ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অপরাধবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী জোবায়ের ইবনে হুমায়ুনকে পেটানোর ঘটনায় ‘প্রলয়’ নামে বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০২০-২১ সেশনের শিক্ষার্থীদের দ্বারা পরিচালিত একটি গ্যাংয়ের নাম সামনে চলে আসে।
প্রলয় গ্যাংয়ের সাবেক সদস্য ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, গত বছরের নভেম্বর থেকে এ গ্যাংয়ের কার্যক্রম শুরু হয়। ২০২১-২২ সেশনের শিক্ষার্থীদের দ্বারা পরিচালিত হতো এই গ্যাং। সোহরাওয়ার্দী উদ্যান, শহীদ মিনার এলাকাসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন এলাকায় ছিনতাইয়ের ঘটনায় যুক্ত থাকার অভিযোগ রয়েছে তাদের বিরুদ্ধে। এ ছাড়া সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে নিয়মিত মাদক গ্রহণের আড্ডাও দিতেন তারা।
শীতের শুরুতে তারা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শহীদ বুদ্ধিজীবী ডা. মোহাম্মদ মোর্তজা চিকিৎসাকেন্দ্রের তৃতীয় তলার একটি কক্ষে আড্ডা শুরু করেন। ধীরে ধীরে এটিকে কার্যালয়ে পরিণত করেন।
এর আগে ভুক্তভোগী জোবায়ের মা গতকাল রবিবার গ্যাংয়ের ১৯ জনের পরিচয়ে এবং অজ্ঞাত ৬/৭ জনের বিরুদ্ধে শাহবাগ থানায় অভিযোগ দায়ের করেছেন। মামলা সূত্রে ও শিক্ষার্থী সূত্রে এখন পর্যন্ত ‘প্রলয়’ গ্যাংয়ের ২০-২৫ জন সদস্যের নাম উঠে এসেছে। এ সদস্যদের বিষয়ে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে নিয়মিত অপকর্মের সাথে জড়িত থাকলেও শ্রেণিকক্ষে, পড়াশোনায় অনিয়মিত ছিলেন তারা।
বিভিন্ন বিভাগের ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এই গ্যাংয়ের সাথে যুক্ত যাদের নাম ইতিমধ্যে গণমাধ্যমে উঠে এসেছে তারা কেউ ক্লাসে, পড়াশোনায় নিয়মিত না। এদের মধ্যে কয়েকজন পরের বর্ষের সঙ্গে ক্লাস করছেন।
এদের মধ্যে ‘প্রলয়’ গ্যাংয়ের সদস্য মুক্তিযোদ্ধা জিয়াউর রহমান হলের এবং শান্তি ও সংঘর্ষ বিভাগের তবারক মিয়ার বিরুদ্ধে সহপাঠীকে মারার অভিযোগ আছে। একজন শিক্ষক এসে তাকে থামায় এবং আর কখনো তার ক্লাসে না আসার নির্দেশ দেন।
আরেক সদস্য স্যার এ এফ রহমান হল ও চারুকলা অনুষদের প্রিন্ট মেকিং বিভাগের শিক্ষার্থী শাহ আলম এর আগেও ক্যাম্পাসে মারামারি করে থানায় সোপর্দ হয়েছিলেন। টিএসসিতে হাজী মুহম্মদ মুহসীন হলের এক শিক্ষার্থীকে মারার অপরাধে প্রক্টরিয়াল টিম তাকে শাহবাগ থানায় হস্তান্তর করেছিল।
গ্যাংয়ের আরেক সদস্য শহীদ সার্জেন্ট জহুরুল হক হল ও গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের আরিফ মনোয়ার মাহিন তার বিভাগের সিআর (শ্রেণি প্রতিনিধি) ছিল। কিছুদিন আগেই তার বিভাগের এক নারী সহপাঠীকে উদ্দেশ্য করে কুরুচিপূর্ণ মেসেজ দেওয়ার অপরাধে বিভাগের শিক্ষকগণ তাকে সিআর পদ থেকে বহিষ্কার করেন।
গ্যাংয়ের অন্য দুই সদস্য মার্কেটিং বিভাগের বিপ্লব হোসেন জয় এবং মো. শোভন। দুজনেই বিভাগের ২৭ ব্যাচের শিক্ষার্থী। কিন্তু ক্লাসে অনিয়মিত এবং পরীক্ষায় অকৃতকার্য হওয়ায় তাদের দুজনকেই আবার প্রথম বর্ষে অর্থাৎ মার্কেটিং-২৮ ব্যাচে পুনরায় ভর্তি হতে হয়েছে।
জগন্নাথ হল ও লোক প্রশাসন বিভাগের প্রত্যয় সাহার খোঁজ নিলে জানা যায় সে প্রথম সেমিস্টারে নিয়মিত ক্লাসে আসলেও দ্বিতীয় ও তৃতীয় সেমিস্টারে তাকে ডিপার্টমেন্টে দেখাই যায় না। ক্লাসে নিয়মিতই অনুপস্থিত থাকেন।
জোবায়েরকে পেটানোর ঘটনায় ‘প্রলয় গ্যাংয়ের’ বিরুদ্ধে ওই ছাত্রের মায়ের করা অভিযোগের ভিত্তিতে দুজনকে গ্রেপ্তার করে আদালতে পাঠিয়েছে শাহবাগ থানা পুলিশ। গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন নৃবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী নাঈমুর রহমান দুর্জয় ও ইন্টারন্যাশনাল বিজনেস বিভাগের ফয়সাল আহমেদ সাকিব।