কক্সবাজার অফিস
বঙ্গোপসাগরে লঘুচাপ সৃষ্টির প্রভাবে কক্সবাজার সমুদ্র উপকূল উত্তাল। জোয়ারের পানির উচ্চতা স্বাভাবিকের চেয়ে চার—পাঁচ ফুট বৃদ্ধি পেয়ে কূলে আঘাত হানছে। এর মধ্যে গেল বুধবার সকাল থেকে কক্সবাজার শহরে থেমে থেমে বৃষ্টি হচ্ছে।
কক্সবাজার উপকূলকে ৩ নম্বর স্থানীয় সতর্কসংকেত দেখাতে বলা হয়েছে। এমন বৈরী পরিবেশের মধ্যেই পর্যটকেরা ঝুঁকি নিয়ে উত্তাল সমুদ্রে গোসল করতে দেখা গেছে।
ট্যুরিস্ট পুলিশ, লাইফগার্ড কর্মীরা নানাভাবে চেষ্টা করেও পর্যটকদের সমুদ্র থেকে তুলে আনতে পারছেন না। সৈকতের সুগন্ধা পয়েন্ট ঘুরে দেখা যায়, উত্তাল সমুদ্রেই শত শত পর্যটক সাগরে গোসল করতে নেমেছেন। এ সময় বেসরকারি লাইফগার্ড প্রতিষ্ঠান সি সেফ লাইফগার্ডের অন্তত ২০ জন কর্মীকে বালুচরে দাঁড়িয়ে বাঁশি বাজিয়ে পর্যটকদের উঠে আসার জন্য আহ্বান জানাতে দেখা যায়। এ ছাড়া উত্তাল সাগরে নামতে নিষেধ করে সৈকতে একাধিক লাল নিশানা (পতাকা) ওড়ানো হলেও সেদিকে কারও নজর নেই।
সি সেফ লাইফগার্ডের সুপারভাইজার সাইফুল্লাহ সিফাত বলেন, সকাল সাতটা থেকে বেলা দেড়টা পযন্ত সৈকতের কলাতলী, সুগন্ধা, সীগাল ও লাবণী পয়েন্টের চার কিলোমিটার এলাকায় প্রায় ১৪—১৫ হাজার পর্যটক বেড়াতে এসেছেন। এর মধ্যে ঝুঁকি নিয়ে অনেক পর্যটক গোসল করতে নামছেন। পর্যটকদের এ বিষয়ে সর্তক করা হলেও তাঁরা বিষয়টি আমলে নিচ্ছেন না।
সকাল থেকে ঢেউয়ের ধাক্কায় অন্তত ছয়জন পর্যটকের ভেসে যাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। পরে লাইফগার্ড কর্মীদের তৎপরতায় তাঁদের উদ্ধার করা হয়েছে।
বেলা ১১টার দিকে বিশাল ঢেউয়ের ধাক্কায় টিউব থেকে ছিটকে পড়েন ঢাকার মিরপুর এলাকার কলেজছাত্র শাহেদ আহমেদ। পরে লাইফগার্ড কর্মীরা সমুদ্রে ঝাঁপ দিয়ে শাহেদকে উদ্ধার করেন। শাহেদের সাঁতারও জানা ছিল না। শাহেদ বলেন, তিন বন্ধুকে সঙ্গে নিয়ে তিনি সকালে সমুদ্রে নামেন। কিন্তু ঢেউয়ের ধাক্কায় তিনি ছিটকে পড়বেন, সেটা তিনি বুঝতে পারেননি। নিষেধাজ্ঞা না মেনে সমুদ্রে নামা ঠিক হয়নি
বলে তিনি দুঃখ প্রকাশ করেন। সিলেট থেকে ভ্রমণে আসা আজমত উল্লাহ (৪০) বলেন, ‘সাগরের জলে শরীর ভেজানোর জন্য এত দূর থেকে এসেছি। সৈকতে নেমে দেখি বৃষ্টি, সমুদ্রও উত্তাল। সবাই নেমে গোসল করছেন দেখে আমিও নেমেছি।’
ট্যুরিস্ট পুলিশ কক্সবাজারের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রেজাউল করিম ভিশন নিউজ কে বলেন, বৈরী পরিবেশে সমুদ্র এখন উত্তাল। তাই পর্যটকেরা যেন সমুদ্রে নামতে না পারেন, সে জন্য সৈকতে ট্যুরিস্ট পুলিশের পাহারা বসানো হয়েছে। বালুচরে মাইকিং করে প্রচারণাও চলছে। তারপরও কিছু পর্যটক নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে উত্তাল সাগরে ঝাঁপ দিচ্ছেন। পর্যটক বলে তাঁদের সঙ্গে কঠোর আচরণ করা যাচ্ছে না।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের কক্সবাজার কার্যালয়ের আবহাওয়াবিদ মো. আবদুল হালিম বলেন, সকাল থেকে কক্সবাজারে থেমে থেমে বৃষ্টি হচ্ছে। মৌসুমি বায়ু সক্রিয় থাকায় স্থল নিম্নচাপটি ভারতীয় ভূখণ্ডে লঘুচাপে পরিণত হয়েছে। এর প্রভাবে ঝোড়ো হাওয়াসহ আরও বৃষ্টিপাত হতে পারে। এ জন্য সমুদ্র উত্তাল রয়েছে। জোয়ারের পানি স্বাভাবিকের চেয়ে সর্বোচ্চ চার ফুট বৃদ্ধি পেয়ে উপকূলে আঘাত হানছে। এ জন্য কক্সবাজার উপকূলকে ৩ নম্বর স্থানীয় সতর্কসংকেত দেখাতে বলা হয়েছে।