The news is by your side.

ভবন নির্মাণে ছাড়পত্র পেলেও কার্যকারিতা সনদ নেই ৯২ শতাংশ ভবনের

0 41

 

রাজধানীতে ভবন নির্মাণে ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্স থেকে ছাড়পত্র নেওয়া বাধ্যতামূলক। এর পর ফায়ার সেফটি প্ল্যান বাস্তবায়ন করে নিতে হয় কার্যকারিতা সনদ। কিন্তু ভবনে অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা বাস্তবায়নের বিষয়টি নিশ্চিত করে এই সনদ নেন না অধিকাংশ ভবন মালিক। পরে ফায়ার সার্ভিস তাদের সনদ সংগ্রহের নোটিশ দেয়। নোটিশে ছয় মাসের মধ্যে কার্যকারিতা সনদ নিতে বলা হয়। কিন্তু বছরের পর বছর এটি সংগ্রহের আবেদন জমা পড়ে না। আইন অমান্য করা এসব ভবন মালিককে নোটিশ দিয়েই খালাস ফায়ার সার্ভিস।

সংস্থাটির একটি পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, গত চার বছর দুই মাসে ৬ হাজার ২৮৪টি ছাড়পত্র নিয়েছেন ভবন মালিকরা। তবে কার্যকারিতা সনদের জন্য আবেদন পড়েছে মাত্র ১ হাজার ২৮২টি। এর মধ্যে যাচাই-বাছাই শেষে ৫১০টি ভবনকে কার্যকারিতা সনদপত্র দিয়েছে ফায়ার সার্ভিস।

বেইলি রোডের গ্রিন কোজি কটেজ ভবনে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে ৪৬ জনের মৃত্যুর পর নড়েচড়ে বসেছে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলো। একাধিকবার ভবন কর্তৃপক্ষকে দেওয়া ফায়ার সার্ভিসের সতর্কীকরণ নোটিশও সামনে আসছে। আইন অমান্য করার পরও ব্যবস্থা নেয়নি ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্স।

সূত্র জানায়, গত রোববার ফায়ার সার্ভিস জোনের কর্মকর্তা ও সদরদপ্তরের কর্মকর্তাদের সভা হয়। সেখানে ফায়ার সেফটি প্ল্যান বাস্তবায়ন এবং আইন অমান্যকারী ভবন ও প্রতিষ্ঠানগুলোর বিরুদ্ধে অভিযান চালানোর জন্য ম্যাজিস্ট্রেট চাওয়া হয়েছে। এ ছাড়া প্রতিটি ফায়ার জোনকে নির্ধারিত এলাকার আইন অমান্যকারী প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে মামলা করার নির্দেশও দেওয়া হয়েছে।

ফায়ার সার্ভিসের একটি প্রতিবেদনে দেখা যায়, গত দুই মাসে কার্যকারিতা সনদের জন্য আবেদন পড়েছে ১০৯টি। এর মধ্যে ৩০টি সনদ পেয়েছে। ২০২৩ সালে ১ হাজার ১৭৩টি প্রস্তাবিত ভবনের ছাড়পত্র প্রদান করা হয়। এ ছাড়া বিদ্যমান ভবনের ছাড়পত্র দেওয়া হয় ৯৪৭টি। ২০২২ সালে ৯৪৬টি প্রস্তাবিত ও ৯৩৩টি বিদ্যমান ভবন; ২০২১ সালে ৭০৪টি প্রস্তাবিত ও ৫৭৪টি বিদ্যমান এবং ২০২০ সালে ৫৭৭টি প্রস্তাবিত ও ৪৩০টি বিদ্যামান ভবন ছাড়পত্র পায়। এসব ভবনের মধ্যে ২০২৩ সালে কার্যকারিতা সনদের জন্য আবেদন পড়ে মাত্র ৬৩৩টি। তবে এর মধ্যে সনদ পায় ৩৪০টি। এর আগের তিন বছরে ২ হাজার ২২৭টি প্রস্তাবিত এবং ১ হাজার ৯৩৭টি বিদ্যমান ভবনের মধ্যে কার্যকারিতা সনদের জন্য আবেদন পড়ে ৫৪০টি। যার মধ্যে ১৪৪টি ভবনের সনদ প্রদান করে ফায়ার সার্ভিস।

এ বিষয়ে ফায়ার সার্ভিসের পক্ষ থেকে বলা হয়, ভবন নির্মাণের আগে তাদের কাছ থেকে একটি ছাড়পত্র নিতে হয়। তারা সেই ছাড়পত্র প্রদানের সময় কর্তৃপক্ষকে শর্তজুড়ে দেয়। এতে বলা হয়, ভবন নির্মাণের পর বাধ্যতামূলকভাবে কার্যকারিতা সনদ নিতে হবে। কিন্তু কেউ আর নির্ধারিত ফি দিয়ে এই সনদ নেয় না। আইন অমান্য করার অপরাধে এসব প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে মামলা করার এখতিয়ার আছে ফায়ার সার্ভিসের। কিন্তু তারা সেটি করে না; মাঝে মধ্যে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে।

ফায়ার সার্ভিসের ভ্রাম্যমাণ আদালতের একটি প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, সারাদেশে গত দুই মাসে ৪৫টি, ২০২৩ সালে ৮৩টি, ২০২২ সালে ২৬টি ও ২০২১ সালে ছয়টি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে অভিযান চালানো হয়েছে।

অগ্নি প্রতিরোধ ও নির্বাপণ আইন-২০০৩ এর ধারা-২৪ এর (১)-এ বলা রয়েছে, মহাপরিচালক বা তাঁর কাছ থেকে ক্ষমতাপ্রাপ্ত কোনো ব্যক্তি লিখিত অভিযোগ ছাড়া কোনো আদালত এই আইনের অধীন কোনো অপরাধ বিচারের জন্য গ্রহণ করবে না। ওই ধারার (২)-এ আরও বলা হয়েছে, অন্য কোনো আইনে যা কিছুই থাকুক না কেন, এই আইনের অধীন দণ্ডনীয় অপরাধ আমলযোগ্য বা ধর্তব্য অপরাধ হিসেবে গণ্য করা হবে।

২০১৪ সালে আইনের বিধিমালা করা হলেও দেড় মাসের মাথায় একটি ব্যবসায়ী সংগঠনের বাধার মুখে সেই বিধিমালা থেকে সরে আসে সরকার। আইন থাকলেও ফায়ার সার্ভিস আজ পর্যন্ত কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি।

 

Leave A Reply

Your email address will not be published.