The news is by your side.

বাংলাদেশকে  আফগানিস্তানের মতো  জঙ্গি রাষ্ট্রে পরিণত করতে চেয়েছিল তারেক রহমান: শ ম রেজাউল করিম

২০০১- ২০০৬ : দেশে সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদের উত্থান

0 209

নিজস্ব প্রতিবেদক।

 

২০০১ থেকে ২০০৬।  সরকার পরিচালনার দায়িত্বে ছিল;  বিএনপি-জামায়াত জোট। বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় দেশে উত্থান ঘটে উগ্র সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদের। আত্মপ্রকাশ ঘটে-  জেএমবি সহ বিভিন্ন জঙ্গি সংগঠন   ।

দেশের প্রচলিত আইন উপেক্ষা করে জঙ্গিরা আফগানিস্তান স্টাইলে রাষ্ট্র পরিচালনা করার লক্ষ্যে একের পর এক অপতৎপরতা চালায়। নিজস্ব শক্তিমত্তার জানান দিতে হামলা চালায়-  সরকারি, বেসরকারি বিভিন্ন স্থাপনায়।

দিনদিন জঙ্গি তৎপরতা বাড়তে থাকলেও সরকারের ভূমিকা ছিল নীরব দর্শকের। উল্টো তৎকালীন সরকার,  আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে ব্যবহার করে জঙ্গিদের বিভিন্নভাবে সহায়তা করে। বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক, বর্তমানে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী  শ ম রেজাউল করিম একান্ত সাক্ষাৎকারে বলেন- তারেক রহমান, তার মা বেগম খালেদা জিয়া এবং তৎকালীন ক্ষমতাসীন বিএনপি সরকারের লক্ষ্য ছিল – বাংলাদেশকে একটি সাম্প্রদায়িক এবং জঙ্গি রাষ্ট্রে পরিণত করা;  যাতে করে তারা দীর্ঘদিন ক্ষমতায় টিকে থাকতে পারে।

( ভিডিও লিংক )

প্রশ্ন : বাংলাদেশে সাম্প্রদায়িক রাজনীতির সূত্রপাত  কবে এবং কোথায়?

রেজাউল:  একটি উদার, অসাম্প্রদায়িক জাতিরাষ্ট্র বিনির্মাণের লক্ষ্যে একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল বীর বাঙালি।  ছিনিয়ে এনেছিল স্বাধীনতা।  স্বাধীন বাংলাদেশের পথ চলার অন্যতম পাথেয় ছিল- অসাম্প্রদায়িকতা । জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাংলাদেশের সংবিধানের মৌলিক কাঠামোতে ধর্মনিরপেক্ষতা যুক্ত করেন।

৭৫ এ জাতির পিতার নির্মম হত্যাকাণ্ডের পর অসাম্প্রদায়িকতার পথ থেকে সরে যায় বাংলাদেশ। ঘাতক মোশতাক ও জিয়াউর রহমান বাংলাদেশকে কার্যত পূর্ব পাকিস্তানে পরিণত করে। স্বাধীনতা বিরোধীদের রাজনীতিতে প্রতিষ্ঠা করা হয়। সংবিধান সংশোধন করে ধর্মভিত্তিক সংগঠনগুলোর রাজনীতি করার সুযোগ দেয়া হয়।

পাকিস্তানি পাসপোর্ট নিয়ে পালিয়ে থাকা গোলাম আযম,  খান সবুর,  মাওলানা আব্দুল মান্নান,  জয়পুরহাটের আব্দুল আলীম,  মশিউর রহমান যাদু মিয়া থেকে শুরু করে সকল স্বাধীনতা বিরোধীদের উত্থান ঘটে। দেশে সাম্প্রদায়িক রাজনীতির কালো অধ্যায় সূচিত হয়।

পিরোজপুরের কাউখালীতে মাওলানা আব্দুর রহিমের নেতৃত্বে আইবিএল- ইসলামিক ডেমোক্রেটিক লীগ,  নামক সংগঠন টির মাধ্যমে দেশে সাম্প্রদায়িক রাজনীতির আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু হয়।

প্রশ্ন : রাষ্ট্র পরিচালনায় মুক্তিযুদ্ধের আদর্শ এবং বঙ্গবন্ধুর চেতনা ভূলুণ্ঠিত করবার জন্য কে বা কারা দায়ী?

রেজাউল:  অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশকে সাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ পরিণত করার অপচেষ্টা চালায়  জিয়াউর রহমান।  শাহ আজিজকে প্রধানমন্ত্রী, মশিউর রহমান যাদু মিয়াকে সিনিয়র মন্ত্রী,  আব্দুল আলীমকে মন্ত্রী এবং আব্দুর রহমান বিশ্বাসকে রাষ্ট্রপতি করা হয়;  যারা সকলেই স্বাধীনতাবিরোধী ছিলেন।

পরবর্তী সময়ে তারা প্রচলিত আইন, সাংবিধানিক আইন পাশ কাটিয়ে  নিজেদের মতো করে রাষ্ট্র পরিচালনা করেন।

বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের শাসনামলে বাংলাভাই   নামক এক ব্যক্তি ভয়াবহ কর্তৃত্ব স্থাপন করে,  তিনি বিচার করতেন,  তাকে পাহারা দেওয়া হতো ,মহড়া দেওয়া হতো – পুলিশের সাহায্যে। বেশ কয়েকজন মন্ত্রী  তাদের পৃষ্ঠপোষক ছিলেন ।

প্রশ্ন : ২০০৪ সালের  ২১  আগস্ট আওয়ামী লীগের শান্তিপূর্ণ সমাবেশে গ্রেনেড হামলার পেছনে রাজনৈতিক পৃষ্ঠপোষকতা ছিল কিনা?  আপনার অভিমত…

শ ম রেজাউল:   রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় মুফতি হান্নান ,হরকত-উল-জিহাদ নেতা জিন্দাল থেকে শুরু করে বিভিন্ন পর্যায়ের সাম্প্রদায়িক রাজনীতি ভয়ংকরভাবে মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে।  এরই ধারাবাহিকতায় ২০০৪ সালে আওয়ামী লীগের শান্তিপূর্ণ সমাবেশে ভয়াবহ গ্রেনেড হামলা চালিয়ে বঙ্গবন্ধুকন্যা দেশের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যার অপচেষ্টা চালানো হয়।

পরবর্তী সময়ে আদালতের পর্যবেক্ষণ এবং জঙ্গিদের জবানবন্দিতে উঠে আসে বিএনপি-জামাত জোট সরকারের মন্ত্রী থেকে শুরু করে দলের শীর্ষ নেতারা;  এর সঙ্গে প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষভাবে জড়িত ছিল।

প্রশ্ন : ২০০৫ সালে দেশের ৬৩ জেলায় একযোগে বোমা হামলা চালায় জেএমবি।  রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতা কিংবা সহায়তা ছাড়া এ ধরনের হামলা চালানো আদৌ সম্ভব কিনা?

শ ম রেজাউল:   ২০০৫ সালে দেশের  ৬৩ জেলায় একযোগে বোমা হামলা চালায় জেএমবি। তাদের লক্ষ্য ছিল-  প্রচলিত আদালত এবং বিচার ব্যবস্থা ভেঙে দেয়া। জঙ্গিরা ২ জন বিচারককে হত্যা করে। ঝালকাঠির পাবলিক প্রসিকিউটরসহ বেশ কয়েকজন আইনজীবীকে নির্মমভাবে হত্যা করে।

এসকল হত্যা এবং হামলার মধ্য দিয়ে জানান দিতে চেয়েছিল যে , তারা বাংলাদেশকে একটি সাম্প্রদায়িক রাষ্ট্রে পরিণত করতে চায়। তাদের নেটওয়ার্কের বাইরে যদি কেউ থাকতে চায় তাদেরকে এভাবেই প্রতিহত করা হবে।

তৎকালীন বিএনপি-জামাত জোট সরকার জঙ্গী তৎপরতা প্রতিহত করার চেষ্টা করেনি। বরং কৌশলগতভাবে তারা তাদেরকে পৃষ্ঠপোষকতা দিয়েছে। বিএনপি-জামাত জোট সরকার চেয়েছিল- দেশে  সাম্প্রদায়িক রাজনীতি প্রতিষ্ঠিত হোক।

সরকারের গ্রিন সিগন্যাল না থাকলে এই ধরনের ন্যাক্কারজনক এবং ভয়াবহ ঘটনা ঘটতে পারত না।

প্রশ্ন :  বিভিন্ন মামলায় দণ্ডিত জঙ্গিদের আদালতে দেয়া জবানবন্দিতে উঠে আসে- দেশে সন্ত্রাসবাদ ও জঙ্গি হামলার নেপথ্যে তারেক রহমানের সম্পৃক্ততার কথা। বিষয়টিকে আপনি কিভাবে দেখছেন?

শ ম রেজাউল:   মুফতি হান্নান, মাওলানা তাজউদ্দিন ও তাদের সহযোগীদের  ১৬৪ ধারায় দেয়া  জবানবন্দি  এবং তদন্ত কর্মকর্তার কাছে দেয়া তথ্যে দেখা যায়- তারা সরাসরি তারেক রহমানের সিগন্যাল পেয়েছিল। হামলাকারীদের মধ্যে তৎকালীন সরকারের একজন মন্ত্রীর আপন ভাই ছিল।

তারেক রহমান নিজেও চেয়েছিলেন-  পাকিস্তানের আইএসআই এবং পৃথিবীর অন্যান্য জায়গায় যে সকল সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠী আছে তাদের সাহায্য নিয়ে বাংলাদেশকে আফগানিস্তান স্টাইলে এস্টাবলিশ করা।

তারেক রহমানের লক্ষ্য ছিল-   এরকম রাজনীতি প্রতিষ্ঠিত হলে আজীবন তারা এই সুবিধা নিতে পারবেন।

অপরাধ বিষয়ক বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সমীক্ষা এবং জার্নালে প্রকাশিত নিবন্ধে উঠে আসে-  বাংলাদেশের উগ্র সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদের উত্থানের নেপথ্যে  তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া,  তার পুত্র তারেক রহমান এবং বিএনপি’র শীর্ষ নেতারা প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষভাবে জড়িত ছিল।

 

Leave A Reply

Your email address will not be published.