দেশের বাজারে আরেক দফা বেড়েছে আটা ও ময়দার দাম। গত দুই সপ্তাহের ব্যবধানে খোলা আটার দাম ৫
থেকে ৭ টাকা। আর মাসের ব্যবধানে বেড়েছে ১২-১৪ টাকা। এবং প্যাকেটজাত আটা ৮ থেকে ১২ টাকা
বেড়েছে। খোলা ময়দা ২ থেকে ৫ টাকা আর প্যাকেটজাত ময়দার দাম বেড়েছে ৬ থেকে ৮ টাকা।
গম আমদানি ও বাজারজাতকারী প্রতিষ্ঠানগুলো বলছে, ডলারের দাম বাড়ার কারণে বেড়েছে আমদানি খরচ।
সম্প্রতি জ্বালানি তেলের দাম বাড়ার কারণে সব পর্যায়ে পরিবহন ভাড়ার বাড়তি চাপ পড়েছে। এ ছাড়া
লোডশেডিং ও বিদ্যুৎ সাশ্রয়ে সপ্তাহে এক দিন কারখানা বন্ধ রাখতে হচ্ছে। ফলে পণ্যের উৎপাদন খরচ বেড়েছে
কয়েক গুণ। এসব বিষয়ে হিসাব-নিকাশ করে আটা ও ময়দার দাম আরেক দফা সমন্বয় করতে বাধ্য হয়েছেন
তাঁরা।
কানাডা বাদে বাংলাদেশের গম আমদানির প্রধান উৎস রাশিয়া, ইউক্রেন ও ভারত। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের
কারণে গত এপ্রিল থেকে বিশ্ববাজারে গমের অস্থিরতা শুরু হয়। তখন বাংলাদেশেও গম আমদানি প্রায় বন্ধ হয়ে
যায়। ফলে দেশে দফায় দফায় গমের দাম বাড়তে থাকে। এরপর ভারত রপ্তানি বন্ধ করলে আরও বেসামাল হয়ে
ওঠে আটা ও ময়দার বাজার।
তবে যুদ্ধের কারণে দীর্ঘদিন ইউক্রেন ও রাশিয়া থেকে গম আসা বন্ধ থাকলেও দেশ দুটি থেকে এখন আমদানির
পথ খুলছে। অন্যদিকে, বিশ্ববাজারে গমের দাম কমতে শুরু করেছে। তবে বাংলাদেশে এর কোনো সুফল নেই।
উল্টো দিন দিন বেড়েই চলছে আটা ও ময়দার দাম।
গতকাল রাজধানীর কারওয়ান বাজার, মহাখালী, নাখালপাড়া, তেজকুনিপাড়া, হাতিরপুলসহ কয়েকটি এলাকায়
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, প্রতি কেজি খোলা আটা ৫২ থেকে ৫৫ টাকা, প্যাকেটজাত আটা ৬২ থেকে ৬৩ টাকায়
বিক্রি হচ্ছে। সপ্তাহ দুয়েক আগেও খোলা আটা ৪৫ থেকে ৫০ টাকা এবং প্যাকেটজাত আটা ৫০ থেকে ৫৫ টাকায়
বিক্রি হয়েছে।
অন্যদিকে, খোলা ময়দার কেজি ৬০ থেকে ৬৫ টাকায় বিক্রি হলেও প্যাকেটজাত ময়দার কেজি বিক্রি হচ্ছে ৭৩
থেকে ৭৪ টাকায়। দুই সপ্তাহ আগে খোলা ময়দা ৫৮ থেকে ৬০ টাকা এবং প্যাকেটজাত ময়দা ৬৫ থেকে ৬৮
টাকায় কেনা যেত।
সরকারি সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) দৈনন্দিন বাজার দরের প্রতিবেদনে দেখা গেছে,
এক মাসের ব্যবধানে খোলা আটার দাম ২৩ শতাংশ ও প্যাকেটজাত আটার দাম ১৭ শতাংশের বেশি বেড়েছে।
আর খোলা ময়দার দাম ৮ শতাংশ ও প্যাকেটজাত ময়দার দাম বেড়েছে ২ শতাংশের বেশি। তবে এক বছরের
ব্যবধানে খাদ্যপণ্য দুটির দাম বাড়ার হার আরও বেশি। এ সময় আটার দাম সর্বোচ্চ ৬৬.৬৭ শতাংশ এবং
ময়দার দাম ৫৩.৪১ শতাংশ বেড়েছে।
খাদ্য মন্ত্রণালয় বলছে, এই অর্থবছরের জুলাই থেকে ২৪ আগস্ট পর্যন্ত বেসরকারিভাবে গম আমদানি হয়েছে ৯৭
হাজার ৯০ টন। বর্তমানে দেশে সরকারি গমের মজুদ রয়েছে ১ লাখ ৪৫ হাজার টন।
মুদি বিক্রেতা তুহিন বলেন, পাইকারি পর্যায় থেকে আটা-ময়দার দাম বাড়ানো হচ্ছে। গত এক মাস থেকে আবারও তারা
নতুন রেট ধরে দিচ্ছে। বেশি দামে আনতে হয়, তাই বিক্রিও করতে হচ্ছে বেশি দামে। তবে ক্রেতারা আমাদের সঙ্গে কথা
কাটাকাটি করে।
রাজধানীর শ্যামবাজারের পাইকারি বিক্রেতা মো. শাহাবুদ্দিন বলেন, আমদানিকারক ও কোম্পানি পর্যায়ে আটা-ময়দার
দাম আবারও বাড়ানো হচ্ছে। তারা বলছেন, বিশ্ববাজারে গমের সংকটের সঙ্গে বেড়েছে ডলারের দাম। পাশাপাশি জ্বালানি
তেলের দাম বৃদ্ধির প্রভাব পড়েছে পরিবহণ ভাড়ায়। এ কারণেই তারা আটা-ময়দার দাম বাড়াচ্ছে। তবে বিশ্ববাজারে গমের
দাম কমছে। পাশাপাশি দেশে তাদের কাছে যে পরিমাণে গম আছে তাতে দাম না বাড়ালেও হয়। কিন্তু তারা দাম বাড়িয়ে
বিক্রি করছে।
জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এএইচএম সফিকুজ্জামান বলেন, ‘ব্যবসায়ীদের সচেতনতা
অনেক বড় ব্যাপার। তারা যৌক্তিক লাভ করবে এটাই আমরা চাই। কিন্তু কেউ যদি কারসাজি করে এদের বিরুদ্ধে আমরা
আইনগত ব্যবস্থা নিচ্ছি। আমাদের অভিযান টিম প্রতিনিয়ত তদারকি করছে। কিছুদিন পরপর আমরা ব্যবসায়ী নেতাদের
নিয়ে বসে আলোচনা করছি। পণ্যের দাম নিয়ে কেউ যদি কারসাজি করে তাহলে আমরা ছাড় দিচ্ছি না। প্রয়োজনে কঠোর
শাস্তির আওতায় আনা হবে।’