The news is by your side.

সিঙ্গেল ডিজিট : ঋণের সুদ হার কমাতে হলে  আগে নজর দিতে হবে কুঋণের দিকে

0 690

 

 

শারমিন আজাদ

সরকারের চাপের মুখেও বেশিরভাগ ব্যাংক সিঙ্গেল ডিজিটে আনেনি ঋণের সুদ হার। অথচ ব্যাংক মালিকদের সংগঠন দফায় দফায় এ নিয়ে বৈঠক করেছে অর্থ মন্ত্রণালয় ও বাংলাদেশ ব্যাংকের সাথে। সে সময় তারা নীতিগতভাবে সম্মত হয় ঋণের সুদ হার সিঙ্গেল ডিজিট বা ৯ শতাংশে নামিয়ে আনতে। কিন্তু বাস্তবে তার কোনো ছাপ নেই।

সরকারি কয়েকটি ব্যাংক এ বিষয়ে উদ্যোগী হয়েছে। তাদের ঋণের সুদ হার ৯ শতাংশ বা একক অংকে নেমে এসেছে। কিন্তু বেসরকারি ব্যাংকগুলো কোন অবস্থাতেই ১৬ থেকে ১৭ শতাংশ সুদেও কমে ঋণ সরবরাহ করতে পারছে না।

বাংলাদেশ ব্যাংক অবশ্য ঋণের সুদ হার ৯ শতাংশ বেধে দেওয়ার কোনো নিয়ম করেনি। তবে সরকারের কাছ থেকে বেশি অংকে আমানত আদায়ের শর্তে ঋণের সুদ হার কমাতে সম্মত হয়েছিল বেশিরভাগ ব্যাংক। কিন্তু বাস্তবে দেখা গেল তারা নিজেদের সিদ্ধান্তে নিজেরাই অমত করেছে। যার কারণে সরকারি সব কটি ব্যাংক ঋণের সুদ হার ৯ শতাংশে আনলেও বেসরকারি ব্যাংকগুলো এ পথে পা বাড়াচ্ছেন না।

এ নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র সিরাজুল ইসলাম বলেন, বেসরকারি ব্যাংকগুলোর ঋণের সুদ হারের কোন খবর তারা জানেন না। এর মানে ব্যাংকগুলো ঋণের সুদ হার সিঙ্গেল ডিজিটে নামায়নি। তার একটা বড় কারণ, এসব ব্যাংক ৬ শতাংশ সুদে আমানত আদায় করতে পারছে না বলে জানান তিনি। এর নেপথ্য চালিকাশক্তি হচ্ছে ১১ দশমিক শূণ্য চার শতাংশ সুদে বিতরণ করা সঞ্চয়পত্র। এজন্য ঋণের সুদহারও সিঙ্গেলে টেনে আনতে সমর্থ হচ্ছে না বেসরকারি ব্যাংকগুলো। কারণ ঋণের লাগাম টানতে গেলে তাদের পরিচালন ব্যয় মেটাতে হিমশিম খেতে হবে।

এফবিসিসিআই এর সাবেক প্রেসিডেন্ট এ কে আজাদ বলেন, সঞ্চয়পত্রের সুদের হার বেশি হওয়ায় সিঙ্গেল ডিজিটে আনা সম্ভব না ব্যাংকগুলোর ঋণের সুদ হার। এর সঙ্গে তিনি যোগ করেন,  অনেক ব্যাংকের খেলাপি ঋণ ও রয়েছে। সেই চাপের কারণে ঋণের সুদ হার সিঙ্গেল ডিজিটে আনতে পারছে না ব্যাংকগুলো। তিনি বলেন, এ অবস্থায় ব্যাংকগুলোকে সরকার যতই চাপ দিক না কেন সিঙ্গেল ডিজিটে সুদ হার আনা সম্ভব না। তবে এজন্য আদালতে যেসব অর্থ ঋণ মামলা রয়েছে সেগুলো  নিষ্পত্তি করে খেলাপি ঋণ আদায় হলে সিঙ্গেল ডিজিটে আনা সম্ভব বলে পরামর্শ দেন এ ব্যবসায়ী নেতা।

এ বিষয়ে বিজিএমইএ এর সাবেক প্রেসিডেন্ট সিদ্দিকুর রহমান বলেন সিঙ্গেল ডিজিটে ব্যাংক ঋণের সুদ হার নামিয়ে আনা নির্ভর করে ব্যাংক মালিকদের মনোভাবের উপর। এক্ষেত্রে তিনি বলেন, পৃথিবীর কোথাও কোন ব্যাংকে এত বেশি ঋণের সুদ হার নেই। বিদেশে স্প্রেড দেড় এর উপরে নেই। সেখানে বাংলাদেশে স্প্রেড ৫ এ বেধে দেয়া। এ থেকে ২ কমালেই ব্যাংক ঋণের সুদ হার সিঙ্গেল ডিজিটে নামিয়ে আনা সম্ভব বলে মনে করেন তিনি। সেই সাথে তিনিও এফবিসিসিআই সাবেক প্রেসিডেন্টের সাথে সুরে সুর মিলিয়ে বলেন, সঞ্চয়পত্রের সুদ হারের দিকে খেয়াল দিতে হবে সরকারকে। কারণ সঞ্চয়পত্র থেকে কোনো কর্মসংস্থান হয় না কিন্তু বেসরকারি খাতের ঋণ প্রবাহ কর্মসংস্থান তৈরি করে।

এ সম্পর্কে সাবেক ডেপুটি গভর্নর খন্দকার ইব্রাহিম খালেদ বলেছেন, ঋণের সুদ হার সিঙ্গেল হবে না ডাবল হবে তার পুরোটাই নির্ভও করে দেশের ব্যাংকিং খাতের কুঋণের উপর। বাংলাদেশে ব্যাংকগুলোর কুঋণ অনেক বেশি। রাষ্ট্রায়ত্ব ব্যাংকগুলোর কুঋণ ২০ শতাংশ আর বেসরকারি ব্যাংকে কুঋণ ১২ শতাংশ। সুতরাং কুঋণ ডাবল ডিজিটে রেখে ঋণের সুদ হার সিঙ্গেল ডিজিটে নামিয়ে আনা সম্ভব না। কিন্তু বিদেশে কুঋণ এক শতাংশ হওয়ায় তাদের ব্যাংক ঋণের সুদহার ও সিঙ্গেল ডিজিটে। তাই ঋণের সুদ হার কমাতে হলে সরকারকে আগে নজর দিতে হবে কুঋণের দিকে।

Leave A Reply

Your email address will not be published.