বাংলাদেশে নবনিযুক্ত চীনা রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েন বলেছেন, বাংলাদেশে এসে কাজ করার সুযোগ পেয়ে গর্ববোধ করছি। বাংলাদেশের সমাজের প্রাণশক্তি অনুভব করেছি। এ দেশের অসীম সম্ভাবনা রয়েছে, যা চীন-বাংলাদেশ সহযোগিতার ক্ষেত্রে বিশাল সুযোগ সৃষ্টি করবে। চীন ও বাংলাদেশের বন্ধুত্ব জনগণের আন্তরিক আগ্রহের বহিঃপ্রকাশ। দুই দেশের সম্পর্কের সুন্দর ভবিষ্যতের প্রতি আমার পূর্ণ আস্থা রয়েছে।
সম্প্রতি চায়না মিডিয়া গ্রুপের (সিএমজি) বাংলা বিভাগকে একটি একান্ত সাক্ষাৎকার দেন ইয়াও ওয়েন। সাক্ষাৎকারে দুই দেশের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের নিয়ে এসব কথা বলেন তিনি।
চীন ও বাংলাদেশের সম্পর্ক নিয়ে তার দাবি, চীন ও বাংলাদেশের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক বর্তমানে দ্রুতগতিতে বিকশিত হচ্ছে। তিনটি চাবিকাঠি শব্দ দিয়ে চীন-বাংলাদেশ সম্পর্ককে বর্ণনা করতে চান তিনি।
ইয়াও ওয়েন জানান, প্রথম শব্দ হচ্ছে বন্ধুত্ব। মৈত্রীর মাধ্যমে দুই দেশের প্রবীণ নেতাদের হাতে এ সম্পর্ক সৃষ্টি হয়েছে এবং তা সবসময় দুই দেশের শীর্ষনেতাদের যত্ন ও নির্দেশনা পেয়েছে। দ্বিতীয় শব্দ হচ্ছে সহযোগিতা। সর্বাত্মক ও বিস্তৃত ক্ষেত্রের সহযোগিতা বরাবরই চীন-বাংলাদেশ সম্পর্কের ভিত্তি ও নিশ্চয়তা। বাংলাদেশ সর্বপ্রথম ‘ওয়ান বেল্ট ওয়ান রোড’ উদ্যোগকে সমর্থন দিয়েছে। চীন ও বাংলাদেশের যৌথ প্রচেষ্টায় ‘ওয়ান বেল্ট ওয়ান রোড’ বিষয়ক অবকাঠামো নির্মাণকাজের ইতিবাচক পরিবর্তন ঘটছে, আন্তঃসংযোগের মান উন্নত হয়েছে। আর তৃতীয় শব্দ হচ্ছে সম্ভাবনা। আমার বিশ্বাস, চীন ও বাংলাদেশের সম্পর্ক নিঃসন্দেহে সহযোগিতার ক্ষেত্রে আরও বেশি চালিকাশক্তির জোগান দেবে এবং ব্যাপক সহযোগিতার সম্ভাবনা সৃষ্টি করবে।
চীন ও বাংলাদেশের মধ্যে বিনিময়ের নতুনত্ব প্রসঙ্গে তিনি জানান, চীন বৈজ্ঞানিক বিচারে সঠিক সিদ্ধান্ত নিয়েছে। চীনে প্রবেশের জন্য এখন থেকে কেবল ভিসা, বিমান টিকিট আর রওনা হওয়ার ৪৮ ঘণ্টা আগে করা নিউক্লিক অ্যাসিড টেস্টের নেগেটিভ রিপোর্ট দেখালেই হবে। এতে দুই দেশের সরকার, ব্যবসায়ী আর জনসাধারণের যাতায়াত বাড়বে; বিভিন্ন ক্ষেত্রের বিনিময় ও সহযোগিতা গভীরতর হবে।
চীনা রাষ্ট্রদূতের দাবি, চীন আনন্দের সঙ্গে বাংলাদেশকে ‘ভিশন ২০৪১’ আর ‘সোনার বাংলা’ স্বপ্ন বাস্তবায়নের দিকে এগিয়ে যেতে দেখছে। ভবিষ্যতেও বাংলাদেশের সঙ্গে হাতে হাত রেখে চীন সামনে এগিয়ে যাবে ও সহযোগিতার মাধ্যমে উভয় পক্ষের জন্যকল্যাণ বয়ে আনবে।
ইয়াও ওয়েনের মতে, গত সাত বছরে ‘ওয়ান বেল্ট ওয়ান রোড’ বাংলাদেশের অর্থনীতির জন্য নতুন চালিকাশক্তি জুগিয়েছে, জনগণের জীবিকা উন্নয়নের ক্ষেত্রে অবদান রেখেছে। ২০২১ সালে বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী প্রদর্শনী কেন্দ্র হস্তান্তর করা হয়েছে, যা এদেশের বৃহত্তম প্রদর্শনীকেন্দ্র। ২০২২ সালে কয়লাচালিত পায়রা বিদ্যুৎ কেন্দ্র চালু হয়েছে, এতে এদেশের সর্বত্র বিদ্যুৎ পৌঁছে গেছে। এ ছাড়া দূষিত পানি শোধনাগারে দক্ষিণ এশিয়ার বৃহত্তম পানি শোধনাগার চালু হয়েছে। এর সঙ্গে নির্মাণকাজ শেষে পদ্মা সেতু উন্মুক্ত হয়েছে। প্রত্যাশা করা হচ্ছে, দেশটির জনগণের ‘স্বপ্নের সেতু’ জিডিপি প্রবৃদ্ধিতে ১ দশমিক ২৩ শতাংশ পয়েন্ট অবদান রাখবে প্রতিবছর।
তিনি জানান, চলতি বছর কর্ণফুলী নদীর খননকাজ, টেলিযোগাযোগ নেট আধুনিকীকরণ প্রকল্প, আইসলাম কয়লাচালিত বিদ্যুৎ কেন্দ্র, সিঙ্গেল-পয়েন্ট মুরিং এবং ডাবল-লাইন পাইপলাইন প্রকল্প, রাজশাহীতে পৃষ্ঠতল পানি শোধনাগার প্রকল্প এবং পদ্মা সেতুর রেলপথ সংযোগ লাইনের প্রথম অংশ উন্মুক্ত হবে। আমার বিশ্বাস, ২০২৩ সালে চীন ও বাংলাদেশের ‘ওয়ান বেল্ট ওয়ান রোড’ বিষয়ক সহযোগিতা থেকে অনেক সাফল্য অর্জিত হবে।
বাংলাদেশে ভবিষ্যতে রোহিঙ্গা ইস্যুতে চীনের ভূমিকা প্রসঙ্গে চীনা রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েন জানান, চীন রোহিঙ্গা ইস্যুতে বাংলাদেশের অবস্থান বুঝতে পারে। এ বিষয়ে চীন সবসময় ন্যায়সঙ্গত মনোভাব নিয়ে কাজ করে আসছে। রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনের জন্য চীন পরিবেশ সৃষ্টি করার যথাসাধ্য চেষ্টা করে আসছে, যা বাংলাদেশ ও আন্তর্জাতিক সমাজ দেখছে। আগে দুজন চীনা রাষ্ট্রদূতও রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনের জন্য অবিরাম প্রচেষ্টা চালিয়েছেন। তারা একাধিকবার রোহিঙ্গা শিবির পরিদর্শনও করেছেন।
চীন ও বাংলাদেশের সম্পর্কোন্নয়ন প্রসঙ্গে তার দাবি, দুই দেশের নেতৃবৃন্দ আর বিভিন্ন স্তরের ব্যক্তিবর্গের সঙ্গে কৌশলগত যোগাযোগ জোরদার করব; পার্টি, সংসদ, থিঙ্ক ট্যাংক, গণমাধ্যমগুলোর সঙ্গে সহযোগিতা বৃদ্ধি করব, দেশ প্রশাসনের অভিজ্ঞতা বিনিময় করব। আমার বিশ্বাস, আমাদের যৌথ প্রচেষ্টায়, চীন ও বাংলাদেশের সম্পর্কের আরও উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ সৃষ্টি হবে।