The news is by your side.

দেশে কোটিপতি ১ লাখ ১৩ হাজার ৫৮৬ ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান ,  এক বছরে বেড়েছে ৭ হাজার

0 126

 

দেশে বাড়ছে কোটিপতির সংখ্যা। এক বছরের ব্যবধানে নতুন করে সাত হাজারের বেশি কোটি টাকার ব্যাংক হিসাব বেড়েছে।

ব্যাংক হিসাবে (অ্যাকাউন্ট) কোটি টাকার বেশি আছে, এমন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা এখন ১ লাখ ১৩ হাজার ৫৮৬। এক বছর আগে ২০২২ সালের সেপ্টেম্বর শেষে কোটি টাকার এই হিসাব ছিল ১ লাখ ছয় হাজার ৫২০টি। বছরের ব্যবধানে কোটি টাকার হিসাব বেড়েছে সাত হাজার ৬৬টি। তিন মাসে এ রকম হিসাব বেড়েছে ৩২টি।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ প্রতিবেদনে এই তথ্য উঠে এসেছে। ২০০৬ সালে দেশে কোটিপতির সংখ্যা ছিল সাড়ে আট হাজার। এই হিসাবে গত ১৬ বছরে কোটিপতি বেড়েছে ১ লাখ পাঁচ হাজার জন।

পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউট অব বাংলাদেশের (পিআরআইবি) নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর ব‌লেন, যখন মূল্যস্ফীতি বাড়ছে সেই সময়ে কোটিপতি বাড়ার মানে হচ্ছে টাকা কিছু মানুষের হাতে বন্দি।

মূল্যস্ফীতির এই সময়ে কিছু মানুষ ধনী হচ্ছে। দেশের অর্থনীতি স্বাভাবিক থাকলে এটা হওয়ার কথা নয়। কারণ সংক‌টের কার‌ণে এখন আমান‌তের প্রবৃ‌দ্ধি অনেক কম। এর মা‌নে মানুষ এখন ব্যাংকে টাকা কম রাখ‌ছে। কোটিপতিরাও কম রাখ‌ছে।

ব্যাংকে আমান‌তের সুদহার কম, ব্যাং‌কে টাকা রাখ‌লে ট্যাক্স কা‌টে। এর মধ্যেও কোটি টাকার হিসাবধারীর সংখ্যা বেড়ে যাওয়া মানে সম্পদ আছে মুষ্টিমেয় মানুষের হাতে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ব্যাংক খাতে মোট আমানতকারীর সংখ্যা ১৪ কোটি ৯৭ লাখ ৭০ হাজার ৬৮৪। এসব হিসাবে জমা আছে ১৭ লাখ ১৩ হাজার ১৩৪ কোটি টাকা। এর মধ্যে কোটি টাকার হিসাবে জমা আছে সাত লাখ ২৫ হাজার ৫৫০ কোটি টাকা। ব্যাংক খাতের মোট আমানতের ৪২.৩৫ শতাংশ কোটি টাকার হিসাবধারীদের।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, ২০২৩ সালের সেপ্টেম্বরের হিসাব অনুযায়ী, এক কোটি এক টাকা থেকে পাঁচ কোটি টাকার হিসাবের সংখ্যা ৮৯ হাজার ৭৬০, যাতে জমা এক লাখ ৮৭ হাজার ৩২৭ কোটি টাকা। পাঁচ কোটি এক টাকা থেকে ১০ কোটি টাকার হিসাবের সংখ্যা ১২ হাজার ২২১, যাতে জমা ৮৬ হাজার ৩১২ কোটি টাকা। এ ছাড়া ১০ কোটি থেকে ১৫ কোটি টাকার হিসাব রয়েছে চার হাজার ৭৪টি, ১৫ কোটি থেকে ২০ কোটির মধ্যে এক হাজার ৯৬৮টি, ২০ কোটি থেকে ২৫ কোটির মধ্যে এক হাজার ২৭৪টি, ২৫ কোটি থেকে ৩০ কোটির মধ্যে রয়েছে ৯১৯টি।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তারা বলেছেন, কোটি টাকার হিসাব মানেই কোটিপতি ব্যক্তির হিসাব নয়। কারণ ব্যাংকে এক কোটি টাকার বেশি অর্থ রাখার তালিকায় ব্যক্তি ছাড়াও অনেক প্রতিষ্ঠান রয়েছে। আবার ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান কতটি ব্যাংক হিসাব খুলতে পারবে, তার কোনো নির্দিষ্ট সীমা নেই। ফলে এক প্রতিষ্ঠান বা ব্যক্তির একাধিক হিসাবও রয়েছে। এর মধ্যে সরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও সংস্থার কোটি টাকার হিসাবও রয়েছে। কোটি টাকার স্থিতি থাকা ব্যাংক হিসাবের তথ্য দিলেও সে হিসাবগুলোর মধ্যে ব্যক্তির সংখ্যা কত, সেই পরিসংখ্যান বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদনে নেই। অর্থাৎ কোটিপতি ব্যক্তির সংখ্যা কত তা বোঝা যাচ্ছে না।

দেশের পয়েন্ট টু পয়েন্ট মূল্যস্ফীতি চলতি বছরের নভেম্বরে ৯.৪৯ শতাংশে দাঁড়িয়েছে, যদিও ব্যাংকগুলোতে নভেম্বরে আমানতের গড় রেট হচ্ছে ৪.৫ শতাংশ। চলতি বছরের সেপ্টেম্বর প্রান্তিকে ব্যাংকগুলোয় আমানত বেড়েছে প্রায় ২৬ হাজার কোটি টাকা। অথচ আগের জুন প্রান্তিকে ব্যাংকগুলোর আমানত বড়েছে ৭৪ হাজার কোটি টাকা।

দেশে বর্তমানে ব্যাংকগুলোতে মোট অ্যাকাউন্টধারী রয়েছে ১৪.৯৭ লাখ। এসব অ্যাকাউন্টে আমানতের পরিমাণ ১৭.১৩ লাখ কোটি টাকা।

দেশের কয়েকটি সরকারি-বেসরকারি ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট বিভাগে কথা বলে জানা যায়, এ ব্যাংকগুলোর কোটি টাকার বেশি হিসাবের মাত্র ৫ থেকে ৭ শতাংশ ব্যক্তির। বাকি হিসাবগুলো সরকারি-বেসরকারি ও বিদেশি খাতের প্রতিষ্ঠানের।

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) তথ্য অনুযায়ী, স্বাধীনতার পর ১৯৭২ সালে দেশে কোটিপতি আমানতকারী ছিল পাঁচজন, ১৯৭৫ সালে তা ৪৭ জনে উন্নীত হয়। ১৯৮০ সালে কোটিপতি হিসাবধারীর সংখ্যা ছিল ৯৮। এরপর ১৯৯০ সালে কোটিপতি হিসাবধারী হয় ৯৪৩টি, ১৯৯৬ সালে দুই হাজার ৫৯৪টি, ২০০১ সালে পাঁচ হাজার ১৬২টি, ২০০৬ সালে আট হাজার ৮৮৭টি এবং ২০০৮ সালে ছিল ১৯ হাজার ১৬৩টি। ২০২০ সালের ডিসেম্বর শেষে এ রকম আমানতকারীর সংখ্যা দাঁড়ায় ৯৩ হাজার ৮৯০। ২০২১ সালের ডিসেম্বরে বেড়ে তা দাঁড়ায় এক লাখ এক হাজার ৯৭৬। ২০২২ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত সেই হিসাবের সংখ্যা ছিল এক লাখ ৯ হাজার ৯৪৬।

 

Leave A Reply

Your email address will not be published.