The news is by your side.

দেশে চালু হচ্ছে মোবাইল ফোনের মাধ্যমে অবস্থান শনাক্ত করার প্রযুক্তি-জিও লোকেশন

0 137

 

সংসদ নির্বাচনের আগে হঠাৎ করেই আলোচনায় এসেছে মোবাইল ফোনের মাধ্যমে মানুষের জিও লোকেশন বা অবস্থান শনাক্ত করার প্রযুক্তি, যা আগামী মাস থেকেই মোবাইল অপারেটরদের মাধ্যমে কার্যকর হওয়ার কথা।

এটি চালু হলে অপারেটরদের সহায়তা নিয়ে কিংবা সহায়তা ছাড়াই একজন বা এক সঙ্গে অনেক মানুষের সুনির্দিষ্ট অবস্থান শনাক্ত করতে পারবে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী বা নজরদারির সঙ্গে জড়িত সংস্থাগুলো। অর্থাৎ লোকটি ঠিক কোথায় আছেন এটি চিহ্নিত করা সম্ভব হবে।

আবার এ প্রযুক্তির সাথে আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স বা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সমন্বয় করে ব্যক্তির জিও লোকেশন ছাড়াও এক সঙ্গে বহু মানুষের গতিবিধি বা মুভমেন্ট সম্পর্কেও জানতে পারবে নজরদারিতে জড়িত সংস্থাগুলো।

এজন্য মোবাইল অপারেটরদের নিজ খরচে নতুন সফটওয়্যার ও প্রয়োজনীয় উপকরণ সংযোজন করতে চাপ দেয়া হলেও বিটিআরসি কিংবা সরকারের ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের এ বিষয়ে কোন সম্পৃক্ততা নেই বলে জানিয়েছেন ওই মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী মোস্তফা জব্বার।

২০২২ সালের ১৭ মার্চ ফ্রান্সের সংবাদমাধ্যম ইন্টেলিজেন্স অনলাইন এক প্রতিবেদনে জানায়, বাংলাদেশ ইন্টারনেটভিত্তিক যোগাযোগমাধ্যম টেলিগ্রামে আড়ি পাতার প্রযুক্তি কিনেছে। এর আগে ২০১৫ সালে মুঠোফোনে আড়ি পাতা ও নজরদারির জন্য বাংলাদেশের কেনা সরঞ্জাম মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগে আটকে দিয়েছিল সুইজারল্যান্ড।

নতুন এই প্রযুক্তির আনুষ্ঠানিক নাম ইন্টিগ্রেটেড ল’ফুল ইন্টারসেপশন সিস্টেম। মূলত আড়িপাতা বা নজরদারির জন্য এটি একটি সমন্বিত প্রচেষ্টা, যাতে ব্যক্তির অবস্থান চিহ্নিত করতে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সাথে জড়িত থাকবে টেলিকম সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানগুলোও।

 

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান চলতি বছরের জানুয়ারিতে জাতীয় সংসদে প্রশ্নোত্তর পর্বে জানিয়েছিলেন, সরকার একটি ইন্টিগ্রেটেড ল’ফুল ইন্টারসেপশন সিস্টেম বা সমন্বিত আইনসম্মত আড়িপাতা পদ্ধতি চালু করতে যাচ্ছে।

তখন তিনি বলেছিলেন, ইন্টারনেটে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম মনিটরিংয়ের মাধ্যমে দেশ ও সরকার বিরোধী কার্যক্রম বন্ধে এনটিএমসিতে (ন্যাশনাল টেলিকমিউনিকেশন মনিটরিং সেন্টার) ওপেন সোর্স ইন্টেলিজেন্স টেকনোলজির (ওএসআইএনটি) মতো আধুনিক প্রযুক্তি সংযোজিত হয়েছে। একই সঙ্গে একটি ইন্টিগ্রেটেড ল’ফুল ইন্টারসেপশন সিস্টেম চালুর উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।

সরকারি একটি চিঠি থেকে জানা যাচ্ছে নজরদারির এ ব্যবস্থায় মোবাইল অপারেটররা ছাড়াও ইন্টারনেট সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান (আইএসপি), ইন্টারন্যাশনাল ইন্টারনেট গেটওয়ে (আইআইজি) প্রতিষ্ঠান এবং ন্যাশনাল ইন্টারনেট এক্সচেঞ্জ (এনআইএক্স) এর মতো সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানগুলো সরকারি সংস্থার সঙ্গে সংযুক্ত থাকবে।

আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এবং গোয়েন্দা সংস্থাগুলো অবশ্য টেলিকম অপারেটরদের কাছ থেকেই তাদের গ্রাহকদের জিও লোকেশন বা সুনির্দিষ্ট ব্যক্তি অবস্থান সম্পর্কিত তথ্য পাবে। আবার সরকারি সংস্থা চাইলে সরাসরি অপারেটরদের ডাটাবেজে ঢুকেও কোন ব্যক্তির বিষয়ে নজরদারি করতে সক্ষম হবে।

প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ সুমন আহমেদ সাবির অবশ্য বলছেন, নজরদারির এই প্রযুক্তি বাংলাদেশে নতুন হলেও বিশ্বে অনেক পুরনো। তার মতে একজন গ্রাহকের মোবাইল ফোনটি একই সাথে ২/৩ বা আরও বেশি কাছাকাছি টাওয়ার থেকে সিগন্যাল পায় এবং এর মধ্যে যেটি সবচেয়ে শক্তিশালী তার মাধ্যমেই সে অন্যের সাথে যোগাযোগ করতে সক্ষম হয়। এখানে ‘একটি ট্রায়াংগুলেশন মেথড’ ব্যবহার করে বিভিন্ন উপকরণের সহায়তায় ওই মোবাইল ফোনটির সুনির্দিষ্ট অবস্থান চিহ্নিত করা হবে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন উদ্বেগের কারণ হলো, অপব্যবহারের আশঙ্কা। বিশেষ করে সামনে নির্বাচন ও রাজনৈতিক পরিস্থিতি বিবেচনায় এটি বিরোধীদের ওপর দমন পীড়নে ব্যবহারের সুযোগ তৈরি হতে পারে।

কারণ কোন সংস্থা যদি মনে করে তারা বিশ হাজার ফোন নম্বরের অবস্থান ও গতিবিধি সম্পর্কে একসাথে জানতে চায়। সেটি এই পদ্ধতিতে সম্ভব হবে। ওই বিশ হাজার নম্বরবাহী ফোন কোথা থেকে কোথায় যাচ্ছে সেটিও শনাক্ত করা সম্ভব হবে নতুন ব্যবস্থার মাধ্যমে।

ফলে কেউ যদি মনে করে সারাদেশ থেকে তার নেতাকর্মী ও সমর্থকদের ঢাকায় এনে প্রতিবাদ করবে তাহলে নতুন প্রযুক্তির মাধ্যমে সহজেই জানা সম্ভব হবে কারা কীভাবে ঢাকায় আসছে এবং তারা ঠিক কে কোথায় আছে। মালয়েশিয়ার ইউনিভার্সিটি অব মালয়ার আইন ও উদীয়মান প্রযুক্তি বিভাগের শিক্ষক মুহাম্মদ এরশাদুল করিম বলছেন উদ্বেগের জায়গাটা এখানেই।

তিনি বলেন, ধরুন দশ লাখ লোক ঢাকার বাইরে গেলো কিংবা বাইরে থেকে ঢাকায় আসবে- তাদের প্রত্যেকের স্পেসিফিক অবস্থান চিহ্নিত করা সম্ভব হবে। রাষ্ট্রের নিরাপত্তার জন্য সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ওপর ভিত্তি করে আদালতের অনুমতি নিয়ে কারও ওপর নজরদারি করা যায়। কিন্তু এমন গণহারে নজরদারি আপত্তিকর ও মানবাধিকার লঙ্ঘন।

সেবাদানকারীরা বলছেন, উন্নত বিশ্বে মুঠোফোন ব্যবহারকারী ব্যক্তি সুনির্দিষ্টভাবে কোথায় অবস্থান করছেন, তার উপাত্ত ব্যবহার করা হয় জরুরি সেবাদানের ক্ষেত্রে। ব্যক্তির নাম ও পরিচয় ব্যবহারকারীরা জানতে পারেন না।

 

 

Leave A Reply

Your email address will not be published.