পহেলা মার্চ থেকে সয়াবিন তেলের দাম কমানোর ঘোষণা দেওয়া হলেও তা রয়ে গেছে কেবল কাগজে-কলমে। বাস্তবে বাজারে বিক্রি হচ্ছে আগের বাড়তি দরেই। ফলে খোলা ও বোতলজাত দুই ধরনের তেলেই বাড়তি টাকা গুনতে হচ্ছে ভোক্তাদের। খুচরা ব্যবসায়ীরা বলছেন, কোনো কোম্পানি এখনও তাদের নতুন দরের বোতলজাত তেল সরবরাহ করেনি। খোলা সয়াবিনেও আগের দাম রাখছেন ডিলাররা।
পরিশোধন ও বাজারজাতকারী প্রতিষ্ঠানগুলো বলছে, নতুন দরের লেবেল লাগানো হচ্ছে। দু-এক দিনের মধ্যে কম দরের তেল কিনতে পারবেন ক্রেতারা।
ভোক্তাদের ভাষ্য, দেশে যে কোনো নিত্যপণ্যের দর বাড়ানো হতে পারে– এমন খবর পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বিদ্যুৎ গতিতে বাজারে ওই পণ্যের দর বেড়ে যায়। কিন্তু দাম কমানোর ঘোষণা দেওয়া হলেও তা কার্যকর হতে সপ্তাহ পেরিয়ে যায়।
গত ২২ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্য শিল্প করপোরেশন (বিএসএফসি) দেশে উৎপাদিত লাল চিনির কেজিতে ২০ টাকা বাড়ানোর ঘোষণা দিয়েছিল। মুহূর্তেই উত্তাপ ছড়িয়ে পড়ে বাজারে। তাতে পাইকারি পর্যায়ে পরিশোধিত সাদা চিনির বস্তায় (৫০ কেজি) ২০০ থেকে ২৫০ টাকা বেড়ে যায়। খুচরা ব্যবসায়ীদের মধ্যেও অনেকে ১৪৪ টাকার প্যাকেট ১৬০ টাকায় বিক্রি শুরু করেন। তবে বিএসএফসির দাম বাড়ানোর প্রজ্ঞাপন জারির প্রায় ৬ ঘণ্টা পর তা প্রত্যাহার করে নেয় শিল্প মন্ত্রণালয়। কিন্তু বাজারে দাম বাড়ার সেই রেশ এখনও রয়ে গেছে। কিন্তু এ ঘোষণার দু’দিন আগে, অর্থাৎ ২০ ফেব্রুয়ারি আমদানিকারকরা প্রতি লিটার সয়াবিন তেলের দর ১০ টাকা কমানোর ঘোষণা দিয়েছিলেন। নতুন দর অনুযায়ী, বোতলজাত প্রতি লিটারে দর ১৬৩ এবং পাঁচ লিটারের দর ৮০০ টাকা হওয়ার কথা। আর খোলা প্রতি লিটার সয়াবিন তেলের দাম হওয়ার কথা ১৪৯ টাকা। যদিও ওই দিন তারা বলেছিলেন, নতুন দর কার্যকর হবে ১ মার্চ থেকে। সেই হিসাবে গতকাল শুক্রবার নতুন দরে তেল বেচাকেনা হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু বাস্তবে সেই চিত্র দেখা যায়নি।
গতকাল ঢাকার কারওয়ান বাজার, মালিবাগ, মহাখালী কাঁচাবাজারসহ কয়েকটি বাজারে গিয়ে দেখা গেছে, বোতলজাত প্রতি লিটার ১৭৩, পাঁচ লিটার ৮৪৫ ও খোলা প্রতি লিটার ১৫৭ থেকে ১৬০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। বাজারগুলোয় দরকষাকষির মাধ্যমে লিটারে দু-তিন টাকা ছাড় পাওয়া গেলেও পাড়া-মহল্লায় সেই সুযোগ পাচ্ছেন না ভোক্তারা।
সয়াবিন তেলের দর কমানোর ঘোষণা দিলেও পাম অয়েলের বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত নেয়নি সরকার কিংবা মিলাররা। ফলে আগের মতোই পাম অয়েলের লিটার বিক্রি হচ্ছে ১৩০ থেকে ১৩৫ টাকা দরে।
মহাখালী কাঁচাবাজারের মাসুমা স্টোরের স্বত্বাধিকারী আল-আমীন সমকালকে বলেন, কোম্পানির ডিলাররা জানিয়েছেন, নতুন তেল বাজারে আসতে দু-তিন দিন লাগবে। তবে আগের বাড়তি দরের তেলের দামে কিছুটা ছাড় দিচ্ছে দুয়েকটি কোম্পানি।
কারওয়ান বাজারের আব্দুর রব স্টোরের স্বত্বাধিকারী মো. নাঈম বলেন, কোম্পানিগুলো নতুন দরে ডিলারদের খোলা তেল সরবরাহ করছে। কিন্তু ডিলাররা এখনও খুচরা বিক্রেতাদের কাছ থেকে আগের দরই আদায় করছেন।
ভোজ্যতেল আমদানি ও বাজারজাতকারী প্রতিষ্ঠান মেঘনা গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজের (এমজেআই) জ্যেষ্ঠ সহকারী মহাব্যবস্থাপক তাসলিম শাহরিয়ার সমকালকে বলেন, তেলের বোতলে নতুন দরের লেবেল লাগানো হচ্ছে। আগামীকালের মধ্যে (শনিবার) বাজারে খুচরা পর্যায়ে কম দরের তেল পাওয়া যাবে। অন্যান্য কোম্পানির নতুন দরের তেলও দু-এক দিনের মধ্যে বাজারে চলে আসবে বলে জানান তিনি।
কনজুমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সহসভাপতি এস এম নাজের হোসাইন বলেন, ১০ দিন আগে ঘোষণা দিলেও বাজারে কম দরের তেল সরবরাহ না করা কোম্পানিগুলোর গাফিলতি। দু’দিন দেরি করলে মুনাফা বেশি হবে, সেজন্যই এমন গড়িমসি। এটি ভোক্তাদের সঙ্গে প্রতারণার শামিল।