The news is by your side.

ওয়াশিংটন পোস্টে শেখ হাসিনার ভূয়সী প্রশংসা

0 114

বাংলাদেশের ৫১তম স্বাধীনতা দিবস উদযাপন উপলক্ষে মার্কিন প্রতিনিধি পরিষদে বাংলাদেশ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভূয়সী প্রশংসা করে বিবৃতিতে দিয়েছেন মার্কিন কংগ্রেসম্যান ও কংগ্রেসনাল বাংলাদেশ ককাসের সহ-সভাপতি জো উইলসন।

তিনি বিভিন্ন ক্ষেত্রে বাংলাদেশের অর্জনকে স্বীকৃতি দেওয়ার পাশাপাশি বর্তমান অর্থনৈতিক উন্নয়নেরও ব্যাপক প্রশংসা করেন।

গত বুধবার এই বিবৃতি দেন তিনি, যা মার্কিন প্রতিনিধি পরিষদের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়েছে।

বিবৃতিতে জো উইলসন বলেন, “দীর্ঘ নয় মাসব্যাপী বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে পাকিস্তান সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যরা এবং পাকিস্তানপন্থী মিলিশিয়ারা লক্ষ লক্ষ মানুষকে হত্যা এবং আরও বহু মানুষকে আহত করেছে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে স্বাধীনতার এই যুদ্ধ ছিল গণতন্ত্র ও মুক্তির সংগ্রাম।”

মার্কিন এই রাজনীতিবিদ বলেন, “যুদ্ধ পরবর্তী বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অবস্থা ছিল খুবই শোচনীয়। সে সময় বাংলাদেশের জনগণ ব্যাপক দারিদ্র্য ও দীর্ঘস্থায়ী অপুষ্টিতে ভোগে। গৃহহীন হয়ে পড়ে এক কোটিরও বেশি মানুষ। যুদ্ধের কারণে তারা বাড়িঘর ছেড়ে অন্যত্র পালিয়ে গিয়েছিল। শুধু তাই নয়, বাংলাদেশের জনগণ তখন মুখোমুখি হয় ভঙ্গুর ব্যাংকিং ও মুদ্রা ব্যবস্থার। মুদ্রাস্ফীতি ছিল ভয়াবহ। কেননা, তখন মুদ্রাস্ফীতি ৩০০ থেকে ৪০০ শতাংশের মধ্যে উঠানামা করছিল। সেই সঙ্গে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ছিল খুবই সামান্য।”

তিনি বলেন, “যুদ্ধের কারণে রাস্তাঘাট, রেলপথ এবং সেতু ধ্বংস হয়ে গিয়েছিল। ফলে অভ্যন্তরীণ যাতায়াত ব্যবস্থা বিকল হয়ে পড়েছিল। নতুন সেই রাষ্ট্র তখনও ভয়াবহ ভোলা ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাব থেকে কাটিয়ে মাথা সোজা করার চেষ্টা করছিল। ১৯৭০ সালের নভেম্বরে ওই এলাকায় ভয়াবহ সেই ঘূর্ণিঝড় আঘাত হানে, তাতে প্রায় পাঁচ লাখ মানুষের মৃত্যু হয়েছিল।”

জো উইলসন বলেন, “গত পাঁচ দশকে বাংলাদেশ ব্যাপক অগ্রগতি করেছে। এটি বিশ্বের দরিদ্রতম দেশগুলোর মধ্যে অন্যতম দ্রুত বর্ধনশীল অর্থনীতির দেশে পরিণত হয়েছে। বিশ্ব ব্যাংকের তথ্যানুযায়ী, ২০২১ সালে তাদের মাথাপিছু জিডিপি বেড়ে ২,৪৫৭ মার্কিন ডলারে দাঁড়িয়েছে, যা এখন তার প্রতিবেশীগুলোর মাথাপিছু জিডিপিকে ছাড়িয়ে গেছে।”

তিনি আরও বলেন, “১৯৭১ সালে স্বাধীনতার পর থেকে বাংলাদেশের অর্থনীতি ৯ বিলিয়ন মার্কিন ডলার থেকে ৪৫০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে উন্নীত হয়েছে। গড় আয়ু ৪৭ বছর থেকে বেড়ে ৭৩ বছর হয়েছে। বয়স্ক সাক্ষরতার হার বেড়ে ৭৫ শতাংশ ছাড়িয়ে গেছে। বাঙালি জাতি স্বাধীনতায় এভাবেই বিকশিত হয়েছে।”

শেখ হাসিনার প্রশংসা করে জো উইলসন বলেন, “বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ যথেষ্ট আর্থ-সামাজিক অগ্রগতি করেছে। তার নেতৃত্বে দেশটি খাদ্য উৎপাদন, দুর্যোগ স্থিতিস্থাপকতা, দারিদ্র্য হ্রাস, উন্নত স্বাস্থ্য, শিক্ষা, এবং নারীর ক্ষমতায়নে ব্যাপক উন্নতি করেছে।”

তিনি বলেন, “বাংলাদেশ সফলভাবে মডারেট মুসলিম সমাজের মর্যাদা বজায় রেখেছে ও উগ্রবাদ দমন করেছে। আর দেশটির জনগণ বন্দুকের নলের দ্বারা কর্তৃত্ববাদী শাসনের পরিবর্তে গণতন্ত্র ও আইনের শাসনের প্রতি সমর্থন দিয়েছে।”

মার্কিন এই রাজনীতিক বলেন, “আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক নিরাপত্তা, সন্ত্রাসবাদ প্রতিরোধ এবং জলবায়ু পরিবর্তন সংক্রান্ত বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্র ও বাংলাদেশের মধ্যে ব্যাপক সহযোগিতা রয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের জন্য সবচেয়ে বড় রফতানি বাজার এবং একই সঙ্গে দেশটিতে সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগের অন্যতম বড় উৎস। বিনিময়ে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য এবং আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা সহযোগিতার মাধ্যমে বাংলাদেশ মার্কিন অর্থনীতিতে অবদান রেখেছে।”

তিনি বলেন, “যুক্তরাষ্ট্র ও বাংলাদেশের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য বছর বছর বেড়েই চলেছে। আমেরিকা বাংলাদেশে প্রধানত কৃষি পণ্য, বিমান, যন্ত্রপাতি, ইঞ্জিন, লোহা ও ইস্পাত পণ্য রফতানি করে থাকে। আর সেখান থেকে আমদানি করে পোশাক, ফুটওয়্যার, টেক্সটাইল পণ্য, খেলনা, খেলার সামগ্রী, বিভিন্ন ধরনের চিংড়ি এবং কৃষি পণ্য।”

তিনি আরও বলেন, “প্রতিবেশী মিয়ানমারের সামরিক বাহিনী কর্তৃক গণহত্যা ও নির্যাতন থেকে পালিয়ে আশ্রয় নেওয়া ১০ লাখের বেশি রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর প্রতি বাংলাদেশের উদারতা ও অপরিহার্য ভূমিকার প্রশংসা করে মার্কিন জনগণ। যুক্তরাষ্ট্র এই সংকট মোকাবিলায় মানবিক সহায়তা হিসেবে সবচেয়ে বেশি, মোট ২ বিলিয়নেরও বেশি অর্থ প্রদান করেছে।”

জো উইলসন বলেন, “বিশ্বব্যাপী জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা প্রচেষ্টায় সবচেয়ে বড় অবদানকারী রাষ্ট্র বাংলাদেশ। যুক্তরাষ্ট্র ও বাংলাদেশ অংশীদার সমৃদ্ধির লক্ষ্যে দুই দেশের জনগণ-টু-জনগণ এবং সরকার-টু-সরকার পর্যায়ের সম্পর্ক আরও উন্নত করতে চায়।”

তিনি বলেন, “যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশকে ১০০ মিলিয়ন ডোজেরও বেশি কোভিড-১৯ ভ্যাকসিন সরবরাহ করেছে। এজন্য বাংলাদেশের জনগণ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছে।”

মার্কিন কংগ্রেসম্যান বলেন, “যুক্তরাষ্ট্র-বাংলাদেশ সম্পর্ক সুদৃঢ় হয় বাংলাদেশি আমেরিকান কমিউনিটি ও বিপুল সংখ্যক বাংলাদেশি শিক্ষার্থী, যারা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে পড়াশোনা করতে আসে তাদের দ্বারা। দুই লাখেরও বেশি বাংলাদেশি-আমেরিকান নিজেদেরকে কঠোর পরিশ্রমী, আইন মান্যকারী এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দেশপ্রেমিক নাগরিক হিসেবে প্রমাণ করেছেন এবং সারাদেশে তাদের সম্প্রদায়ের জন্য ইতিবাচক অবদান রেখেছেন।”

তিনি বলেন, “আজ,  মার্কিন জনগণ বাংলাদেশের স্বাধীনতার ৫১ বছর উদযাপনের সময় বাঙালি জাতি ও জনগণকে স্বীকৃতি দিচ্ছে এবং প্রশংসা করছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বর্তমানে এবং ভবিষ্যতে পারস্পরিক অর্থনৈতিক, সামাজিক এবং জাতীয় নিরাপত্তার লক্ষ্য অর্জনে বাংলাদেশের গঠনমূলক অংশীদার থাকার আন্তরিক দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করছে।”

 

 

 

Leave A Reply

Your email address will not be published.