নিজস্ব প্রতিবেদক
যেন মাথার ওপর থেকে বটের ছায়া হারিয়ে ফেললো দেশের সংগীতাঙ্গন। প্রয়াত হয়েছেন কিংবদন্তি গীতিকবি, নির্মাতা, চিত্রনাট্যকার ও প্রযোজক গাজী মাজহারুল আনোয়ার। রবিবার সকাল সাড়ে ৭টার দিকে তার হঠাৎ মৃত্যু হয়।
দুঃসংবাদটি শোনার পর বারিধারা পার্ক রোডে গীতিকবির বাসায় ছুটে আসেন বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক জোটের কার্যকরী সভাপতি শিল্পী রফিকুল আলম ও তার স্ত্রী আবিদা সুলতানা। যতক্ষণ ছিলেন, রফিকুল ছিলেন বিষণ্ন ও উদাস। বিপরীতে আবিদা সুলতানা ভেঙে পড়েন অঝোর কান্নায়।
স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের যোদ্ধা রফিকুল আলম তার প্রতিক্রিয়ায় বলেন, ‘গাজী ভাইয়ের তো অনেকগুলো পরিচয়। কিন্তু তিনি আমাদেরই মানুষ, গানের মানুষ। তার অবদান সম্পর্কে অনেক দীর্ঘ কথা বলতে হবে, সেটা এখন বলতে চাই না। বাংলাদেশ তথা তৎকালীন পূর্ব বঙ্গে কবিতা ও আধুনিক গীতিকবিতা লেখার মানুষ খুব কম ছিলেন। তিনি এক জীবনে যত গান লিখেছেন, তার একটিও বিফলে যায়নি। এটা খুব বিরল। বাংলা সাহিত্য ও গানে কোথাও এত বড় গীতিকবি নেই, যার প্রতিটা গান মানুষের মনে জায়গা করে নিয়েছে। তার মৃত্যু আমাদের জন্য অনেক বড় ক্ষতি। তার লেখা ও সুরে আমি অনেক গান গেয়েছি। ফলে তার চলে যাওয়ার ব্যথা নিয়েই পথ চলতে হবে, কাজ করতে হবে।’
কণ্ঠশিল্পী আবিদা সুলতানাকে সন্তানের মতো স্নেহ করতেন গাজী মাজহারুল আনোয়ার। তাই গানের গণ্ডি ছাড়িয়ে আত্মিক সম্পর্ক গড়ে উঠেছিল তাদের মধ্যে। এই গায়িকা কাঁদতে কাঁদতে বললেন, ‘যারা তাদের দোয়া ও আশীর্বাদে আমাদের রাখতেন, এক এক করে ওনারা সবাই চলে যাচ্ছেন। অনেক বড় অভিভাবককে হারালাম আমরা। গাজী ভাই প্রচণ্ড সফল একজন মানুষ ছিলেন। যেদিকে তিনি হাত দিয়েছেন, সেদিকে সোনা ফলেছে। আসলে গাজী ভাই চলে যাওয়াতে মনে হচ্ছে, মাথার ওপরে আর কেউ নেই! খালি খালি লাগছে! গাজী ভাই আদর করতেন, ভালোবাসতেন। তাকে ভাই বলতাম, কিন্তু বাবার মতো ভালোবাসতেন। কাছে ডেকে বসাতেন, কথা বলতেন। আর কিছু বলতে পারছি না (কান্নায় তার গলা ধরে আসে)।’