The news is by your side.

২০৩৫ সালে ব্লাড ক্যান্সার ৪৮ শতাংশ বাড়ার আশঙ্কা:  বিএসএমএমইউ

0 71

 

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) হেমাটোলজি বিভাগের ১৫১১ নং কক্ষে ভর্তি রবিউল ইসলাম। ঝালকাঠির রাজাপুরের বাসিন্দা রবিউল কাজ করেন গাজীপুরের একটি টেক্সটাইল মিলে। ব্লাড ক্যান্সারের মতো ব্যয়বহুল চিকিৎসা চালিয়ে যাওয়ার মতো সংগতি নেই তাঁর।

রবিউল বলেন, ‘অসুখ তো সারে না।  জমিজমা সব বিক্রি শেষ। এখন আমি নিঃস্ব। কেউ খাবার দিলে খাই, খরচ দিলে চিকিৎসা করি, না দিলে করি না।

বিএসএমএমইউর হেমাটোলজি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. মো. সালাহ্উদ্দীন শাহ্ বলেন, নিম্ন ও নিম্ন মধ্যম আয়ের দেশগুলোতে ব্লাড ক্যান্সার আক্রান্তের হার অনেক বেশি। এর সঠিক কারণ এখনো জানা যায়নি। তবে বিভিন্ন পরীক্ষার মাধমে কয়েকটি কারণ উঠে এসেছে। এর মধ্যে রয়েছে নানা ধরনের তেজস্ক্রিয়তার প্রভাব, রাসায়নিক বর্জ্য, ধূমপান, কৃত্রিম রং, কীটনাশক ও ভাইরাস।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডাব্লিউএইচও) তথ্যের বরাত দিয়ে ডা. মো. সালাহ্উদ্দীন শাহ্ বলেন, ২০৩০ সালের মধ্যে বিশ্বের প্রায় এক কোটি ৩০ লাখ মানুষ ক্যান্সারে মারা যাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

বাংলাদেশে ক্যান্সারে আক্রান্ত রোগীদের মধ্যে ৬.৫ শতাংশের ব্লাড ক্যান্সার। ২০৩৫ সালের দিকে দুই লাখ ৫০ হাজারের মতো নতুন রোগী শনাক্ত হতে পারে। এ সময় এসব রোগী ৪৮ শতাংশ বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

এমন পরিস্থিতিতে আজ দেশে ২৮ মে বিশ্ব ব্লাড ক্যান্সার দিবস পালিত হচ্ছে। দিবসটি উপলক্ষে সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগে নানা কর্মসূচি হাতে নেওয়া হয়েছে। এবারের প্রতিপাদ্য—‘ব্লাড ক্যান্সারের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলুন, সচেতন হোন।’

চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, প্রাথমিক পর্যায়ে রোগ শনাক্ত করা গেলে এবং চিকিৎসা নিলে ৮০ শতাংশ রোগী সেরে ওঠে। তবে আমাদের দেশে বেশির ভাগ রোগী চিকিৎসা নিতে আসে গুরুতর পর্যায়ে। সেরে ওঠা রোগীর সংখ্যা খুব কম।

ব্লাড ক্যান্সারের লক্ষণ প্রসঙ্গে শিশু হেমাটোলজি ও অনকোলজি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. এ টি এম আতিকুর রহমান বলেন, রক্তাল্পতা, ঘন ঘন জ্বর হওয়া, কিছুতেই জ্বর না কমা, ত্বক ফ্যাকাসে হয়ে যাওয়া, ক্লান্তি লাগা, শরীরের বিভিন্ন অংশে রক্তক্ষরণ, চোখের নিচে কালচে দাগ হওয়া, দেহের বিভিন্ন স্থানে, বিশেষ করে হাড়ে ব্যথা অনুভূত হওয়া, গলা ও পেটের বিভিন্ন অঙ্গ যেমন—লিভার, প্লিহা, লিম্ফনোড ইত্যাদির অস্বাভাবিক বৃদ্ধি এ রোগের লক্ষণ। সাধারণত রক্তের সিবিসি এবং পেরিফেরাল ব্লাড ফিল্ম (পিবিএফ) পরীক্ষা করলে রক্তে কোনো পরিবর্তন হয়েছে কি না, তা জানা যায় এবং রোগ শনাক্ত করা যায়।

অধ্যাপক আতিকুর রহমান বলেন, শিশুদের মধ্যে দুই থেকে দশ বছরের মধ্যে ঝুঁকি বেশি। এর চেয়ে নিচেও কিংবা তার চেয়ে বেশি বয়সেরও হতে পারে। দেশে ব্লাড ক্যান্সারে আক্রান্ত রোগীর ৮০ শতাংশই শিশু। বড়দের ক্যান্সার হলে বেশির ভাগ ক্ষেত্রে রোগী মারা যায়। কিন্তু শিশুদের ব্লাড ক্যান্সার হলে সঠিক সময়ে চিকিৎসা দেওয়া হলে প্রায় সবাই সুস্থ হয়ে ওঠে এবং স্বাভাবিক জীবন যাপন করতে পারে।

চিকিৎসকদের তথ্য মতে, ব্লাড ক্যান্সার তিন ধরনের। লিউকেমিয়া, লিম্ফোমা ও মাইলোমা। লিউকেমিয়া রক্ত ও অস্থিমজ্জাকে প্রভাবিত করে, লিম্ফোমা লিম্ফ্যাটিক সিস্টেমকে প্রভাবিত করে এবং মাইলোমা অস্থিমজ্জার প্লাজমা কোষকে প্রভাবিত করে।

এ রোগের সাধারণ চিকিৎসার অপশনগুলোর মধ্যে রয়েছে কেমোথেরাপি, রেডিয়েশন থেরাপি, টার্গেটেড থেরাপি, ইমিউনো থেরাপি, স্টেমসেল ট্রান্সপ্লান্ট এবং কখনো কখনো অস্ত্রোপচার। এসব চিকিৎসা পরিকল্পনা করে থাকেন মেডিক্যাল অনকোলজিস্ট বা হেমাটোলজিস্টরা।

Leave A Reply

Your email address will not be published.