কাঠমান্ডুর দশরথ রঙ্গশালা স্টেডিয়ামে শেষ বাঁশি বাজতেই বাংলাদেশে শুরু হয়ে গেল উৎসব। যে ম্যাচটি নিয়ে গত তিন দিন ধরে তুমুল আলোচনা চলছিল, সেই ম্যাচটি ৩-১ ব্যবধানে জিতে বাংলাদেশকে সাফ চ্যাম্পিয়নশিপের শিরোপা এনে দিলেন মেয়েরা। দেশের ফুটবল আর ক্রিকেটের দুর্দিনে এ এক অসামান্য অর্জন। দক্ষিণ এশিয়ার শ্রেষ্ঠত্বের মুকুট পরে বাংলাদেশ ভাসছে আনন্দের জোয়ারে।
২০১০ সাল থেকে প্রতিটি সাফ চ্যাম্পিয়নশিপে খেলে আসছিল বাংলাদেশ। তবে সেরা সাফল্য ২০১৬ সালের আসরে। সেবার বাঘিনীরা রানার্সআপ হয়ে থেমেছিল। তবে এবারের আসরে অন্যবারের চেয়েও বেশি শক্তিশালী ছিল বাংলাদেশ।
ইতিহাস গড়ার পথে এদিন ম্যাচের শুরুতেই এগিয়ে যায় বাংলাদেশের নারীরা। সাফ নারী চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালে খেলার ১৩তম মিনিটে গোল করে দলকে এগিয়ে দিলেন সুপার সাব শামসুন্নাহার জুনিয়র।
সেমিফাইনালের পর ফাইনালেও বেশিক্ষণ খেলতে পারেননি সিরাত জাহান স্বপ্না। সেমিফাইনাল ম্যাচে ভুটানের বিপক্ষে মাত্র ২ মিনিটের মধ্যে গোল করেছিলেন। ফাইনালে চোটে পড়ে ১৩তম মিনিটের মাথায় মাঠ ছাড়তে বাধ্য হন স্বপ্না।
চোটে থাকা সত্ত্বেও শিরোপা লড়াইয়ের ম্যাচে স্বপ্নার ওপর ভরসা রেখেছিলেন কোচ গোলাম রাব্বানী ছোটন। ফাইনালে নেপালের বিপক্ষে শুরুর একাদশে মাঠে নামিয়েছেন স্বপ্নাকে। কিন্তু দুর্ভাগ্য স্বপ্নার।
ইনজুরির কারণে খেলার ১০ মিনিটের মধ্য দলের অন্যতম সেরা স্ট্রাইকারকে উঠিয়ে শামসুন্নানহার জুনিয়রকে মাঠে নামায় কোচ ছোটন। কোচের এই সিদ্ধান্তকে সঠিক প্রমাণ করতে মাত্র ৪ মিনিট সময় নেন শামসুন্নাহার।
খেলার ১৩তম মিনিটে মণিকা চাকমার ক্রস থেকে অসাধারণ ফিনিশিংয়ে দলকে এগিয়ে দেন শামসুন্নাহার। এরপর দুই দলই আক্রমণ-প্রতি আক্রমণে খেলা জমিয়ে রাখে।
এরমধ্যে নেপাল খেলার ৩৫তম মিনিটে গোলের চেয়ে এক ইঞ্চি দূরে থেকেই থামে। দলটি কর্ণার কিক থেকে বল বাংলাদেশের জালে প্রবেশের চেষ্টা চালালেও ডি-বক্সে জটলায় আটকে যায় সেটি। সেখান থেকে শট করলেও কাদামাখা মাঠে বল লাইন থেকে ফিরে যায়।
তবে এর ৫ মিনিটি পর ম্যাচে বাঘিনীদের দ্বিতীয়বারের মতো এগিয়ে দেন শ্রীমতি কৃষ্ণা রানি সরকার। প্রতিপক্ষের ভুল পাস থেকে বল পেয়ে সেটি জালে জড়াতে কোনো ভুলই করেননি কৃষ্ণা।
প্রথমার্ধে পিছিয়ে থাকা নেপাল দ্বিতীয়ার্ধে আক্রমণাত্মক ফুটবল খেলতে থাকে। একের পর এক আক্রমণে ব্যস্ত করে রাখে বাংলাদেশকে। তবে বাংলাদেশের ডিফেন্স এবং রুপনা চাকমার পাগলাটে গোলকিপিংয়ে ভালোই জবাব দিচ্ছিল বাঘিনীরা।
বিশেষ করে বাংলাদেশের গোলরক্ষক রুপনা ছিলেন অসাধারণ। কখনও গোলপোস্ট ছেড়ে বেরিয়ে আসা কিংবা উড়ন্ত লাফে বলকে বিপদমুক্ত করেই যাচ্ছিলেন। তবুও ম্যাচের ৭০তম মিনিটে ১ গোল হজম করে বসেন তিনিও।
নেপালের আনিতা বাসনেতের গোলে ২-১ ব্যবধান কমায় স্বাগতিকরা। তবে এর ছয় মিনিট পর কাউন্টার অ্যাটাকে গোল করে বসেন কৃষ্ণা। এই বাঘিনীর ম্যাচে নিজের জোড়া গোলে বাংলাদেশ সাফের শিরোপা জিতে ৩-১ ব্যবধানে।