ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ও হার দুটিই বেড়েছে। মার্চের তুলনায় জুনে এসে খেলাপি ঋণ প্রায় ১২ হাজার কোটি টাকা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ২৫ হাজার ২৫৮ কোটি টাকা। খেলাপি ঋণের এ পরিমাণ ব্যাংক খাতে মোট ঋণ স্থিতির ৮ দশমিক ৯৬ শতাংশ। মার্চে খেলাপি ঋণ ছিল ১ লাখ ১৩ হাজার ৪৪১ কোটি টাকা, যা ওই সময়কার মোট ঋণ স্থিতির ৮ দশমিক ৫৩ শতাংশ।
গত মার্চেও আগের প্রান্তিকের তুলনায় খেলাপি ঋণ বেড়েছিল। গত ডিসেম্বর শেষে ব্যাংক খাতে মোট খেলাপি ঋণ ছিল ১ লাখ ৩ হাজার ২৭৪ কোটি টাকা, যা ওই সময়কার ৭ দশমিক ৯৩ শতাংশ। এতে করে জুন শেষে ছয় মাসের ব্যবধানে খেলাপি ঋণ বেড়েছে ২২ হাজার কোটি টাকা।
ব্যাংকাররা জানিয়েছেন, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে সার্বিকভাবে ব্যবসা-বাণিজ্যে অস্থিরতা এবং করোনা সংক্রমণের প্রভাব মোকাবিলায় ঋণ আদায়ে শিথিলতা আগের মতো না থাকায় খেলাপি ঋণ বেড়েছে। এ ছাড়া ঋণ পরিশোধে সক্ষম একটি শ্রেণি আগামীতে আরও ছাড় আসতে পারে এমন প্রত্যাশায় ইচ্ছাকৃতভাবে ঋণ পরিশোধ করছেন না।
ইস্টার্ন ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আলী রেজা ইফতেখার বলেন, করোনার কারণে গত বছর পর্যন্ত কেউ যদি ঋণ পরিশোধ করতে না পারলে, তাঁকে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশক্রমে খেলাপি হিসেবে দেখানো যায়নি। এ বছর এ ধরনের শিথিলতা পুরোপুরি নেই। শিথিলতা তুলে নেওয়ার পর ঋণ পরিশোধের সময়ে অনেকে পরিশোধ করতে পারছেন না। ফলে খেলাপি ঋণ বেড়েছে। তবে এ অবস্থা বেশিদিন থাকবে না। ব্যাংকগুলো ঋণ আদায়ে তৎপরতা বাড়িয়েছে। এ ছাড়া বাংলাদেশ ব্যাংক সম্প্রতি এক সার্কুলারের মাধ্যমে ঋণ পুনঃতপশিলের ক্ষমতা ব্যাংকের ওপর ছেড়ে দিয়েছে। এ পদক্ষেপও খেলাপি ঋণ কমাতে সহায়তা করবে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, মোট খেলাপি ঋণের মধ্যে রাষ্ট্র মালিকানাধীন বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোতে জুন শেষে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ৫৫ হাজার ৪২৯ কোটি টাকা। যা তাদের মোট ঋণ স্থিতির ২২ শতাংশ। বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোতে খেলাপি ঋণ দাঁড়িয়েছে ৬২ হাজার ৬৭৮ কোটি টাকা, যা তাদের ঋণ স্থিতির ৬ শতাংশ। আর বিশেষায়িত ব্যাংকগুলোর ঋণের ১১ দশমিক ৭৪ শতাংশ খেলাপি হয়ে পড়েছে। এসব ব্যাংকের মোট খেলাপি ঋণের পরিমাণ ৪ হাজার ১৯৪ কোটি টাকা। অন্যদিকে, বিদেশি ব্যাংকগুলোতে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ২ হাজার ৯৫৭ কোটি টাকা। তাদের খেলাপি ঋণের হার ৪ দশমিক ৪০ শতাংশ।
জুন পর্যন্ত ব্যাংক খাতে মোট ঋণ স্থিতি ১৩ লাখ ৯৮ হাজার ৫৯২ কোটি টাকা, যা মার্চ শেষে ছিল ১৩ লাখ ২৯ হাজার ৭৩৬ কোটি টাকা। এর মধ্যে বেসরকারি ব্যাংকগুলোতে রয়েছে ১০ লাখ ৪২ হাজার ৮৬৬ কোটি টাকা। সরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোতে রয়েছে ২ লাখ ৫২ হাজার ৭২৯ কোটি টাকা। যথাক্রমে বিশেষায়িত ও বিদেশি ব্যাংকে এর পরিমাণ ৩৫ হাজার ৭২৯ কোটি এবং ৬৭ হাজার ২৬৮ কোটি টাকা।