The news is by your side.

নিজের অসহায়ত্ব প্রকাশ করে নিজের নকশা করা ভবনেই যেতে নিষেধ করলেন স্থপতি

0 62

 

গাউসিয়া টুইন পিক। বাইরে থেকে যে কারও নজর কাড়বে দৃষ্টিনন্দন এ ভবন। রাজধানীর ধানমন্ডির সাতমসজিদ রোডে ফেয়ার ফেস কংক্রিট ও গ্লাসে আবৃত বহুতল ভবনটির ডিজাইনার প্রখ্যাত স্থপতি মুস্তাফা খালিদ পলাশের প্রতিষ্ঠান ভিসতারা আর্কিটেক্টস। খোদ তিনিই এই ভবনটিতে সাধারণ মানুষকে না যাওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। প্রকাশ করেছেন নিজের অসহায়ত্ব। বলেছেন- ভবনমালিক ও ব্যবহারকারী প্রতিষ্ঠানগুলো তার নির্দেশনা না মেনেই স্থাপনাটিকে অনিরাপদভাবে ব্যবহার করছেন, যা মানুষের জানমালের জন্য হুমকিস্বরূপ।

নিজের নিরাপত্তার কথা চিন্তা করে কেউ যেন সেখানে না যান ফেসবুকে এক পোস্টে সেই বার্তা দিয়েছেন তিনি। পাশাপাশি বিষয়টি স্থানীয় ফায়ার সার্ভিসের স্টেশন মাস্টারকেও জানিয়েছেন। বৃহস্পতিবার রাতে বেইলি রোডের কোজি গ্রিন কটেজ বহুতল ভবনে ৪৬ জনের মৃত্যুর ঘটনায় যখন মানুষের মাঝে উদ্বেগ ও ক্ষোভ বিরাজ করছে সেই সময় দেশের অগ্নিনিরাপত্তার ঝুঁকি ও এ নিয়ে উদাসীনতার চিত্র তুলে ধরলেন তিনি।

স্থপতি মুস্তফা খালিদ পলাশ শুক্রবার ফেসবুকে এক স্ট্যাটাসে সকলের উদ্দেশে বলেছেন, ‘PLEASE DON’T USE THIS BUILDING FOR YOUR OWN SAFETY’  লিখেছেন, প্রতিনিয়ত এই ভবনটি নিয়ে সত্যি উৎকণ্ঠায় থাকি। নকশা ও অনুমোদন বাণিজ্যিক ভবন হিসেবে হলেও এর ব্যবহারে বড় রকমের ব্যত্যয় ঘটিয়ে সার্বিকভাবে একে সমূহ অগ্নিঝুকিপূর্ণ রেস্তোরাঁ ভবনে রূপান্তর করা হয়েছে। স্থপতি হিসেবে শেষ যে ক্ষমতাটুকু রাজউক দিয়েছে অকুপেন্সি সার্টিফিকেটের জন্য- সেই রিপোর্ট স্বাক্ষর করার তোয়াক্কাও এখানে করা হয়নি। অকুপেন্সি সার্টিফিকেট না নিয়েই চলছে দেদার ব্যবসা। যেহেতু ভবনটি নির্দিষ্ট ব্যবহারের ব্যত্যয় করে ব্যবহার শুরু হয়েছে তাই স্থপতি হিসেবে রিপোর্ট ও এজবিল্ট ড্রইং প্রদান থেকে বিরত থেকে জমির মালিক ও ডেভেলপারকে বারবার লিখিত বার্তায় এ বিষয়ে সতর্ক করা হলেও কোনো ফলপ্রসূ অগ্রগতি হয়নি। অর্থের কাছে আমার আহাজারি বারবারই নিস্ফল হচ্ছে। ডেভেলপারকে জিজ্ঞেস করলে উত্তর আসে তাদের নাকি ফায়ার লাইসেন্স আছে। কি করে সম্ভব সেটা? কপি চাইলে নিরুত্তর। জমির মালিককে বললে উত্তর- ভাড়া হয় না তাই আর কি করা! তাদের এও জানানো হয় যে, সঠিক ব্যবস্থা গ্রহণ না করলে ভবনের স্থপতি হিসেবে এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বরাবর অভিযোগ করা হবে।’

মুস্তফা খালিদ পলাশ আরও লিখেছেন, ‘উদ্ভট সব যুক্তির বেড়াজালে একজন স্থপতি হিসেবে নিজেকে অসহায় না ভেবে গত মাসে স্থানীয় ফায়ার সার্ভিস বিভাগের স্টেশন মাস্টারকে এক বার্তায় এ বিষয়ে অবগত করলে তিনি বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে দেখবেন বলে জানান। আমার ঘনিষ্ট ফায়ার ডিপার্টমেন্টের প্রাক্তন ডিজিকেও তার ক্ষমতা প্রয়োগের জন্য অনুরোধ করলে তিনি সাধ্যমতো তা করবেন বলে জানান। আজ আবার স্টেশন মাস্টারকে বিস্তারিত তথ্য লিখলাম। দেখা যাক কি হয়। যতদূর জানি- এ ভবনের অগ্নিনিরাপত্তার অবস্থা ক্রমান্বয়ে ভয়াবহভাবে অবনমিত করা হয়েছে। ফায়ার ডোর খুলে ফেলা হয়েছে, ফায়ার স্টেয়ার স্টোররুম হয়েছে, যত্রতত্র গ্যাস সিলিন্ডার রাখা হয়েছে।’

মুস্তাফা খালিদ পলাশ একসময় বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) স্থাপত্য বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ছিলেন। তিনি স্থাপত্যবিষয়ক ম্যাগাজিন ‘ডট’-এর সম্পাদক। চিত্রশিল্পী হিসেবেও তিনি সমাদৃত। রাজধানীর বেশ কয়েকটি বড় বড় ভবন ও স্থাপনার স্থপতি তিনি। উইকিপিডিয়ার তথ্য মতে, গ্রামীণফোন দপ্তর, বাংলালিংক দপ্তর, রবি দপ্তর উত্তরা মোটরস লিমিটেড, বসুন্ধরা সিটি, বসুন্ধরা কনভেনশন সেন্টার, হোটেল দ্য ওয়েস্টিন ঢাকা, ল্যাব এইড কার্ডিয়াক হাসপাতাল,স্টেট ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ এর ভবন ও স্থাপনার স্থপতি তিনি।

 

Leave A Reply

Your email address will not be published.