এপ্রিলে বিদ্যুতের চাহিদা ১৭ হাজার মেগাওয়াট ছাড়াবে। তীব্র গরম, রমজানের অতিরিক্ত বিদ্যুতের চাহিদা, সেচের জন্য ব্যবহৃত বাড়তি বিদ্যুৎসহ সব মিলিয়ে এই চাহিদা তৈরি হতে পারে, যা চলতে পারে আগামী জুন পর্যন্ত।
আর এর বিপরীতে বিদ্যুতের জোগান হতে পারে সব মিলিয়ে ১৫ হাজার মেগাওয়াট-এমনটি মনে করছেন বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) সংশ্লিষ্টরা। আর বিশেষজ্ঞদের আশঙ্কা, এ অবস্থায় লোডশেডিং ২ হাজার মেগাওয়াট ছাড়িয়ে যেতে পারে।
আসন্ন রমজানে রোজাদার ও সেচ গ্রাহকদের চরম দুর্ভোগ পোহাতে হতে পারে। এ অবস্থায় গ্রামের মানুষ আর শিল্প-কলকারখানার মালিকদের জন্য এই সময়ে আরও বড় রকমের দুর্ভোগ অপেক্ষা করছে।
লোডশেডিং বেড়ে যাওয়ায় সর্বত্র জেনারেটর আর আইপিএস বিক্রির ধুম পড়েছে। সবচেয়ে বেশি জেনারেটর বিক্রি হচ্ছে আবাসিক ভবন আর শিল্প-কলকারখানায়।
দেশের সবচেয়ে বড় জেনারেটর উৎপাদনকারী কোম্পানি এনার্জিপ্যাকের চিফ বিজনেস অফিসার মাসুম পারভেজ বলেন, দেশে বিদ্যুতের চাহিদা দিনদিন বাড়ছে। কিন্তু এখনো শিল্পকারখানার মালিকরা নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সুবিধা পাচ্ছেন না। বাধ্য হয়ে তাদের জেনারেটরের ওপর নির্ভর করতে হচ্ছে।
বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি) বলছে, দেশে বর্তমানে বিদ্যুতের চাহিদা ৯ হাজার থেকে সাড়ে ৯ হাজার মেগাওয়াট। মার্চের শুরু থেকে এই চাহিদা বাড়তে শুরু করেছে। এপ্রিলের দিকে এই চাহিদা এক লাফে ১৪ হাজার থেকে ১৫ হাজারে পৌঁছাবে। রোজা এবং কৃষকদের সেচ শুরুর সঙ্গে সঙ্গে এই চাহিদা ১৭ হাজার মেগাওয়াটেও পৌঁছাতে পারে। বর্তমানে চাহিদা কম থাকায় সর্বোচ্চ উৎপাদন হচ্ছে ১০ হাজার মেগাওয়াটের মতো বিদ্যুৎ।
এর সঙ্গে সম্প্রতি যোগ হয়েছে ভারতের আদানি গ্রুপের উৎপাদিত ৭৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ। এর বাইরে কয়লা আমদানির ধারাবাহিকতা সাপেক্ষে রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে আসতে পারে সাড়ে ৮০০ থেকে ৯০০ মেগাওয়াট। পায়রা বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে আসতে পারে আরও ১ হাজার মেগাওয়াট।
আর মাতারবাড়ী ও বরিশালের বিদ্যুৎকেন্দ্রে দেড় হাজার থেকে ২ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। সব মিলিয়ে অভ্যন্তরীণ উৎপাদনসহ এসব বড় বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে আরও ৫ হাজার মেগাওয়াটের মতো বিদ্যুৎ যোগ হতে পারে।
২ হাজার মেগাওয়াটের বেশি বিদ্যুতের ঘাটতি থেকে যাবে বলে জানিয়েছে খোদ পিডিবি। কোম্পানিটির একজন কর্মকর্তা জানান, গত বছরের গ্রীষ্মেও চাহিদার বিপরীতে প্রতিদিন ঘাটতি ছিল দেড় হাজার থেকে দুই হাজার মেগাওয়াট।
পিডিবি বলছে, দেশে ২৩ হাজার ৪৮২ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনকেন্দ্রের মধ্যে গ্যাসচালিত ৪৭ দশমিক ৮ শতাংশ, ফার্নেস অয়েলচালিত ২৫ দশমিক ২ শতাংশ, কয়লাভিত্তিক ১১ দশমিক ১ শতাংশ এবং ডিজেলচালিত ৫ দশমিক ৫ শতাংশ।
পাওয়ার সেলের ডিজি মোহাম্মদ হোসাইন বলেন, গ্রীষ্মের বিদ্যুতের চাহিদা ১৬ হাজার মেগাওয়াট ছাড়িয়ে যাবে। আমরা পেট্রোবাংলাকে বলেছি, আমাদের যদি সাড়ে ছয় হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে হয়, তাহলে ১৩০০ কোটি ঘনফুট গ্যাসের দরকার হবে।
তিনি বলেন, ‘রামপাল, পায়রা ও বরিশালের একটি বেসরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্র আর বড়পুকুরিয়া মিলিয়ে কয়লা থেকে ৩ হাজার ৫০০ মেগাওয়াট পাওয়া যাবে। এছাড়া নবায়নযোগ্য জ্বালানি থেকে আরও ৪০০ মেগাওয়াটের মতো পাওয়া যাবে।’ এভাবেই গ্রীষ্ম মৌসুম কভারের চিন্তা করা হচ্ছে বলে জানান তিনি।
সরকারের কাছে আইপিপিগুলোর বিপুল পরিমাণ বকেয়া বিল পাওনা রয়েছে। এ বিল আটকে থাকায় প্রতিষ্ঠানগুলোকে চলতি মূলধনের সংকটে ভুগতে হচ্ছে। আবার টাকার অবমূল্যায়নের কারণেও প্রতিষ্ঠানগুলোর বড় অঙ্কের লোকসান হয়েছে। এর মধ্যে যোগ হয়েছে ডলার সংকট। এলসি খোলার জন্য চাহিদামাফিক ডলারের জোগান দিতে পারছে না ব্যাংকগুলো।