The news is by your side.

অর্থনৈতিক বৈষম্য যত বাড়বে, রাজনৈতিক বৈষম্য ততই বাড়বে : রেহমান সোবহান

0 732

 

 

সমাজে বৈষম্য অনেকে বেড়েছে।  অল্প কিছু মানুষ এখানে বসে উন্নত বিশ্বের মানের জীবন যাপন করছে। আর লাখ লাখ শ্রমিক বাস করছেন তৃতীয় বিশ্বের মানের। বৈষম্যের শিকার এসব মানুষের জন্য বাজেটে বরাদ্দ রাখার জন্য কথা বলার কেউ নেই, শোনারও কেউ নেই।

অর্থনীতিবিদ রেহমান সোবহান এক বাজেট আলোচনায় এসব কথা বলেছেন।

বুধবার রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবে ‘আসন্ন বাজেট: শ্রমিক কর্মচারী ও জনগণের প্রত্যাশা’ শীর্ষক এ সেমিনার হয়। সেমিনারের আয়োজক ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্র (টিইউসি)।

রেহমান সোবহান বলেন, অর্থনৈতিক বৈষম্য যত বাড়বে, রাজনৈতিক বৈষম্য ততই বাড়বে। অর্থনৈতিক গণতন্ত্র না থাকলে রাজনৈতিক গণতন্ত্রও থাকবে না। গণতান্ত্রিক পদ্ধতি ধীরে ধীরে দুর্বল হয়ে পড়বে। তিনি আরও বলেন, সরকারের বর্তমান ধারায় দারিদ্র্য হয়তো কমবে, কিন্তু বৈষম্য আরও বাড়বে।

বাজেটে শ্রমিকদের স্বার্থ রক্ষা করার প্রসঙ্গে খ্যাতনামা অর্থনীতিবিদ রেহমান সোবহান বলেন, শ্রমিকেরা অনেক ভাগে বিভক্ত। কিন্তু মালিকেরা ঐক্যবদ্ধ। উদাহরণ হিসেবে তিনি পোশাকমালিকদের সংগঠন বিজিএমইএর কথা তুলে ধরেন। তিনি বলেন, এরা রাজনৈতিকভাবে অনেক শক্তিশালী। তাঁদের অনেকে এখন সাংসদ, মন্ত্রী। তাঁদের কীভাবে মোকাবিলা করবেন শ্রমিকেরা। অর্থমন্ত্রী নিশ্চয়ই তাঁদের কথাই গুরুত্ব দিয়ে শুনবেন।

বাজেট আলোচনা প্রসঙ্গে কথা বলতে গিয়ে রেহমান সোবহান বলেন, ‘একজন অর্থমন্ত্রী ছিলেন ১০ বছর। প্রতিবছরই তিনি আলোচনা করেছেন অনেকের সঙ্গে। সবাই ১০ বছর ধরেই একই কথা বলে গেছেন। তিনি শুনেছেন কি না সন্দেহ। প্রথম দুই তিন বছর বছর আমি কথা বলেছি। পরে কথা বলা বন্ধ করে দিয়েছি। সেখানেও ব্যবসায়ীদের কথা বেশি গুরুত্ব পায়। কারণ, তাদের রাজনৈতিক ও সামাজিক শক্তি আছে। এখন প্রায় ৭০ শতাংশ সাংসদই ব্যবসায়ী।’ রেহমান সোবহান বলেন, রাজনীতি ও ব্যবসার মধ্যে যে সীমারেখা ছিল, তাও এখন উঠে গেছে।

আলোচনায় বৈষম্যের ওপর গুরুত্ব দেন সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) সম্মানীয় ফেলো মোস্তাফিজুর রহমানও। তিনি বলেন, ‘বাজেট শুধু আয়–ব্যয়ের হিসাব নয়, আয়ের পুনর্বণ্টনও। আমাদের প্রবৃদ্ধি বেড়েছে এটা সত্য। কিন্তু আয়–বৈষম্যই সবচেয়ে দুশ্চিন্তার কারণ।’ পরিসংখ্যান তুলে ধরে তিনি বলেন, ওপরের দিকের পাঁচ ও নিচের পাঁচের মধ্যে ২০১০ সালে পার্থক্য ছিল ৩২ গুণ। এটা ২০১৬ সালে হয়েছে ১২১ গুণ।

টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা পূরণের জন্য অন্তর্ভুক্তিমূলক সমাজের ওপর গুরুত্ব দেন মোস্তাফিজ। তিনি সেই কারণে বাজেটে আয়–ব্যয়ের পাশাপাশি আয় পুনর্বণ্টনের ওপর জোর দেন। মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘আমাদের দেশে প্রত্যক্ষ করের তুলনায় পরোক্ষ কর বেশি। আর করের চাপ সাধারণ মানুষের ওপর বেশি। করকাঠামো বৈষম্যমূলক।’ প্রত্যক্ষ কর বাড়ানোর ওপর জোর দেন তিনি।

অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ তুলে ধরেন অর্থনীতিবিদ এম এম আকাশ। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতির এই অধ্যাপক তাঁর প্রবন্ধে বলেন, সাধারণ মানুষের অর্থে যে বাজেট তৈরি হয়, তার ব্যয় থেকে অসৎ ধনীদের ভর্তুকি দেওয়া হয়। প্রতিবছর ১০ থেকে ১১ লাখ লোককে সামাজিক নিরাপত্তা ভাতার আওতায় এনে তাদের যে সহায়তা দেওয়া হয়, সেটা সমুদ্রে একবিন্দু শিশির দেওয়ার মতো।

এম এম আকাশ আরও বলেন, বাজেটে কল্যাণমূলক দিক কম এবং তা বাস্তবায়িত হয় না। যেসব খাতে ধনীদের লাভ, দুর্নীতিবাজ বা ক্ষমতাসীনদের লাভ দেখা যায়, সেগুলোতে বরাদ্দ বেশি এবং ঠিকই তা বাস্তবায়িত হয়।

অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন টিইউসির সভাপতি শহীদুল্লাহ চৌধুরী ও সাধারণ সম্পাদক ওয়াজেদুল ইসলাম।

 

 

Leave A Reply

Your email address will not be published.