মলদোভার পার্লামেন্টের সামনে হাজার হাজার মানুষ জড়ো হয়েছেন। তারা প্রত্যেকেই তাদের দারিদ্র্য ও হতাশার ব্যক্তিগত গল্প নিয়ে হাজির হয়েছেন। কেউ কেউ কাঁদতে কাঁদতে বলছেন, ‘আমরা হাসির পাত্র, সরকার আমাদের উপহাস করছে।’
নীল রঙের পশমী টুপি পরা অলা বলেন, এখানে চার-পাঁচটি বাচ্চা আছে যাদের আসলে খাওয়ার কিছুই নেই।
মলদোভার প্রেসিডেন্টের মতে, এখানকার বাসিন্দারা তাদের আয়ের ৭০ শতাংশের বেশি ব্যয় করে জ্বালানি বিল দিতে।
অলা জানান, তার পেনশনের অর্ধেক গ্রাস করেছে সরকার।
তিনি বলেন, আমরা যখন সরকারকে নির্বাচিত করেছিলাম, তখন বেতন এবং পেনশন বাড়ানোর প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলো। কিন্তু আমরা এখন পর্যন্ত একটি পয়সাও বাড়াতে দেখিনি।
বেরেনচি দ্ব্যর্থহীন কণ্ঠে বলেন, ‘আমরা ভয় পাই না। কারণ, রাশিয়া যদি মলদোভা দখল করতে চায় তবে তারা অর্ধেক দিনের মধ্যে তা করতে পারবে।’
তিনি আরও বলেন, তিনি রাশিয়াকে স্বাগত জানাবেন।
এটা স্পষ্ট যে, অলা এবং তার বন্ধুদের যখন জিজ্ঞাসা করা হয়েছিলো, তখন তারা বিশ্বাস করে যে-রাশিয়া মলদোভায় অনুপ্রবেশ করতে চায়। এটা তাদের প্রেসিডেন্টেরও ভয়ের বিষয়।
তবে তারা চিৎকার করে বলেন, ‘হ্যা, আমরা চাই রাশিয়া এখানে আসুক, তাদের আসতে দেওয়া হোক। আমরা রাশিয়ার অংশ হতে চাই।’
এর আগে রাশিয়া বিদেশি ‘নাশকতাকারীদের’ ব্যবহার করে অভ্যুত্থানের মাধ্যমে মলদোভার বর্তমান ইইউ-পন্থি সরকারকে ক্ষমতা থেকে উৎখাত করার চক্রান্ত করছে বলে অভিযোগ করেছেন দেশটির প্রেসিডেন্ট মায়া সান্দু।
সান্দুর অভিযোগ, ‘তথাকথিত বিরোধীরা বিক্ষোভ আয়োজনের মাধ্যমে ওই চক্রান্তে জড়িত হয়েছে। তারা সাংবিধানিক সরকারকে উৎখাত করতে চায়।’
গত সপ্তাহে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি বলেছিলেন, মলদোভাকে ধ্বংসের পরিকল্পনা করেছে রাশিয়া। কিয়েভের গোয়ন্দা সংস্থা এ তথ্য পেয়েছে।
ইউক্রেন ও রোমানিয়ার মাঝখানে ছোট্ট দেশ মলদোভা। গত গ্রীষ্মে দেশটি ইউরোপীয় ইউনিয়নের সদস্য হওয়ার আবেদন করে। মলদোভার মোট জনসংখ্যা ২৬ লাখ। ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর সে দেশ থেকে প্রচুর মানুষ প্রাণ বাঁচাতে মলদোভায় আশ্রয় নিয়েছে।
মস্কোপন্থি অঞ্চল ত্রান্সনিসত্রিয়া নিয়েও দুঃশ্চিন্তায় হয়েছে সান্দু সরকার। যেখানে প্রায় দেড় হাজার রুশ সেনা ঘাঁটি গেড়েছে।
সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের অংশ মলদোভা প্রাকৃতিক গ্যাসের জন্য রাশিয়ার উপর নির্ভরশীল। ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর রাশিয়া দেশটির জ্বালানি অবকাঠামোতে হামলা শুরু করলে তার প্রভাব মলদোভাতেও পড়ে। ইউক্রেনের মত মলদোভাতেও লোডশেডিং দেখা দেয়।
বিবিসি জানায়, মলদোভার প্রধান সোস্যালিস্ট ও কমিউনিস্ট বিরোধী জোটের সঙ্গে মস্কোর দৃঢ় সম্পর্ক রয়েছে। ২০১৬ সাল থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত মলদোভা শাসন করা সান্দুর পূর্বসূরি ইগর ডোডনও রাশিয়ার সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক বজায় রেখেছেন। যদিও ১৯৯১ সালে সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের পর মলদোভা রোমানিয়ার সঙ্গে মিত্রতা গভীর করেছে।