The news is by your side.

বেগম সাজেদা চৌধুরী  : স্মরণাঞ্জলি

0 169

 

নির্মলেন্দু গুণ

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সহসংগ্রামী, চলমান জাতীয় সংসদের উপনেতা, আওয়ামী লীগের অন্যতম শীর্ষ নেতা, ১৯৭৫ পরবর্তী আওয়ামী লীগের চরম দুঃসময়ের লড়াকু সৈনিক শ্রদ্ধেয় বেগম সাজেদা চৌধুরীর মৃত্যুতে আমি গভীর শোক ও শ্রদ্ধা নিবেদন করছি। তাঁর পরিবারের সকল সদস্য ও তাঁর অগণিত ভক্তদের জন্য জানাচ্ছি সমবেদনা।

তাঁকে নিয়ে আমার খুব ব্যাক্তিগত একটি সুখস্মৃতি আছে। আজ সেই সুখস্মৃতিটি প্রকাশ করবো।

১৯৭৭ সালে আমি দৈনিক সংবাদ-এর একজন “অন ট্রায়াল” সাংবাদিক ছিলাম। একজন তরুণ কবিও বটে।

আমার জন্মদিন নিয়ে তখন কারও মাথাব্যথা ছিলো না, থাকার কোনো কারণও ছিলো না। আমার জন্মদিন যে ৭ আষাঢ়/২১ জুন– সেকথা শুধু আমারই জানা ছিলো।

তখন আমার মাথায় একটা বুদ্ধি আসে। আপনি তাকে দুষ্টবুদ্ধিও বলতে পারেন। আমার জন্মদিনটিকে স্মরণীয় করার জন্য তখন দৈনিক সংবাদের বিজ্ঞাপন-পাতায় আমি দেশবাসীকে জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানিয়ে একটি ছোট্ট বিজ্ঞাপন প্রচার করি। তার জন্য আমাকে চল্লিশ টাকার বিজ্ঞাপন বিল আগাম প্রদান করতে হতো। আমি সানন্দে ঐ বিল পরিশোধ করতাম।

এতো ছোট বিজ্ঞাপন প্রায় সবার চোখই এড়িয়ে যেতো। কোনো ফিডব্যাক পেতাম না। ঐ বিজ্ঞাপন পড়ে কেউ আমাকে জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানাতেন না। এই যখন অবস্থা, তখন একদিন সংবাদ কার্যালয়ে গিয়ে আমি জানতে পারি কিছুক্ষণ আগে আওয়ামী লীগ নেত্রী বেগম সাজেদা চৌধুরী আমাকে জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানাতে সংবাদ কার্যালয়ে এসেছিলেন, আমার জন্য বেশ কিছুক্ষণ অপেক্ষাও করেছিলেন। আমাকে না পেয়ে তিনি আমার জন্য একটি ফুলের তোড়া এবং জীবনানন্দ দাশের কাব্যসমগ্র বইটি রেখে গেছেন।

আমি যারপরনাই খুশি হলাম। সংবাদ কার্যালয়ের সাংবাদিকরা, যারা বিজ্ঞাপন পড়েও আমাকে কখনও জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানাতেন না, তারাও আমাকে সেদিন জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানালেন।

আমি ফুলের তোড়ায় মধ্যে নাক গুঁজে তাজা গোলাপ ও রজনীগন্ধার গন্ধ নিয়ে জীবননানন্দ দাশের কাব্যসমগ্রটির পাতা উল্টালাম।

দেখলাম একটি পাতায় বেগম সাজেদা চৌধুরী গোটা গোটা অক্ষরে লিখেছেন–

 

“বঙ্গবন্ধুর কবি নির্মলেন্দু গুণকে জন্মদিনের শুভেচ্ছা”।

–বেগম সাজেদা চৌধুরী।

 

ওটাই ছিলো আমার ৩২তম বা ৩৩তম জন্মদিনে পাওয়া প্রথম উপহার।

আজ দুঃখ ভারাক্রান্ত হৃদয়ে, শ্রদ্ধেয়া বেগম সাজেদা চৌধুরী, আমার জন্মদিনে দেয়া আপনার উপহারটির কথা আমি কৃতজ্ঞচিত্তে স্মরণ করছি।

আপনার ওপর পরমকরুণময়ের কৃপা বর্ষিত হোক।

আপনি আপনার সুকর্মের জন্য বেঁচে থাকবেন আমার মতো বহু মানুষের হৃদয়ে হৃদয়ে।

 

সূত্র: কবি নির্মলেন্দু গুণের অফিশিয়াল ফেইসবুক  টাইমলাইন

Leave A Reply

Your email address will not be published.