ভারতের প্রাচীনতম দল জাতীয় কংগ্রেস এখন অনেকটাই বিপর্যস্ত। দলটির নেতা রাহুল গান্ধী বিভেদ দূর করে দেশকে ঐক্যবদ্ধ করতে ক্ষমতাসীন ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) বিরুদ্ধে তিন হাজার কিলোমিটারের বেশি পথ পাড়ি দেওয়ার লংমার্চ চালিয়ে যাচ্ছেন। এরই মধ্যে ২ হাজার কিলোমিটারেরও বেশি পথ পাড়িও দিয়েছেন দলটির নেতাকর্মীরা। কর্মসূচিতে অংশ নিয়েছেন কংগ্রেস নেত্রী সোনিয়া গান্ধীও।
এখন প্রশ্ন উঠেছে, এসব কর্মসূচির মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে কি আগামী নির্বাচনে পরাজিত করতে পারবে কংগ্রেস? এ ধরনের উদ্যোগকে ইতিবাচকভাবে দেখছেন রাজনৈতিক বিশ্নেষকরা। তাঁদের মতে, এটি বিরোধী রাজনীতির শূন্যতা থেকে দেশকে রক্ষা করবে। জাদুরকাঠি না হলেও, ২০১৪ সাল থেকে কংগ্রেসের টানা অধঃপতন রোধের প্রথম গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপও হতে পারে এই ‘ভারত জোড়ো যাত্রা’।
দক্ষিণাঞ্চলীয় তামিলনাড়ূর কন্যাকুমারীতে গত সেপ্টেম্বর শুরু হওয়া পাঁচ মাসব্যাপী লংমার্চটি আগামী বছরের ফেব্রুয়ারির মধ্যে জম্মু ও কাশ্মীরের রাজধানী শ্রীনগরে গিয়ে শেষ হওয়ার কথা রয়েছে। সম্প্রতি মহারাষ্ট্রে এক সমাবেশে রাহুল গান্ধী বলেন, ভারতবাসীর জন্য একটি বিকল্প দৃষ্টিভঙ্গি আনার চেষ্টা করছেন তিনি। এই কর্মসূচি ক্ষমতাসীন বিজেপিকে ধ্বংস করার ক্ষমতা রাখে বলেও উল্লেখ করেন কংগ্রেস নেতা।
দীর্ঘ এই লংমার্চ দলের সমর্থকদের উজ্জীবিত করলেও সমালোচকরা এর ফলাফল নিয়ে সন্দিহান। কারণ, কংগ্রেস বর্তমানে ভারতের ২৮টি রাজ্যের মধ্যে মাত্র দুটি শাসন করছে, যা এক সময়ের ভারতের সবচেয়ে বড় দল থেকে চরম অধঃপতনের দৃষ্টান্ত বলেও মনে করা হচ্ছে।
রাহুলের এই মিশন দেশকে সঠিক পথে ফেরানোর চেষ্টা বলা হচ্ছে। তবে তা মানতে নারাজ বিজেপি। অবশ্য, বিরোধী অনেকেই এতে যোগ দিয়েছেন। এর মধ্যে, বলিউড অভিনেতা, শিক্ষাবিদ, সমাজকর্মী এমনকি অন্য দলের বিরোধী নেতাও রয়েছেন।
কর্মসূচিকে ঘিরে পথে পথে ব্যানার, ফেস্টুন দেখা গেছে। সংহতি প্রকাশ করেছে যুবক, শিক্ষার্থী, গৃহিণীসহ নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ। ঘৃণা ত্যাগ কর, ভারত এক হও- এই স্লোগান দিচ্ছেন দলের কর্মীরা।
২০১৪ সালে নরেন্দ্র মোদি ও বিজেপিকে ভোট দিয়েছিলেন হায়দরাবাদের এক ব্যবস্থাপনা পরামর্শদাতা। তিনি বলেন, বর্তমান সরকার তাঁকে আশাহত করেছে। তাই তিনি লংমার্চে যোগ দিয়েছেন। মহাত্মা গান্ধীর নাতি তুষার গান্ধী বলেন, উদার, ধর্মনিরপেক্ষ, বৈষম্যহীন ও প্রগতিশীল মূল্যবোধের হারানো ভারতকে পুনরুজ্জীবিত করতেই তিনি এই কর্মসূচিতে যোগ দিয়েছেন।
এখন পর্যন্ত লংমার্চ পাঁচটি রাজ্য অতিক্রম করেছে। যদিও এর খুব একটা প্রচার নেই সরকারপন্থি গণমাধ্যমে। এরই মধ্যে সব রাজ্যেই বড় সমাবেশ করেছে রাহুলের কংগ্রেস। এতে বিপুল মানুষের উপস্থিতিও দেখা গেছে। সাংগঠনিক পুনরুজ্জীবনের দিকে নিয়ে যাচ্ছে এই কর্মসূচি- এমন মত দলের প্রবীণ নেতা জয়রাম রমেশের।
ভোটের পর্যবেক্ষক বেসরকারি সংস্থা সি-ভোটারের জরিপ বলছে, লংমার্চ অতিক্রম করা দক্ষিণের রাজ্যগুলোতে রাহুলের প্রতি মানুষের আস্থা বেড়েছে ৩ থেকে ৯ শতাংশ। তবে উত্তরাঞ্চলে বিজেপির শক্ত অবস্থানে রয়েছে।