ২ কক্ষেই জোট প্রাধান্য বিস্তার করতে পারবে। তবে জোটের সদস্যদের কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে মতভেদ রয়েছে।
সালভিনি রাশিয়ার বিরুদ্ধে পশ্চিমের বিধিনিষেধের যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। তিনি এবং বার্লুসকোনি প্রায়ই রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের নেতৃত্বের প্রশংসা করেন।
বাড়তে থাকা জ্বালানি বিলের মোকাবিলা প্রসঙ্গে তারা কর রেয়াত, পেনশনের সংস্কারসহ বেশ কিছু উদ্যোগের কথা বলেছেন, তবে এগুলোর বাস্তবায়ন করা বেশ কঠিন হবে বলে বিশেষজ্ঞরা মত প্রকাশ করেছেন।
মেলোনির জোট বড় ব্যবধানে জয়ী হলেও, এবারের নির্বাচনে ভোটারের উপস্থিতি অনেক কম ছিল। ২০১৮ সালের নির্বাচনে ৭৪ শতাংশ ভোটার ভোট দেন, যা ছিল ইতালির ইতিহাসে কোনো নির্বাচনে সবচেয়ে কম ভোটার ভোট দেওয়ার নতুন রেকর্ড। এবারের নির্বাচনে ভোটার আরও কমে ৬৪ শতাংশ হয়েছে।