The news is by your side.

জন্মদিনের প্রণতি:  সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম

0 803

 

জ. ই. মামুন

প্রফেসর সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম অজাতশত্রু। আমি কোনোদিন কারো কাছে তাঁর কোনো বদনাম শুনিনি। এমনকি রাজনৈতিকভাবে ভিন্ন মতের মানুষদেরকেও মনজুর স্যার সম্পর্কে কখনো খারাপ বলতে শুনিনি। তিনি সবাইকে ভালোবাসেন, স্নেহ করেন। তাঁকেও সবাই একই রকম ভালোবাসে, শ্রদ্ধা করে। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের শিক্ষক ছিলেন। কিন্তু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসে তিনি সেই বিরল শিক্ষকদের একজন, যাঁর জনপ্রিয়তা নিজের বিভাগ বা অনুষদ ছাড়িয়ে ছড়িয়ে পড়েছিলেন গোটা বিশ্ববিদ্যালয়ে। অন্য বিভাগের ছাত্ররাও গোপনে এসে স্যারের ক্লাশের লেকচার শুনতো বা বারান্দায় দাঁড়িয়ে থাকতো। ছাত্রদের কাছে তিনি SMI, আমি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হলে নিশ্চয়ই তাঁকে ঈর্ষা করতাম!

স্যারের সঙ্গে আমার ঘণিষ্ঠতা ১৯৯৯ সাল থেকে। তখন আমরা একুশে টিভি শুরু করার প্রস্তুতি নিচ্ছি। স্যার আমাদের শুরুর দিকের উপদেষ্টাদের একজন, (পারিবারিক ভাবেও তিনি একুশের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। একুশের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান এ এস মাহমুদ সাহেব মনজুর স্যারের মামা) তিনি এসে আমাদের সাথে কথা বলতেন, আমরা মুগ্ধ হয়ে তাঁর কথা শুনতাম। সাংবাদিকতার শিক্ষক না হয়েও তিনি আমাদেরকে শিখাতেন কি করে মানুষের সাথে মিশতে হয়, কি করে কথা বলতে হয় আর কি করে সংবাদে, অনুষ্ঠানে শিল্পবোধ ফুটিয়ে তুলতে হয়। এরপর অনেক বছর হয়ে গেছে, স্যারের স্নেহ কখনো আমার ভাগে কম পড়েনি। করোনাকালে যখন পুরো পৃথিবী রুদ্ধ, তখনও স্যার ফোন করে খবর নিতেন। মনজুর স্যার আমার ক্লাশ রুমের শিক্ষক না হয়েও বিরাট শিক্ষক, অভিভাবক এবং বন্ধুও।

স্যার বন্ধু হিসেবে অনন্য। আমার বহু ঘটনা মনে পড়ে যখন স্যারের সাথে গল্প করতে করতে রাত পার হয়ে ভোরের আজান পড়েছে। তিনি গল্পের ভান্ডার। সাধারণ কথাও তিনি গল্পের মতো করে বলেন, আমরা মুগ্ধ হয়ে তাঁর কথা শুনি। তাঁর সঙ্গ উপভোগ করি। বিদ্যায়, বুদ্ধিতে, হাস্যে, কৌতুকে তিনি সবসময় আমাদের আড্ডার মধ্যমনি। আমরা সব সময় অপেক্ষা করি আবার কবে স্যারের সঙ্গে আড্ডা হবে!

তিনি গল্প লেখেন, সবাই জানে। তবে তাঁর গল্প সাধারণ গল্পকারের গল্পের মতো নয়। তাঁর গল্পের ভাষা, কাঠামো এবং চরিত্রগুলো যেন অন্যরকম দেখতে, কথার বাইরেও তারা কথা বলে, দেখার বাইরেও তারা দেখে। আমার ধারণা, স্যারের গল্পের পাঠক হতেও আলাদা যোগ্যতা অর্জন করতে হয়।

শিক্ষক, শিক্ষাবিদ, লেখক, অনুবাদক, গবেষক, শিল্পবোদ্ধা, সমালোচক- এমন আরো অনেক পরিচয় তাঁর আছে। কিন্তু আমার কাছে তিনি অনন্য মানুষ। এই যুগে তাঁর মতো উচ্চ চিন্তা, জ্ঞান ও মননের সঙ্গে সহজ এবং সাধারণ জীবন যাপনের মানুষ পাওয়া কঠিন। আমাদের সৌভাগ্য যে আমাদের সময়ে একজন সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম আছেন।

স্যার, আপনি আরো সুদীর্ঘদিন সুস্থ এবং উজ্জ্বল থাকুন, আমাদের চারদিকের অন্ধকারকে আলোকিত করুন। আমাদের স্নেহ দিন, ভালোবাসা দিন, আনন্দ দিন। জন্মদিনে আপনাকে হাজারো প্রণতি এবং আলিঙ্গন। আপনাকে ভালোবাসি স্যার।

 

Leave A Reply

Your email address will not be published.