কক্সবাজার অফিস
মিয়ানমারের অভ্যন্তরে সংঘর্ষ এখনো থামেনি । মিয়ানমারে বাংলাদেশ ও ভারত সীমান্ত-সংলগ্ন এলাকায় রাখাইন রাজ্যে অব্যাহত সংঘর্ষ চলছে, যার প্রভাব পড়ছে প্রতিবেশী দেশগুলোর ওপর। বিশেষ করে, বান্দরবানের ঘুমধুম ও তমব্রু সীমান্ত এলাকার বাসিন্দারা আতঙ্কের মধ্যে রয়েছেন।
প্রতিদিন গুলির শব্দ শোনা যায় তুমব্রু সীমান্তে। অন্যদিকে- মিয়ানমারের থাকা রোহিঙ্গাদের কয়েকজনের সাথে ফোনে কথা হয় । এক পক্ষ বলছে, সেখানে তারা চাপে আছেন। অন্য পক্ষ বলছে ঘর পুডিয়ে দিচ্ছে সেনা বাহিনী। । ফলে অনেকে জড়ো হয়েছেন বাংলাদেশে পালিয়ে আসার।
সে কারনে মিয়ানমার থেকে আবারও বাংলাদেশে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশের শঙ্কা শুরু হয়েছে। রোহিঙ্গাদের সম্ভাব্য অনুপ্রবেশ নিয়ে সতর্ক অবস্থানে আছে বিজিবি।
ঘুমধুম ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এ কে এম জাহাঙ্গীর আজিজ ভিশন নিউজ ২৪ কে বলেন, সেখানে গত একমাস ধরেই প্রতিদিন সীমান্তের ওপার থেকে গোলাগুলির আওয়াজ আসছে। গত কয়েকদিন ধরে যুদ্ধবিমান আর হেলিকপ্টার থেকে গোলা ছুঁড়তে দেখা গেছে।
কিন্তু মিয়ানমার অংশে গুলির শব্দ। থেমে থেমে মর্টারশেলের বিকট শব্দে প্রকম্পিত হয়ে উঠছে তুমব্রু সীমান্ত। কখনো তাদের মর্টার শেল উড়ে আসছে এপাড়ে। গেল শুক্রবারও উড়ে আসে মিয়ানমারের একটি গোলাবরুদ। সীমান্তে গা ঘেঁষে টহল দেয় সেদেশের সেনাবাহিনী।
মিয়ানমারের এই উদ্ভট আচরণে এপাড়ের মানুষ আতঙ্কিত। কখন কি যেন উড়ে এসে পড়ে, সেই ভয় সব সময়।
৪০ নম্বর সীমান্ত পিলারের একটি রাবার বাগান শ্রমিক গোলাম মাওলা (৪৫) সাথে কথা হয় ভিশন নিউজ ২৪’র এসময় তিনি বলেন গত এই মাসে তাঁদের বাগানে দুটি মর্টার শেল এসে পড়ে। এবং প্রায় সময় আকাশে হেলিকপ্টার চক্কর দিতে দিতে নিচে গুলিবর্ষণ করছিল। মাটি থেকেও ওপরের দিকে গুলি ছোড়া হচ্ছিল। দূরের আকাশে চার-পাঁচটি যুদ্ধবিমান চক্কর দিয়ে হেলিকপ্টারকে পাহারা দিচ্ছিল। হেলিকপ্টার থেকে শত শত গুলি ও মর্টার শেল নিক্ষেপ করা হয়। বিকট শব্দে ওই এলাকায় অবস্থান না করে তুমব্রু বাজারের দিকে পালিয়ে এসেছেন শ্রমিকেরা। এবং শুনতে পাচ্ছি মায়ানমারে বাংলাদেশের সীমান্তে পাশে থাকা রোহিঙ্গারা বাংলাদেশে অনুপ্রবেশের চেষ্টা করছে।
মিয়ানমার অংশে থাকা রোহিঙ্গাদের সাথে ফোনে কথা হয়। এক রোহিঙ্গা বললেন, তাদের ঘর থেকে বের হতে দিচ্ছেনা সেনাবাহিনী, তবে চাপ বেশি রাখাইনদের উপর যারা আরাকান আর্মির সমর্থক। তারা পালাতে চাই।
রোহিঙ্গা ক্যাম্পের এক মাঝি বলেন, রোহিঙ্গাদের অনেকেই মিয়নমারে আছে জিন্মিদশায়। এপাড়ে চলে আসতে চাই তারা।
রোহিঙ্গা প্রতিরোধ ও প্রত্যাবাসন কমিটির সভাপতি উখিয়া উপজেলা চেয়ারম্যান হামিদুল হক চৌধুরী ভিশন নিউজ ২৪ কে বলেন-ভারত, সৌদি আরবসহ বিভিন্ন দেশ থেকে রোহিঙ্গারা ক্যাম্পে আশ্রয় নিচ্ছে। মিয়ানমার থেকে নতুন করে রোহিঙ্গা আসলে উখিয়াবাসীর আÍহত্যা করা ছাড়া কোনো পথ থাকবে না। তিনি অভিযোগ করে বলেন, রোহিঙ্গারা ইয়াবা ব্যবসা, অস্ত্রবাজি ও সন্ত্রাস, ডাকাতিসহ নানা অপরাধে জড়িয়ে স্থানীয়দের জীবন অতিষ্ঠ করে তুলেছে। আমরা স্থানীয়রা বিপদে আছি, আমরা কোথায় যাব। বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্ত সিলগালা করে দেওয়ার দাবি জানান তিনি।
নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সালমা ফেরদৌস ভিশন নিউজ ২৪ কে, বলেন, রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ টেকাতে নাইক্ষ্যংছড়ি সীমান্তে কঠোর নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। আমি স্থানীয় চেয়ারম্যান ও জনপ্রতিনিধিদের কাছে শুনেছি এখনো কোনো মিয়ানমারের নাগরিক অনুপ্রবেশ করতে পারেনি। প্রশাসনের পক্ষ থেকে স্থানীয় এলাকাবাসীদের আতঙ্কিত না হওয়ার জন্য পরামর্শ দেওয়া হয়েছে বলে তিনি জানান।
৩৪বিজিবির নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক উর্দ্ধতন কর্মকর্তা বলেন, তুমব্রু সীমান্তে বিজিবি সদস্যরা সবসময়ই সতর্ক অবস্থানে আছে। নতুন করে কাউকে অনুপ্রবেশ করতে দেওয়া হচ্ছে না। তুমব্রু এলাকায় নতুন করে চেকপোস্ট স্থাপন করা হয়েছে। সীমান্ত এলাকা বিজিবির কড়া নজরদারি রেখেছে।