The news is by your side.

৯৮ কোটি টাকায় বিশ্বকাপ ফুটবলের প্রচারস্বত্ব কিনেছে বিটিভি

0 105

তমা কনস্ট্রাকশন অ্যান্ড কোম্পানি লিমিটেডের কাছ থেকে চলমান বিশ্বকাপ ফুটবলের প্রচারস্বত্ব কিনেছে বাংলাদেশ টেলিভিশন (বিটিভি)। রাষ্ট্রীয় কোষাগার থেকে এ জন্য তমা কনস্ট্রাকশনকে দিতে হচ্ছে ৯৮ কোটি টাকা।

কোনো ধরনের প্রতিযোগিতা ছাড়া তমা কনস্ট্রাকশনের কাছ থেকে যাতে সরাসরি ক্রয়পদ্ধতিতে (ডিপিএম) এ প্রচারস্বত্ব কেনা যায়, এ–বিষয়ক প্রস্তাবে নীতিগত অনুমোদন দিয়েছে অর্থনৈতিক বিষয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি। কমিটির সভাপতি অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল।

বিশ্বকাপ শুরুর চার দিন আগে অর্থমন্ত্রীর সভাপতিত্বে ১৬ নভেম্বর অনুষ্ঠিত অর্থনৈতিক বিষয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠকে তমা কনস্ট্রাকশন থেকে বিটিভির প্রচারস্বত্ব কেনার সিদ্ধান্ত হয়। বৈঠক শেষে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব সাঈদ মাহবুব খান সাংবাদিকদের বলেছিলেন, ‘তমা কনস্ট্রাকশনের কাছ থেকে প্রচারস্বত্ব কেনার বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। আরও পর্যালোচনা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কমিটি।’

বৃহস্পতিবার সাঈদ মাহবুব খানের কাছে মুঠোফোনে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘তমা কনস্ট্রাকশনের কিছু কাগজপত্র বাকি ছিল। তাই সেদিন এভাবে জানানো হয়েছিল। তমা কনস্ট্রাকশনের কাছ থেকে বিটিভি যে প্রচারস্বত্ব কিনবে, সে ব্যাপারে নীতিগত সিদ্ধান্ত ওই দিনই নেওয়া হয়।’

তমা কনস্ট্রাকশনের কাছ থেকে বিটিভির সরাসরি বিশ্বকাপের প্রচারস্বত্ব কেনার প্রস্তাব নীতিগত অনুমোদনের জন্য ১৪ নভেম্বর অর্থনৈতিক বিষয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটিতে পাঠায় তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়। এতে ফিফা থেকে তমা কনস্ট্রাকশন পর্যন্ত আসার ধারাবাহিকতা তুলে ধরা হয়।

বলা হয়, বিশ্বকাপ ফুটবলের প্রচারস্বত্ব ফিফা থেকে প্রথমে কিনে নেয় ভায়াকম ১৮ ইন্ডিয়া। পরে ভায়াকম ১৮ ইন্ডিয়া থেকে তা কিনে নেয় এভিমোর পিটিই লিমিটেড এবং তাদের কাছ থেকে নরওয়েস্টার ওমর কে স্পোর্ট জয়েন্টভেঞ্চার প্রচারস্বত্ব কিনে নেয়। তমা কনস্ট্রাকশন তা কিনেছে নরওয়েস্টার ওমর কে স্পোর্ট জয়েন্টভেঞ্চার থেকে। একই প্রতিষ্ঠান থেকে প্রচারস্বত্ব কিনেছে বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল টি-স্পোর্টসও।

ডিপিএমে তমা থেকে বিটিভি ৯৮ কোটি টাকায় প্রচারস্বত্ব কেনার বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে সারসংক্ষেপ পাঠানো হলে তিনি তাতে স্বাক্ষর করেছেন বলেও উল্লেখ করা হয়।

এত টাকা লাগছে কেন, জানতে চাইলে তমা কনস্ট্রাকশনের কর্ণধার আতাউর রহমান ওরফে মানিক বলেন, ‘এবারের বিশ্বকাপের প্রচারস্বত্ব কিনতে অন্য যেকোনো বারের তুলনায় বেশি ব্যয় করতে হয়েছে। ফলে ৯৮ কোটি টাকা মোটেও বেশি নয়।’

তমা কেন হঠাৎ প্রচারস্বত্ব কেনাবেচার ব্যবসায়ে এল, এমন প্রশ্নের জবাবে আতাউর রহমান বলেন, ‘বিটিভির সঙ্গে ছয় মাস ধরে আলোচনা হয়েছে। আমরা ব্যবসায়ী, ব্যবসা যেখানে আছে, সেখানেই যাই।’

বিটিভির জন্য বিশ্বকাপের প্রচারস্বত্ব কিনতে অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগে প্রস্তাব পাঠিয়েছিল তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়। অর্থ বিভাগ জানায়, অপ্রত্যাশিত ব্যয় ব্যবস্থাপনা খাত থেকে ৫৪ কোটি ১৫ লাখ টাকা দেওয়া যেতে পারে। বাড়তি অর্থের দরকার পড়লে স্পনসরের মাধ্যমে সংগ্রহ করতে পারে প্রশাসনিক মন্ত্রণালয় অর্থাৎ তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়। কিন্তু সে পথে যাওয়া হয়নি।

অর্থ বিভাগের নির্দেশনার মধ্যে আছে, প্রচারস্বত্ব কেনার জন্য যে অর্থ বিনিয়োগ করা হবে, তার সব যেন ফেরত আসে এবং রাজস্ব আদায়ের প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হয়। প্রচারের জন্য অতিরিক্ত যন্ত্রপাতির দরকার হলে তা তমা কনস্ট্রাকশন বহন করবে।

বিশ্বকাপ ফুটবল চলাকালে বিটিভির বিজ্ঞাপন হার যৌক্তিকভাবে নির্ধারণের কথাও বলা হয়। আরও বলা হয়, সরকারের অন্যান্য মন্ত্রণালয়, বিভাগ, দপ্তর ও সংস্থার উন্নয়নমূলক টিভিসি সংগ্রহ ও প্রচারের কার্যক্রম হাতে নিতে হবে।

বিটিভির মহাপরিচালক সোহরাব হোসেন বলেন, ‘তমা কনস্ট্রাকশন বিশ্বকাপ ফুটবলের প্রচারস্বত্ব কিনেছে, আমরা সেটা তমার কাছ থেকে কিনেছি। আর যথেষ্ট সময় পাইনি বলে স্পনসর নেওয়ার পথে যেতে পারিনি।’ প্রস্তুতির অভাবে বিজ্ঞাপন আয়ও এবার তেমন আসবে না বলে জানান তিনি।

অর্থ বিভাগের নির্দেশনা বিটিভিকে জানিয়ে দেয় তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়। বিটিভি তখন মন্ত্রণালয়কে জানায়, বিটিভির কাছে ৫৪ কোটি ১৫ লাখ টাকায় প্রচারস্বত্ব বিক্রিতে তমা কনস্ট্রাকশন রাজি নয়। আর বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, বিভাগ, দপ্তর ও সংস্থার উন্নয়নমূলক টিভিসি ও স্পনসর সংগ্রহ করারও পর্যাপ্ত সময় হাতে নেই। স্পনসর পাওয়া গেলেও এ থেকে যে লাভ হবে, তা সরাসরি সরকারি কোষাগারে জমা হয়ে যাবে।

এরপরই তমা কনস্ট্রাকশনের সঙ্গে দর-কষাকষির মাধ্যমে বিটিভি ৯৮ কোটি টাকায় বিশ্বকাপ ফুটবলের প্রচারস্বত্ব কেনার বিষয়টি চূড়ান্ত করে। ভ্যাট ও কর ছাড়া তমা পাবে ৭১ কোটি ৫৪ লাখ টাকা।

অর্থনৈতিক বিষয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির কাছে নীতিগত অনুমোদন চেয়ে এ প্রস্তাব উপস্থাপন করা হয় দুটি যুক্তিতে। একটি হচ্ছে অর্থ বিভাগের বরাদ্দ ৫৪ কোটি ১৫ লাখ টাকায় প্রচারস্বত্ব বিক্রির বিষয়ে তমা কনস্ট্রাকশনের রাজি না হওয়া; অন্যটি, সময়স্বল্পতার কারণে স্পনসর সংগ্রহের মাধ্যমে বাড়তি অর্থ সংগ্রহে বিটিভির অপারগতা।

পুরো বিষয়টি তুলে ধরলে সেন্ট্রাল প্রকিউরমেন্ট টেকনিক্যাল ইউনিটের (সিপিটিইউ) সাবেক মহাপরিচালক ফারুক হোসেন বলেন, ‘তমা কনস্ট্রাকশন তো এ ধরনের ব্যবসায়ী নয়। ফলে বিটিভির উচিত ছিল সীমিত আকারে হলেও বিশ্বকাপ ফুটবলের প্রচারস্বত্ব কেনার দরপত্র আহ্বান করা। এতে ভালো অঙ্কের অর্থের সাশ্রয় হওয়ার সুযোগ ছিল। এটা তো জনগণের অর্থ।’

 

 

 

Leave A Reply

Your email address will not be published.