তুরস্ক এবং সিরিয়ার সীমান্তবর্তী অঞ্চলে গত সোমবার ৭.৮ মাত্রার ভয়াবহ ভূমিকম্প আঘাত হানে। এতে এ পর্যন্ত নিহতের সংখ্যা ৩৪ হাজার ছাড়িয়ে গেছে। এরমধ্যে তুরস্কে মারা গেছে ২৯ হাজার ৬০৫ জন এবং সিরিয়ায় নিহতের সংখ্যা সাড়ে ৪ হাজার বেশি মানুষ।
তুর্কি এন্টারপ্রাইজ অ্যান্ড বিজনেস কনফেডারেশনের (তুর্কনফেড) বরাত দিয়ে ব্লমবার্গ জানিয়েছে, বিধ্বংসী ভূমিকম্পে তুরস্কের অর্থনৈতিক ক্ষতির পরিমাণ ৮৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলার হতে পারে। যা দেশটির জিডিপির প্রায় ১০ শতাংশ।
তুর্কি ব্যবসায়িক গোষ্ঠীটির অনুমান, গেল ৬ ফেব্রুয়ারির ভূমিকম্পে তুরস্কের আবাসিক ভবনগুলো ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আর্থিক হিসাবে প্রায় ৭০ দশমিক ৮ বিলিয়ন ডলার। এছাড়া জাতীয় আয়ের ক্ষেত্রে আরও ১০ দশমিক ৪ বিলিয়ন ডলার ক্ষতি হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
তুর্কনফেড জানিয়েছে, এ ভূমিকম্পের কারণে দেশটির শ্রমখাতও ক্ষতির মুখে পড়েছে। আর্থিক হিসাবে যা হবে ২ দশমিক ৯ বিলিয়ন ডলার। কারণ শক্তিশালী এ ভূমিকম্প তুরস্কের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের পাশাপাশি প্রতিবেশী দেশ সিরিয়ার ১০টি প্রদেশকে বিপর্যস্ত করেছে। এতে এক কোটি ৩৫ লাখ মানুষ মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
১৯৯৯ সালে ইস্তাম্বুলের কাছে আঘাত হানা ভূমিকম্পের ওপর ভিত্তি করে এ হিসাব করেছে তুর্কনফেড। ওই ভূমিকম্পে দেশটির প্রায় ১৮ হাজার মানুষ নিহত হন। যদিও ৬ ফেব্রুয়ারি আঘাত হানা ভূমিকম্পটি ১৯৯৯ সালের ভূমিকম্পটির তুলনায় অনেক বেশি শক্তিশালী ও বিধ্বংসী ছিল। এতে এখন পর্যন্ত প্রায় ৩২ হাজার মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন। নিখোঁজ রয়েছেন হাজারো মানুষ।
এদিকে বার্কলেস পিএলসিসহ অনেকেই বলছেন, ভূমিকম্পের আর্থিক ক্ষয়ক্ষতি হিসাব করার মোক্ষম সময় এটি নয়। ভূমিকম্পের প্রভাব সঠিকভাবে মূল্যায়ন করতে হলে আরও কিছু সময় অপেক্ষা করতে হবে। কিন্তু তুর্কনফেডের এ গণনা অন্যান্য অর্থনীতিবিদদের এখন পর্যন্ত করা অনুমানকে ছাড়িয়ে গেছে।
তুর্কনফেড বলছে, ভূমিকম্পে তুরস্কের অবকাঠামো, রাস্তাঘাট ও পাওয়ার গ্রিডের পাশাপাশি হাসপাতাল ও স্কুলের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে, যা দেশটির এ বছরের বাজেট ঘাটতিকে জিডিপির ৫ দশমিক ৪ শতাংশের উপরে ঠেলে দিতে পারে। এটি ৩ দশমিক ৫ শতাংশ হবে বলে আগে পূর্বাভাস দিয়েছিল দেশটির সরকার।
ব্লুমবার্গ ইকোনমিক্সের প্রাথমিক গণনা অনুসারে, ভূমিকম্প পরবর্তী পরিস্থিতিতে পুনরুদ্ধার প্রচেষ্টাসহ দুর্যোগ-সম্পর্কিত কর্মকাণ্ডে দেশটির খরচ হতে পারে জিডিপির প্রায় ৫ দশমিক ৫ শতাংশ।
তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোগান জানিয়েছেন, তার সরকার এক বছরের মধ্যে আবাসন পুনর্নির্মাণ কাজ শেষ করবে। যার জন্য প্রাথমিকভাবে প্রায় ১০০ বিলিয়ন লিরা বা ৫ দশমিক ৩ বিলিয়ন ডলার দুর্যোগ ত্রাণ হিসাবে বরাদ্দ করা হয়েছে।