নিজস্ব প্রতিবেদক
কবি নির্মলেন্দু গুণ। বাংলা ভাষা ও সাহিত্যে অন্যতম নন্দিত ও জনপ্রিয় কবি। মুক্তিযুদ্ধ এবং বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে অসাধারণ এবং সাহসী পংক্তিমালার জন্য ইতোমধ্যে স্বাধীনতা পদক লাভ করেছেন নির্মলেন্দু গুণ।
বলবার অপেক্ষা রাখেনা নির্মলেন্দু গুণের কবিতার পাঠকের সংখ্যা , সর্বাধিক। শামসুর রাহমানের মৃত্যুর পরে বাংলাদেশ ও পশ্চিমবাংলা মিলিয়ে কবি নির্মলেন্দু গুণ এর অবস্থান শীর্ষে।
রহস্যজনক কারণে বাংলা একাডেমীতে অনুষ্ঠিত ঢাকা লিট ফেস্ট এ আমন্ত্রণ পাননি আধুনিক বাংলা কবিতার প্রধান ব্যক্তিত্ব। ঢাকা লিট ফেস্ট নিয়ে কবি নির্মলেন্দু গুণ তার ফেসবুক টাইমলাইনে একটি স্ট্যাটাস দিয়েছেন। হুবহু কবির লেখা তুলে ধরা হলো।
দশ হাজার টাকার সম্মানী নিয়ে আমি একবার বাংলা একাডেমিতে অনুষ্ঠিত লিটফেস্টে অংশ গ্রহণ করেছিলাম। ঐ একবারই। আরও একবার গিয়েছিলাম কি? মনে করতে পারছি না। একবারেরটাই মনে আছে। তারপর ওরা আর আমাকে ডাকেনি। কেন ডাকেনি? কেন ডাকে না? বাইরে কিছু না বললেও এই প্রশ্নটা আমার মনের ভিতরে ছিল।
বাংলা একাডেমির বর্তমান মহা পরিচালক যখন এই ফেস্টিভালের বিরুদ্ধে কিছু লেখকদের নিয়ে মিছিল করেছিলেন, তখন আমি কিন্তু এই লিট ফেস্টের পক্ষেই ছিলাম। এমতাবস্থায় আমাকে তো আরও বেশি করে ডাকাই উচিত হতো। তবে আমাকে না ডাকার সম্ভাব্য কারণ কী হতে পারে– তা সন্ধান করতে গিয়ে আমার মনে হয়েছে– আমি যে ঐ উৎসবে কবিতা পড়ার জন্য দশ হাজার টাকা সম্মানী চেয়েছিলাম, মনে হয় ওটা ওঁরা আমার প্রাপ্য বলে মানতে পারেননি। তাই ওঁরা আমাকে আর ডাকেন না।
শর্তহীন অংশগ্রহণে যারা রাজী, সম্ভবত সেইসব কবি সাহিত্যিকদেরই ওঁরা ডাকেন। আমি তাতে কিছু মনে করি না। আজকাল কোনো অনুষ্ঠান আমাকে টানেও না। একসময় অনুষ্ঠানে যেতে ভালো লাগতো, এখন না যেতেই ভালো লাগে। নোবেল লরিয়েট বা আমার চেয়ে দামী কবি-সাহিত্যিক দেশবিদেশের বাজারে আমার চেয়ে কম দামে পাওয়া গেলে, আমাকে তাঁরা ডাকবেনই বা কেন? এটাও ভাবি।
Sharif Nafa Asabber, আপনি লিটফেস্টে অংশগ্রহণের যোগ্যতার প্রসঙ্গটি তুললেন বলে আমি আমার অভিজ্ঞতাটা বললাম। আমাকে না-ডাকার অন্য কোনো অজানা কারণও থাকতে পারে, যা আমি জানি না।
লিট ফেস্টের উদ্যোক্তারা চাননি আমার কবিকন্ঠ শ্রুত হোক বাংলা একাডেমির আকাশে বাতাসে– তাদের অপপ্রয়াস সফল হয়নি। অনুষ্ঠানে অংশ নিতে আসা কলকাতার জনপ্রিয় কবি জয় গোস্বামী নাকি ঐ অনুষ্ঠানে আমার একটি কবিতা মুখস্ত আবৃত্তি করেছে। এই সুখপ্রদ খবরটা আনাকে জানিয়েছিল বাতিঘরের প্রতিষ্ঠাতা দীপঙ্কর দাশ। কবিতার নামটা দীপঙ্কর ঠিক বলতে পারেনি। আজ সকালে জয় গোস্বামীর সঙ্গে মুঠোফোনে কথা হলো দীপঙ্করের মাধ্যমে। জয় বললো আমার কবিতাটির নাম “জালনোট”। আমার প্রথম কাব্যগ্রন্থের কবিতা এটি। জালনোট কবিতাটি জয় ছাড়া আর কেউ আবৃত্তি করেছেন, এই কবিতার মূল্য বুঝেছেন–এমন একজনের কথাও আমার মনে পড়লো না।
আমার প্রিয় অনুজকবিকে ধন্যবাদ জানালাম আমার কবিতাটি “যথাস্থানে” মুখস্ত আবৃত্তি করার জন্য। জয় বললো আমার আরও অনেক কবিতা নাকি ওঁর মুখস্ত আছে। আমার ধারণা ছিলো জয় আমার কবিতা খুব একটা পছন্দ করে না। জয় আমার ধারণা ভুল প্রমাণ করে দিলো। জয় ও ওরঁ স্ত্রীকে আমি আশীর্বাদ জানলাম। আমাকে বাদ দিয়ে লিট ফেস্ট করতে চাইছিলা? হইলো কিছু? হইলো না। পারলা না। তীরে এসে তরী ডুবলো। তোমাদের অতিথি কবি জয় গোস্বামী তোমাদের ভুল ধরিয়ে দিয়ে গেলো। আমি যাই বা না যাই– ভিন্ন কথা। তাই বইল্যা তোমরা আমারে আমন্ত্রণ জানাবা না? বোকার দল! ভালা হইয়া যাও।