The news is by your side.

ভেঙে ফেলা হচ্ছে তসলিমা নাসরিনের ’অবকাশ’

0 121

অবকাশ। বাড়ির নাম। ময়মনসিংহ  শহরের টিএন রায় রোডে কালো গেটের পাশে মাধবীলতার তলায় শ্বেত পাথরে খোদাই করা বাড়ির নাম। এই অবকাশে তসলিমা নাসরিন  ৭ বছর বয়স থেকে ২৭ বছর বয়স পর্যন্ত বাস করেছেন। লেখিকার জন্মস্থান শৈশব-কৈশোর আর যৌবনের স্মৃতি বিজড়িত সেই বাড়িটি এবার ভেঙে ফেলা হচ্ছে।  সেখানে নির্মাণ করা হবে বহুতল ভবন।

‘অবকাশ’ নিয়ে আবেগ-আপ্লুত হয়ে ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাস দেন তসলিমা। তার লেখায় ফুটে উঠেছে এই বাড়িটি নিয়ে স্মৃতি, হাহাকার, আবেগ, ভালোবাসা ও ক্ষোভ। আরটিভি নিউজের পাঠকদের জন্য তসলিমার স্ট্যাটাসটি হবহু তুলে ধরা হলো-

‘কেউ কেউ ফেসবুকে ‘অবকাশ’ ভাঙার ছবি পোস্ট করছে, দুঃখ করছে, স্মৃতিচারণ করছে। আমার শৈশব, কৈশোর, যৌবনের সেই ‘অবকাশ’। ময়মনসিংহ শহরের টি এন রায় রোডে আমার বাবার কেনা সুন্দর বাড়িটি অবকাশ। এই অবকাশ ভেঙে গুঁড়ো করার সিদ্ধান্ত যারা নিয়েছে তাদের সঙ্গে আমার কোনও যোগাযোগ নেই, আমার কোনও সম্পর্ক নেই। শুধু এইটুকু জানি, তাদের মধ্যে কেউ কেউ খুব লোভী, স্বার্থপর, ধুরন্ধর, কেউ কেউ কট্টর মৌলবাদি। সকলেরই আমি চক্ষুশূল। এককালে শহরের সাহিত্য সংস্কৃতি, জ্ঞান বিজ্ঞান আর প্রগতিশীলতার একটি কেন্দ্র ছিল যে বাড়িটি, আজ সেটি ধ্বংসস্তূপে পরিণত। ধন দৌলতের কাঙালদের কাছে প্রগতিশীলতা, উদারতা, সহমর্মিতা, স্মৃতি ও সৌন্দর্যের কোনও মূল্য নেই। শুনেছি বাড়িটিতে আমার মায়ের হাতের লাগানো সব ফুল ফুল গাছ শেকড়সুদ্ধ উপড়ে ফেলে একটি আধুনিক বহুতল বিল্ডিং বানানো হচ্ছে। আমার কর্মঠ বাবার অকর্মণ্য উত্তরসুরিরা সেই বিল্ডিং-এ পায়ের ওপর পা তুলে বংশ পরম্পরায় খাবে।

ও বাড়ির এখন আমি কেউ নই। আমি তো তিরিশ বছর ব্রাত্যই।

ইট পাথরে, চুন সুরকিতে, কাঠে কংক্রিটে স্মৃতি থাকে না, স্মৃতি থাকে মনে। অবকাশ রইলো আমার মনে। যে বাড়িটিতে বসে আমি প্রথম কবিতা লিখেছি, প্রথম কবিতা-পত্রিকা ছাপিয়েছি, প্রথম কবিতার বই লিখেছি, নির্বাচিত কলাম লিখেছি, যে বাড়িটির মাঠে প্রথম গোল্লাছুট খেলেছি, যে বাড়িটির ছাদে প্রথম পুতুল খেলেছি, যে বাড়িটির ভেতর প্রথম রবীন্দ্রনাথ আওড়েছি, উঠোন জুড়ে নেচে চিত্রাঙ্গদা মঞ্চস্থ করেছি, যে বাড়িটিতে দাদা বেহালা বাজাতো, ছোটদা গিটার বাজাতো, বোন গান গাইতো, মা আবৃত্তি করতো, বাবা মানুষের মতো মানুষ হওয়ার স্বপ্ন দেখাতো, যে বাড়িটিতে বসে প্রথম প্রেমের চিঠি লিখেছি, যে বাড়িটিতে আমি একই সঙ্গে সংবেদনশীল এবং সচেতন মানুষ হয়ে উঠেছি, সে বাড়িটি রইলো আমার মনে। কোনও হাতুড়ি শাবল কুড়োলের শক্তি নেই সে বাড়িটি ভাঙে।’

বহুদিন থেকে নির্বাসিত  লেখক তসলিমা নাসরিন। ইসলাম ধর্ম নিয়ে কটূক্তির দায়ে একসময় তোপের মুখে দেশ ত্যাগ করতে বাধ্য হন তিনি। বর্তমানে অবস্থান করছেন প্রতিবেশী দেশ ভারতে। সেখানে থেকেও তিনি সামাজিকমাধ্যমে বাংলাদেশের ভক্ত-শুভাকাঙ্ক্ষীদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন। ফেসবুকে নিয়মিত লিখছেন নির্বাসনের তিক্ততা, বাংলাদেশের বহু স্মৃতি-বিস্মৃতি। নারীবাদী বিভিন্ন ইস্যুতেও সোচ্চার হতে দেখা যায় বিভিন্ন সময়।

 

 

 

 

 

 

Leave A Reply

Your email address will not be published.