The news is by your side.

ঘুরে দাঁড়াচ্ছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়, তদবির ঠেকাতে কঠোর সিদ্ধান্ত

0 401

 

 

তদবির চাপে ত্যক্ত-বিরক্ত হয়ে এবার সত্যিই ঘুরে দাঁড়াচ্ছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। যাতে কোনো কর্মকর্তা বদলি-পদায়নের জন্য তদবিরই করতে না পারেন সে পথ একেবারে বন্ধ করে দেয়া হচ্ছে। এ সংক্রান্ত কঠোর অনুশাসন সংবলিত বিশদ নীতিমালার খসড়া প্রায় চূড়ান্ত। এ মাসে সম্ভব না হলেও ডিসেম্বরে এটি চূড়ান্ত হবে। পহেলা জানুয়ারি থেকে যাতে কার্যকর করা যায় সে রকম টার্গেট নিয়ে কাজ করছে সংশ্লিষ্ট নীতিমালা প্রণয়ন কমিটি।

নীতিমালার খসড়া প্রস্তাবনায় বলা হয়েছে, কোনো কর্মকর্তা তার কিংবা অন্য কারও বদলি-পদায়নের জন্য তদবির করতে পারবেন না। শুধু অসুস্থতা এবং স্বামী-স্ত্রী এক স্টেশনে চাকরি করার প্রশ্নে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা লিখিত আবেদন করতে পারবেন। তাও সেটি বিবেচনা করবে একটি নির্দিষ্ট কমিটি। কিন্তু একবার কাউকে কোথাও বদলি করলে তাকে অবশ্যই সেখানে যোগ দিতে হবে।

আর যোগদান না করে সেটি বাতিল কিংবা নিজের পছন্দের জায়গায় পোস্টিং নিতে কোনো প্রকার তদবির কিংবা চাপ প্রয়োগ করা হয়, তাহলে সেটি চাকরি শৃঙ্খলা ভঙ্গের অপরাধ হিসেবে গণ্য হবে। কাউকে স্ট্যান্ড রিলিজ কিংবা যেদিন থেকে তাকে অবমুক্ত করার কথা বলা হবে, সেদিনই তাকে রিলিজ নিতে হবে।

এ আদেশ কেউ অমান্য করলে তার বেতন বন্ধ রাখাসহ চাকরি অসন্তোষজনক হিসেবে রিপোর্ট করা হবে। নেতিবাচক এ প্রতিবেদন পদোন্নতির সময় মূল্যায়ন করা হবে।

বদলি ও পদায়নের ক্ষেত্রে মেধা-যোগ্যতার যথাযথ মূল্যায়নসহ সমগ্র চাকরি জীবনে একটি ভারসাম্যের নীতি বহাল রাখাই হবে এ নীতিমালার মৌলিক উদ্দেশ্য। অর্থাৎ মেধা-যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও একজন কর্মকর্তা চাকরি জীবনের বেশির ভাগ সময় অপেক্ষাকৃত কম গুরুত্বপূর্ণ পদে চাকরি করবেন, আর একজন সব ভালো পোস্টিং এনজয় করবেন, তা হবে না। এক্ষেত্রে সমনীতি কার্যকর করতে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় ক্যারিয়ার প্ল্যানিং উইংকে আরও শক্তিশালী করার উদ্যোগ নিয়েছে।

এ উইংয়ের মাধ্যমে কর্মকর্তার শিক্ষাগত যোগ্যতা এবং কর্মজীবনের বাস্তব দক্ষতাসহ আনুষঙ্গিক বিষয়াদি মূল্যায়ন করে প্রত্যেক কর্মকর্তার বিষয়ে পৃথক গোপনীয় রোডম্যাপ সংরক্ষণ করা হবে। এছাড়া একজন কর্মকর্তা যাতে ঘুরেফিরে মাল্টিপোস্টিং তথা অনেক বিষয়ে অভিজ্ঞতা অর্জন করতে পারেন সে ব্যবস্থাও নেয়া হবে।

তবে বদলি ও পদায়ন নীতিমালায় ভারসাম্যের নীতি প্রতিষ্ঠা করতে জেলা ও উপজেলাগুলোকে ৩ শ্রেণিতে বিভক্ত করা হয়েছে। এরমধ্যে ‘ক’ শ্রেণির জেলা ২৫টি, ‘খ’ শ্রেণির ২০টি এবং ‘গ’ শ্রেণির ১৯টি। এভাবে উপজেলাগুলোকে চিহ্নিত করা হয়েছে। এটি এজন্য করা হয়েছে, যেন কোনো কর্মকর্তাকে ঘুরেফিরে ৩ শ্রেণির জেলা-উপজেলায় পোস্টিং দেয়া যায়।

নীতিমালায় কয়েকটি পদে পদায়নের বিষয়ে সুনির্দিষ্ট কিছু নির্দেশনা সন্নিবেশিত থাকবে। এরমধ্যে নিজ বিভাগ ব্যতীত সহকারী কমিশনারদের (শিক্ষানবিস) অন্য বিভাগে পদায়ন করতে হবে। কমপক্ষে ২ বছর শিক্ষানবিস হিসেবে দায়িত্ব পালন করতে হবে। প্রশাসনিক কারণ ছাড়া এ সময়ে অন্যত্র বদলি করা যাবে না। তবে তা হবে কমিটির সুপারিশে।

পদায়ন নীতিমালা প্রস্তুত করতে ৩ মাস আগে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের এপিডিকে (অতিরিক্ত সচিব) প্রধান করে একটি কমিটি গঠন করা হয়। যেখানে এপিডি উইং ছাড়াও সংশ্লিষ্ট আরও কয়েকটি উইংয়ের কর্মকর্তাদের সংযুক্ত করা হয়েছে।

এ কমিটি সর্বশেষ বৈঠক করেছে ২৯ অক্টোবর। ২-৩ বৈঠক হওয়ার পর নীতিমালা চূড়ান্ত হবে। ইতোমধ্যে খসড়া আকারে যা চূড়ান্ত করা হয়েছে সেখানে নীতির সারমর্ম চলে এসেছে। এখন শুধু পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও ঘষামাজার কাজ চলছে। কোনো গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্ট বাদ পড়েছে কিনা বা কোথাও কোনো ফাঁক-ফোকর থাকলে সেটি বন্ধ করা হচ্ছে।

সংশ্লিষ্ট কয়েকজন কর্মকর্তা জানান, এ নীতিমালা প্রণয়নের পেছনে বিভিন্ন পর্যায়ের বেশ কয়েকজন কর্মকর্তার ব্যাপক অবদান রয়েছে। তারা যথাযথ পরামর্শ দিয়ে চূড়ান্ত হতে যাওয়া নীতিমালাকে আরও সমৃদ্ধ করেছেন। আমরা তাদের কাছে কৃতজ্ঞ। এছাড়া জনপ্রশাসন সচিব শেখ ইউসুফ হারুন সব সময় এটি মনিটরিং করছেন। তারা মনে করেন, এ নীতিমালা বাস্তবায়ন হলে বেশিরভাগ কর্মকর্তা খুশি হবেন।

পাশাপাশি জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় আরও শক্ত ভিত অর্জন করবে এবং প্রয়োজনীয় নীতি প্রণয়নে আরও বেশি সক্রিয় হতে পারবে। শুধু নানা রকম প্রভাব খাটিয়ে যারা এতদিন ফায়দা নিয়ে আসছেন তাদের পথ রুদ্ধ হবে। কর্মকর্তাদের মধ্যে পর্দার আড়ালে গড়ে ওঠা কথিত কোনো নেতা কিংবা বিশেষ গ্রুপের ভূমিকা রাখার সুযোগও চিরতরে বন্ধ হবে। কর্মস্থলে সবাই প্রাপ্য মর্যাদা নিয়ে কাজে আরও বেশি মনোনিবেশ করতে পারবেন।

 

 

Leave A Reply

Your email address will not be published.