The news is by your side.

ম্যাক্সওয়েলের অতিমানবীয় ইনিংসে সেমিফাইনালে অস্ট্রেলিয়া

0 289

মার্কোস স্টইনিস ফিরতেই জয়োৎসব করে ফেলেছিল আফগানিস্তান। ৮৭ রানে ষষ্ঠ উইকেট হারানোর পর ৯১ রানে ৭ উইকেট হারায় অস্ট্রেলিয়া। জিতলে অজিদের সেমিফাইনাল নিশ্চিত। হারলে সমীকরণের মারপ্যাচ, আফগানদের শেষ চারের স্বপ্নেও লাগবে হাওয়া। এমন ম্যাচে ব্যাট হাতে রীতিমতো মাস্তানি করেছেন গ্লেন ম্যাক্সওয়েল। খেলেছেন ক্যারিয়ার সেরা ২০১ রানের বিধ্বংসী ইনিংস। এক পায়ে ভর করে শট খেলেছেন লম্বা সময়, একা হাতে নিশ্চিত করেছেন দলের জয়। তার ব্যাটে ৩ উইকেটে জিতেছে অজিরা। স্বপ্ন ছিনতাই করেছে আফগানদের।

মঙ্গলবার (৭ নভেম্বর) মুম্বাইয়ের ওয়াংখেড়ে স্টেডিয়ামে টস জিতে ব্যাট করতে নেমে নির্ধারিত ৫০ ওভারে ৫ উইকেট হারিয়ে ২৯১ রান তুলেছে আফগানিস্তান। দলের হয়ে সর্বোচ্চ ১২৯ রান করেছেন ইব্রাহিম জাদরান। অজিদের হয়ে ৩৯ রানে ২ উইকেট শিকার করেছেন জশ হ্যাজেলউড। জবাবে ৭ উইকেট হারিয়ে ৪৬ ওভার ৫ বলে জয়ের বন্দরে পৌঁছে যায় অস্ট্রেলিয়া। দলের হয়ে সর্বোচ্চ অপরাজিত ২০১ রান করেছেন ম্যাক্সওয়েল।

২৯২ রানের টার্গেটে খেলতে নেমে শুরুতেই ট্রাভিস হেডকে হারায় অস্ট্রেলিয়া। ডাক খেয়ে ফিরেছেন এই ওপেনার। তিনে নেমে ঝোড়ো শুরু করেন মিচেল মার্শ। তবে খুব বেশি দূর যেতে পারেননি। নাভিনের বলে লেগ বিফোরের ফাঁদে পড়ার আগে ১১ বলে করেছেন ২৪ রান।

মার্শ ফেরার পর আর বেশিক্ষণ টিকতে পারেননি ডেভিড ওয়ার্নারও। এই অভিজ্ঞ ওপেনার উইকেটে এসে সময় নিয়ে থিতু হয়েও ইনিংস বড় করতে পারেননি। সাজঘরে ফেরার আগে ২৯ বলে করেছেন ১৮ রান। মার্কাস স্টইনিশ-জশ ইংলিশরাও রান পাননি। এই দুই ব্যাটার ফিরেছেন দুই অঙ্ক ছোঁয়ার আগেই। তাতে ৯১ রান তুলতেই ৭ উইকেট হারায় অজিরা।

এর পরের গল্পটা কেবলই ম্যাক্সওয়েলের। অষ্টম উইকেটে কামিন্সকে সঙ্গে নিয়ে ২০২ রানের অবিচ্ছিন্ন জুটি গড়েন তিনি। যেখানে মাত্র ১২ রান এসেছে কামিন্সের ব্যাট থেকে। বাকিটা সামাল দিয়েছেন ম্যাক্সওয়েল। সেটাও আবার হ্যামস্টিংয়ের চোট নিয়ে।
অসম্ভব মানসিক জেদ না থাকলে এই ইনিংস খেলা সম্ভব নয়। ম্যাক্সওয়েলের এই ইনিংসকে তাই অতিমানবীয় বললেও কম বলা হয়। আগে ব্যাট করে অনেকেই দাপট দেখিয়েছেন, অনেকেই দাপুটে ইনিংস খেলেছেন। কিন্তু রান তাড়া করতে নেমে, দলের শেষ ভরসাযোগ্য ব্যাটারকে নিয়ে প্রায় একার কাঁধে দলকে জেতানো, এ জিনিস অনেক দিন দেখা যায়নি।
১৯৯৯ সালে এ ভাবেই একটি অসামান্য ইনিংস খেলেছিলেন তৎকালীন অসি অধিনায়ক স্টিভ ওয়া। দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে সুপার নাইনের সেই ম্যাচে ৫৬ রানে তাঁর ক্যাচ ফেলেছিলেন হার্শেল গিবস। পরে স্টিভ বলেছিলেন, ‘ওহে গিবস, তুমি ক্যাচ নয়। বিশ্বকাপটাই ফেলে দিলে।’ এ দিন মুজিবের মিসের পরেও ম্যাক্সওয়েল অক্লেশে বলতে পারেন, ‘ওহে মুজিব, তুমি ক্যাচ নয়, বিশ্বকাপের সেমিফাইনাল খেলার স্বপ্নটাই ফেলে দিলে।’

 

মুম্বইয়ের প্রচণ্ড আর্দ্রতার মধ্যে লম্বা ইনিংস খেলা সহজ নয়। যতই মাঠ ছোট হোক এবং বড় শট খেলা সহজ হোক, দীর্ঘ ক্ষণ একই ছন্দে ইনিংস খেলে যাওয়া বেশ কঠিন ব্যাপার। মানসিক ভাবে আত্মবিশ্বাসের তুঙ্গে থাকলেও শারীরিক ভাবে সমস্যায় পড়ছিলেন ম্যাক্সওয়েল। শতরানের আগেই থেকেই পায়ের পেশিতে টান ধরা শুরু হল। দু’বার মাঠের মধ্যেই শুয়ে পড়লেন। পিঠে, কোমরে চাপ দিয়ে ম্যাক্সওয়েলকে সচল রাখার আপ্রাণ চেষ্টা চালাচ্ছিলেন চিকিৎসকেরা। অন্য কোনও ক্রিকেটার হলে খারাপ কোনও শট খেলে উইকেট দিয়ে আসতেন।

কিন্তু ম্যাক্সওয়েল অন্য ধাতুতে গড়া। নিজের দিনে তাঁকে থামানো কঠিন। শরীর সঙ্গ দিচ্ছে না বলে দৌড়ে রান নেওয়া বন্ধ করে দিলেন। দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে খেলা শুরু করলেন। তাতেও আফগানিস্তান বোলারেরা আটকাতে পারলেন না। অবলীলায় চার-ছক্কা মেরে গেলেন ম্যাক্সওয়েল। এমনকী সুইচ হিটেও চার মেরে দিলেন। শেষ ওভারে ছয়, ছয়, চার এবং ছয় মেরে নিজের দুশো তো পূর্ণ করলেনই, অস্ট্রেলিয়াকেও জয়ের তরী পার করে দিলেন।

Leave A Reply

Your email address will not be published.